সুরমা টাইমস ডেস্ক:: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরেই নির্যাতিত। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন বার্মা রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর থেকে অসংখ্যবার রোহিঙ্গাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের ওপর চলেছে নির্মম নির্যাতন। এই নির্যাতিত মানুষেরা নিজ দেশের নাগরিকত্ব হারিয়ে আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। এখনো ১০ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকত্বহীন অবস্থায় মিয়ানমারে অবস্থান করছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বেসামরিক সশস্ত্র গোষ্ঠী ও বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের ধারাবাহিক নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময়ে বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। মূলত ১৯৭০ দশক থেকে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছাড়তে শুরু করে। গত সাড়ে চার দশকে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়েছে।
এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রভৃতি দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। পৃথিবীর কোন দেশে কত রোহিঙ্গা আছে তার একটি ‘আপাত’ হিসাব দিয়েছে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরা। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার বরাতে পাওয়া এ তথ্য আজ শনিবার এক প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা মুসলমানের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ছয় লাখ ২৫ হাজার। যদিও এর চেয়ে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে ধারণা করেন স্থানীয়রা।
রাখাইনের বাইরে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা আছে বাংলাদেশেই। এদের বেশিরভাগই কক্সবাজারের উপকূলবর্তী বিভিন্ন নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পে এরা অবস্থান করছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) হিসাব অনুযায়ী, সহিংসতার শিকার হয়ে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) গতকাল শুক্রবার সর্বশেষ জানিয়েছে, নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা বেড়ে তিন লাখের উপরে যাবে। অর্থাৎ গত ১১ মাসে সাড়ে তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এরই মধ্যে বাংলাদেশে এসেছে। এই সময়ে মিয়ানমারে সহিংসতায় মারা গেছেন প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সূত্র মতে, কক্সবাজার উপজেলার বিভিন্ন উপকূলে যেসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে, সেখানে দশকের পর দশক ধরে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এদের মধ্যে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত উভয় শরণার্থীই রয়েছেন। অনেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে।
মিয়ানমারের উপকূলবর্তী রাজ্য রাখাইন। সেখান থেকে নৌকায় করে বঙ্গোপসাগর, আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়ার উপকূলে পৌঁছায়। এভাবে ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিন বছরে প্রায় এক লাখ ১২ হাজার রোহিঙ্গা মালয়েশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। তাঁরা সেখানে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে শেল্টার সেন্টারে আশ্রয়ে আছে। গতকাল শুক্রবার মালয়েশিয়ার মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির মহাপরিচালক জুলকিফলি আবু বাকার বলেছেন, তাদের উপকূলে যাওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের তাঁরা ফেরাবে না, আশ্রয় দেবে।
গত আগস্টে নতুন করে সহিংসতা শুরুর আগে জাতিসংঘ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় চার লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। এ সময় আরও এক লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়ার কথাও বলা হয়।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবে রয়েছে দুই লাখ, পাকিস্তানে রয়েছে সাড়ে তিন লাখ, মালয়েশিয়ায় দেড় লাখ, ভারতে ৪০ হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০ হাজার, থাইল্যান্ডে পাঁচ হাজার এবং ইন্দোনেশিয়ায় এক হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
গত ২৪শে আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১লা সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ জন সাধারণ নাগরিক।
মিয়ানমার সরকারের আরও দাবি, ‘বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা’ এখন পর্যন্ত রাখাইনের প্রায় দুই হাজার ৬০০ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এখনো রাখাইন রাজ্যে থাকা মুসলিমদের মধ্যে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2fakGnc
September 10, 2017 at 12:22AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন