নিজস্ব প্রতিনিধি:: শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে শুধুমাত্র মৌলভীবাজারে দেশের ব্যতিক্রমী লাল ও এক হাজার এক হাতের প্রতিমা তৈরি হয়েছে। মৌলভীবাজার শহরে ৩৫ ফুট উচ্চতার এক হাজার এক হাত বিশিষ্ট দুর্গাপ্রতীমা নির্মাণ করে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছে ত্রিনয়নী শিববাড়ি পূজা উদযাপন পরিষদ। তাদের উদ্যোগে এক হাজার এক হাত বিশিষ্ট দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিমাটির উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ৩০ ফুট। এ ছাড়াও শতভুজা দুর্গা, দশভুজা দুর্গাসহ দুর্গার মোট তিনটি মূর্তি রয়েছে। সত্যযুগ ও ত্রেতাযুগের কাহিনী অবলম্বনে আরও ৮০ জন দেব-দেবীর পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
জেলার ৭টি উপজেলায় সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে ১ হাজার ৪টি মন্ডপে পূজা হবে এবার। সরকারি হিসেবে সদর উপজেলায় ৮০টি, রাজনগর উপজেলায় ৭৫টি, কুলাউড়া উপজেলায় ২২১টি, জুড়ি উপজেলায় ৬৫টি, বড়লেখায় ১৫৭টি, কমলগঞ্জে ১৪৪টি এবং শ্রীমঙ্গলে ১৬৬টি পূজামন্ডপ রয়েছে।
এগুলো ছাড়াও পারিবারিকভাবে অনেকে পূজার আয়োজন করছেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সমস্ত জেলায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কুলাউড়ার কাদিপুর শিববাড়ি, রাজনগরের পাঁচগাঁও দুর্গাবাড়ি এবং সদর উপজেলার সৈয়ারপুরের ত্রিনয়নী দুর্গা মন্ডপের জন্য আলাদাভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে।
সৈয়ারপুরের ব্যতিক্রমী ১ হাজার ১ হাত বা সহস্র এক-ভুজা দুর্গাপ্রতিমা দেখার জন্য প্রতিদিনই মৌলভীবাজার শহরের সৈয়ারপুর এলাকার ত্রিনয়নী শিববাড়ি পূজামন্ডপে ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক মানুষ।
চমক সৃষ্টিকারী এই প্রতিমার শিল্পী প্রসেনজিৎ পাল কাংগো বলেন, ১ হাজার ১ হাত বিশিষ্ট প্রতিমা আসন্ন দুর্গাপূজায় শহরের সৈয়ারপুর এলাকার ত্রিনয়নী শিববাড়ির পূজামন্ডপে শোভা পাবে। আয়োজকদের দাবি, তাদের মন্ডপের ১ হাজার ১ হাতবিশিষ্ট প্রতিমার প্রতিভা পুরো সিলেট বিভাগের কোথাও নেই। এরকম সহস্রভুজা প্রতিমা এটাই প্রথম।
এছাড়াও জেলার কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর শিববাড়ি এবং রাজনগরের পাঁচগাঁও দুর্গাবাড়িতে প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটে। তাই এ দু’টি মন্ডপে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে জেলার রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও এলাকায় ব্যতিক্রমী লালদূর্গা দেবীর পূজা চলছে দীর্ঘ ২৫০ বছর ধরে। ওখানকার আয়োজক সঞ্জয় দাস বলেন, আড়াইশো বছর ধরে আমার পূর্ব-পুরুষেরা লালদূর্গা দেবীর পুজো করে আসছেন। আমি ষষ্টতম আয়োজক। লালদূর্গা দেবীর পূজো করতে আমার পুর্বপুরুষদের আসামের কামরুপ-কামাক্ষায় স্বপ্নে বলা হয়েছে এরকম পুজো যেন পাঁচগাঁওএ পালন করা হয়। এরপর থেকেই এখানে লালদূর্গা দেবীর পুজো চলছে।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলার প্রত্যেক মন্ডপে পুলিশ, র্যাব ও আনসার দল মোতায়েন রাখার পাশাপাশিসহ মোবাইল টিম ডিউটিতে থাকবে। পূজাঙ্গনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সারাজেলায় ৯০৫ জন পুলিশ সদস্যসহ ৭ হাজার আনসার নিয়োজিত থাকবে। জেলা প্রশাসন থেকে পূজামন্ডপ গুলোতে আর্থিক বরাদ্দও দেয়া হয়েছে।
জেলা পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ রায় মুন্না বলেন, পূজার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকায় তারা সন্তুষ্ট।
তিনি আরো বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট থাকায় এখানে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটবে না বলেই তারা আশাবাদী।
জেলার গুরুত্বপূর্ণ পূজামন্ডব অনুষ্টিত হচ্ছে রাজনগরের পাঁচগাঁও এলাকায়। রাজনগর থানা পুলিশ দূর্গাপূজা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সকল বিষয় সাংবাদিকদের অবহিত করেছে। গতকাল রাতে রাজনগর থানায় রাজনগর প্রেসক্লাবের সকল সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করেন রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল বনিক।
এসময় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল্লাহ। রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল বনিক অবহিতকরণ সভায় বলেন, পাঁচগাঁও পূজা মন্ডব বৃহত্তর সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এখানে দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্তের আগমন ঘটে। এসকল ভক্তদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য দূর্গাপুজা উপলক্ষে পাঁচগাঁও পূজা মন্ডবে চারটি পয়েন্টে চার স্থরের নিরাপত্তা রয়েছে।
ভক্তদের যাতায়াতের সুবিধা ও যানঝট যাতে না হয় তাই শুধু রাজনগর বাজার দিয়ে পুজা মন্ডবের উদ্যেশ্যে গাড়ি ঢুকবে। সরকারবাজার,কর্ণিগ্রাম ও উদনা সড়ক দিয়ে গাড়ি বের হবে। নজরধারী বৃদ্ধি করতে ছয়টি সিসি ক্যামরা বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন,নিরাপত্তার জন্য শুধু পাঁচগাঁও-এ ২৯ জন পুলিশ,২০জন সেচ্ছাসেবক ও ৫০জন আনসারসহ ৬জন ট্রাফিক পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে যেকল অতিথিরা আসবেন তারা আমাদের নজরধারীতে থেকে পূজা বাড়িতে অবস্থান করবেন।
এসময় সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মানবজমিনের কুটনৈতিক রিপোর্টার মিজানুর রহমান, রাজনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি আউয়াল কালাম বেগ,সহ-সভাপতি আব্দুল আজিজ, সম্পাদক আব্দুর রহমান সোহেল, সিনিয়র সাংবাদিক শংকর দুলাল দেব, ফরহাদ হোসেন,আহমদুর রহমান ইমরান ও ফুয়াদ হোসেন।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, পূজায় তিন স্থরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা। এছাড়াও পুলিশের এপিবিএন দলও কাজ করবে। জেলার সর্বত্র পূজা চলাকালীন বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যাতে করে কোনো অঘটন ঘটতে না পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2xuyovA
September 26, 2017 at 05:57PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন