চৈতি কালাম’র বিশ্বস্ত হয়েও উপেক্ষিত মিলন-তরু ও মনির

বিশেষ প্রতিনিধি ● সদ্য ঘোষিত লাকসাম উপজেলা, লাকসাম পৌরসভা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র কমিটি নিয়ে উত্তপ্ত কুমিল্লা-১০ আসনের বিএনপি রাজনীতি। কমিটিতে দীর্ঘদিনের মাঠপর্যায়ের ত্যাগীদের বাদ দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘোষিত কমিটি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম এর কতিপয় অনুসারী অন্তর্ভূক্ত হলেও তাঁর বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতি আবুল হোসেন মিলন, মজিব উল্লাহ তরু ও মনির আহমেদ বলির পাঠা হয়েছেন! তিনজনকেই রহস্যজনকভাবে কমিটিতে অবমুল্যায়ন করা হয়েছে। এ কারণে আবুল কালাম শিবিরে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।

আবুল হোসেন মিলন
আবুল হোসেন মিলন লাকসামের বিএনপি’র রাজনীতির জন্য একজন নিবেদিত নেতা। তিনি একজন শিক্ষিত ও ভালো বক্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি বরাবরই আবুল কালামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি ইতোপূর্বে বৃহত্তর লাকসামে ছাত্রদল, যুবদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৯০’র দশকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও ৯৬-তে আওয়ামীলীগ বিরোধী আন্দোলনে লাকসামের রাজপথে মিলনের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিগতদিনে হুমায়ুন-খোকনের পৌরসভা বিএনপি’র কমিটিতে মিলন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেও বরাবরই আবুল কালামের বিশ্বস্ত ছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে আবুল কালামের কমিটিতে মিলনই পৌরসভা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। চলতি বছরের ঈদুল আযহায় আবুল কালামের ঈদ শুভেচ্ছার পোষ্টারে মিলনকে পৌর বিএনপি’র প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ওইসব পোষ্টার এখনো লাকসাম বাজারের আনাচে-কানাচে দৃশ্যমান। পোস্টারে মিলনের প্রস্তাবিত পদবী এখনো সাধারণ সম্পাদক দৃশ্যমান হলেও রহস্যজনক কারণে তাকে অনুমোদিত কমিটিতে ২নং সহ-সভাপতি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ চৈতি কালামের মাঠ পর্যায়ের অনুসারীরা।

এ বিষয়ে আবুল হোসেন মিলন বলেন- অনুমোদিত কমিটি নিয়ে আমার বলার কোন ভাষা নেই। আমাকে প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঈদুল আযহার পোস্টারে লাকসামবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানানো হয়। কিন্তু কেন আমাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়নি তা রহস্যজনক। আমি প্রিয় নেতা আবুল কালামের অনুসারী হিসেবে সবসময় উনার নেতৃত্বে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছি। অথচ আজ আমাকে প্রত্যাশিত পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আর আমার ন্যায্য পাওনা সাধারণ সম্পাদক পদটি যদি আমার থেকেও যোগ্য কোন নেতাকে দেয়া হতো তাহলে কষ্ট থাকতো না।

মজিব উল্লাহ তরু
বিএনপি নেতা আবুল কালামের আরেক অত্যন্ত কাছের অনুসারী মজিব উল্লাহ তরু। তিনি সদ্য ঘোষিত লাকসাম উপজেলা বিএনপি’র নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাদলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আবুল কালামের রাজনীতির শুরু থেকে আবদুর রহমান বাদলের সাথে তরুও অনেক পরিশ্রমের মাধ্যমে আবুল কালামের রাজনৈতিক উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন। কিন্তু সদ্য ঘোষিত লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি’র কমিটিতে তরু’র নাম না থাকার বিষয়টি লাকসামের বিএনপি’র দুই শিবিরেই ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। আবুল কালাম বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হলে মজিব উল্লাহ তরু কমিটিতে সন্তোষজনক পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় আশার আলো দেখে আসছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি আবুল কালামের পক্ষে ব্যাপক জনমত গঠনে ফেসবুক সরগরম করেছিলেন। তিনি ফেসবুকে প্রতিপক্ষকে গঠনমুলকভাবে ঘায়েল করতে গিয়ে নিজে নানা হুমকি-ধমকির শিকার হয়েছেন। অথচ শেষ পর্যন্ত ত্যাগী ও পরীক্ষিত হিসেবে পরিচিত মজিব উল্লাহ তরু’র নামটি লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি’র কমিটিতে ঠাঁই পায়নি। আর সেক্ষেত্রে ঠাঁই হয়েছে আবুল কালামের সাথে যোগ দেয়া নব্যদের নেতাদের।

এ বিষয়ে মজিব উল্লাহ তরু বলেন- বিএনপি’র শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও লাকসাম উপজেলা বিএনপি’র নবগঠিত কমিটির সভাপতি আবুল কালাম সাহেব লাকসাম-মনোহরগঞ্জের বিএনপি’র রাজনীতিতে পদচারণার ১৮ বছরে আবদুর রহমান বাদল সহ আমরা একই সাথে ছিলাম। আজ বাদল সন্তোষজনক পদ পেয়েছেন- এজন্য আমি খুশি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আমাকে পদ দেয়া হয়নি। তিনি বলেন- একটি সুবিধাভোগী চক্র যারা বিগত ১৮ বছর কালাম সাহেবের বিরুদ্ধচারণ করেছেন তারাই আজ উনার বিশ্বস্ত হয়েছেন এবং কমিটিতে পদ-পদবি পেয়েছেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন- আজ সুবিধা চক্রের অপতৎপরতায় ১৮ বছর পর আমি খারাপ হয়ে গেলাম! এমন অপপ্রচার সহ্য হয়না বলেই রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।

মনির আহমেদ
মনির আহমেদ লাকসামে বিএনপি’র অতি পরিচিত মুখ। লেখালেখির পাশাপাশি একজন ভাল সংগঠক হিসাবে তিনি সর্বমহলে পরিচিত। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক লাকসাম-মনোহরগঞ্জের সাবেক এমপি কর্ণেল (অব.) এম. আনোয়ারুল আজিমের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। কর্ণেল আজিম তাকে খুব স্নেহ করতেন। মনিরের রাজনৈতিক উত্থানে কর্ণেল আজিমের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। আজিম সাহেবের পাশাপাশি লাকসামে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরুরও বিশ্বস্ত লোক ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে ২৭ নভেম্বর হিরু-হুমায়ুন গুম হওয়ার পুর্বেই বিদেশে পাড়ি দেন মনির। বিদেশে থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় হিরু-হুমায়ুন এবং লাকসামে বিএনপি’র সুশৃঙ্খল অবস্থা নিয়ে লেখালেখি করতেন। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত লাকসাম পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী গুম হওয়া বিএনপি নেতা হুমায়ন পতœী শাহনাজ আক্তারের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন মনির আহমেদ। এর কিছুদিন পর লাকসামে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দলের প্রার্থীদের পক্ষে তার প্রচারণা ছিল খুবই আলোচিত। লেখালেখিতে মনির সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন ২০১১ সালে কর্ণেল আজিমের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশের প্রাচীনতম সংবাদপত্র দৈনিক দিনকালের লাকসাম উপজেলা প্রতিনিধি হওয়ার পর। তৎকালীন সময়ে লাকসামে ক্ষমতাসীনদের নানা অপকর্ম এবং দলীয় সকল কর্মকান্ড দৈনিক দিনকালে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হতো। তার ক্ষুরধার লেখনির কারণে তাকে অনেক হুমকি-ধমকি শুনতে হয়েছে। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে হয়েছে।

২০১৬ সালে মনির আহমেদ প্রবাস জীবন থেকে ফিরে এসে কিছুদিন পর আবারো বিএনপি’র রাজনীতিতে সক্রিয় হন। অতীতের লিখনিতে তার কলমে লাকসামের বিএনপিতে ঐক্যের কথা আসলেও প্রবাস জীবন থেকে ফিরে এসে রাজনীতিতে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার পর তার রাজনৈতিক উত্থানে কর্ণেল আজিমের সকল অবদানের কথা ভুলে গিয়ে যোগ দেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম (চৈতি কালাম) এর গ্রুপে। শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্ণেল (অব.) আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধে মনির আহমেদের বিষেদাগার। কর্ণেল (অব.) আজিমের বিরুদ্ধে বানোয়াট কল্পকাহিনী লিখতে গিয়ে তাঁর (কর্ণেল আনোয়ারুল আজিমের) অনুসারীদের মারাত্মক রোষানলে পড়তে হয় মনির আহমেদকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্ণেল আজিমের বিরুদ্ধে পোষ্ট করা বিভিন্ন স্টাটাসের কমেন্ট বক্সে কর্ণেল আজিমের অনুসারীদের তোপের মুখে পড়ে বিব্রত হতে হয়েছে তাকে। সম্প্রতি লাকসামে কর্ণেল (অব.) এম. আনোয়ারুল আজিম ও আবুল কালাম অনুসারীদের মধ্যে সংগঠিত সহিংস ঘটনায় কর্ণেল (অব.) এম. আজিম অনুসারীদের দায়ের করা দুটি মামলায়ই মনির আহমেদকে আসামী করা হয়। এত কিছুর পরও আবুল কালামের প্রচেষ্টায় গঠিত লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি’র সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটিতে মনিরের নাম না থাকায় বিষয়টি লাকসামের বিএনপি’র পরস্পর বিরোধী দুই পক্ষের মধ্যেই ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে মনির আহমেদ বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে শুধু আক্ষেপের সুরে বলেছেন- আমি বলির পাঠা হয়েছি।

এদিকে, কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের তৃণমুল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ- লাকসাম উপজেলা, লাকসাম পৌরসভা এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটি রহস্যময়। মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে সাত মাস পূর্বে। বিএনপি’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কোন পুর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ দুই বছর। সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগের ভিত্তিতে পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করার নিয়ম গঠনতন্ত্রে রয়েছে। তবে লাকসাম উপজেলা, লাকসাম পৌরসভা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র পুরনো কমিটি বিলুপ্ত না করেই উপজেলা ও পৌরসভা প্যাডে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা এবং লাকসাম পৌরসভা বিএনপি’র কমিটি অনুমোদিত হয়েছে। যা লাকসাম-মনোহরগঞ্জের তৃণমুলের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। এতে ক্ষোভ-অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের সর্বত্র।

The post চৈতি কালাম’র বিশ্বস্ত হয়েও উপেক্ষিত মিলন-তরু ও মনির appeared first on Comillar Barta.



from Comillar Barta http://ift.tt/2jZUMaF

September 26, 2017 at 08:36PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top