বিশ্বনাথ ( সিলেট) প্রতিনিধি ::বিশ্বনাথের রাজনীতি আলোচিত পংকি খান ফের পড়েছেন রাজনীতির রোষানলে। নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর এক সময়ের আস্তাভাজন পংকি খান এখন আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরীর আস্তাভাজন হওয়ায় তার ওপর নেমে এসেছে রাজনীতির খড়গ। তার নিয়ন্ত্রণে থাকা বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি কেন্দ্রের নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে।
পংকি খানের খবরটি পৌঁছে গেছে দলীয় সভানেত্রীর কানেও। দলের সভায় এ নিয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এর প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের কমিটি স্থগিত করেন। পংকি খান বিশ্বনাথের রাজনীতিতে আলোচিত নাম। বিশ্বনাথ সদরে বাড়ি হওয়ার কারণে উপজেলা সদরে রয়েছে তার প্রভাব। পাশাপাশি সব কাজে এগিয়ে আসেন তিনি। এ কারণে বিশ্বনাথের সামাজিকতায়ও পংকি খানের ডাক পড়ে সবার আগে। তিনি মানুষের সুখ, দুঃখে পাশে দাঁড়ান। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় পরপর দুই বার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তখন তিনি বিশ্বনাথে ইলিয়াস আলীর ডানহাত বলে পরিচিত ছিলেন। ২০০৮ সালের সরকার পরিবর্তনের পর থেকে নীরব হয়ে পড়েন পংকি খান। বিএনপির রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া শুরু করেন। ২০০৯ ইলিয়াস আলীর মনোনিত প্রার্থী না হয়ে বিদ্রুহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন পংকি খান। কিন্তু তিনি জয়লাভ করতে পারেননি।
তখন আওয়ামী লীগের নেতা মুহিবুর রহমানের কাছে পরাজয় বরণ করেছিলেন। এরপর থেকে ইলিয়াসের সঙ্গেও পংকি খানের দুরত্ব তৈরি হয়। আর এই দুরত্বের সুবাদে সখ্যতা বাড়ে তখনকার এমপি ও বর্তমান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে।
ওই সময় পংকি খানকে নিয়ে বিশ্বনাথের রাজনীতিতে জল্পনা শুরু হয়। সেই জল্পনাকে সত্যে পরিণত করে পংকি খান ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর শফিকুর রহমান চৌধুরীর হাত ধরে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। সেই থেকে পংকি খানের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। বিএনপির জমানার আধিপত্য ফিরে আসে পংকি খানের হাতে। ২০১৪ সাল থেকে বিশ্বনাথের আওয়ামী লীগকে নিজের মতো করে সাজাতে শুরু করেন পংকি খান। বিএনপির অনেককেই তাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতে প্রবেশ করান।
এতে করে বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। দেখা দেয় বিদ্রোহও। বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মজম্মিল আলী, বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা ছয়ফুল হক, সিনিয়র নেতা ফখরুল আহমদ মতচ্ছিন চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের একটি অংশ বিভক্ত হয়ে পড়ে।
তবে বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পংকি খান দলের মনোনিত প্রার্থী হলে তাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এসব নেতারা। পরবর্তীতে তারা (বিদ্রুহী নেতারা) স্থানীয়ভাবে শফিকুর রহমান চৌধুরীর বলয় ছেড়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগের আরেক নেতা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বলয়ে। সরাসরি তারা বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শফিকুর রহমান চৌধুরী ও পংকি খানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এই অবস্থায় ২০১৫ সালের মার্চ মাসে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
আর নতুন কমিটিতে পুরাতন সবাইকে বাদ দিয়ে পংকি খানকে করা হয় সভাপতি। তবে- বাবুল আখতার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বহাল থাকেন। ওই কমিটি গঠনের পর থেকে সংকট আরো তীব্র হয়। বিদ্রোহী বলয়ের নেতারা প্রকাশ্যে পাল্টা কমিটি গঠন করেন। তারা পৃথক কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। গত রমজান মাসে পবিত্র উমরাহ পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবে মারা যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার।
তার মৃত্যুর পর সাধারণ সম্পাদক কে হবেন- সেটি নিয়েও নতুন করে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এদিকে- সম্প্রতি পংকি খানকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তাকে ‘হাইব্রিড’ নেতা হিসেবেও স্থানীয়ভাবে দলের বিদ্রুহীরা প্রচারনা করেন। তারা পংকি খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ লিখিতভাবে দলীয় প্রধানের কাছে তুলে ধরেন। দলীয় সভানেত্রীও বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান। এর প্রেক্ষিতে পংকি খানের নেতৃত্বাধীন বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।
বিশ্বনাথে যারা একসময় আলহাজ্ব পংকি খানকে দলে ভিড়ালেন, তাকে বিজয়ী করার জন্য মাঠ চষে বেড়ালেন এবং বিপুল ভোটে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত করলেন, তাঁরাই আবার তাকে বিদায় করতে চাচ্ছেন! এই যদি হয় রাজনীতির উল্টাপাল্টা লীলাখেলা তাহলে ভবিষ্যতে কেউ কি আর আওয়ামীলীগ করতে চাইবে? এখনই বিষয়টি আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ভাবতে হবে, নতুবা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে হয়ত কঠিন মাশুল দিতে হবে।
বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক জানিয়েছেন- তারা আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে রয়েছেন। কমিটি স্থগিত হওয়ার পর তারা নতুন কমিটি চান। ত্যাগী নেতাকর্মীদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্বনাথের স্থগিত ঘোষিত আওয়ামী লীগের কমিটির সভাপতি পংকি খান জানিয়েছেন- তার কারণেই বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের কমিটি স্থগিত হয়েছে সেটি ঠিক নয়। অপপ্রচার করা হচ্ছে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ বিশ্বনাথসহ ৭ উপজেলা কমিটিকে স্থগিত করেছে। অথচ বিষয়টি তার নামেই উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে যেটি ঠিক নয়। কমিটিতে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হবে। এ ব্যাপারে জেলায় সব কমিটি গঠন করে দেবে।
সেই কমিটির মাধ্যমে সংশোধিত কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন- বিশ্বনাথে আওয়ামী লীগের মূল বলয়ের বিরোধীরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার করে দলের ক্ষতি করছে। ব্যক্তিগতভাবে মাঝে মধ্যে তাকে নিয়ে সমালোচনা করা হয়। সমালোচনা ভালো। কিন্তু অপপ্রচার ভালো নয়। দলের স্বার্থে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে উপজেলা যুবলীগ-ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে গত শনিবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘বিশ্বনাথের মাটি, পংকি খানের ঘাঁটি’- স্লোগান নিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা এসে জড়ো হন উপজেলা সদরে। পরে স্থানীয় বাসিয়া ব্রিজের উপরে এক সমাবেশে পংকি খান বক্তৃতা করেন।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2y22iVw
September 12, 2017 at 09:45PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন