ডেস্ক রিপোর্ট ● Blue Whale যার বাংলা উচ্চারন হয় ‘ব্লু হোয়েল’ আর এর বাংলা অর্থ হল “নীল তিমি”। এটি একটি অনলাইন প্রতিযোগিতামূলক খেলা যা (ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ) নামে পরিচিত। এর মূল নাম “সিনিয় কিত”। এ গেমটি ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম রাশিয়ায় শুরু হয়। এর আবিস্কারক “ফিলিপ বুদেইকিন”। যিনি মনোবিজ্ঞানের এক প্রাক্তন ছাত্র। যিনি নিজে অবসাদগ্রস্থ।
ধারণা করা হয় প্রতিনিয়ত আত্মহত্যা কথা ভাবতে ভাবতে এক সময় অন্য যারা আত্মহত্যার কথা ভাবে তাদের জন্য তিনি এই গেম তৈরি করেন।
গেমটি ২০১৬ সালের মে মাসে রুশ পত্রিকা ন্যভায়া গ্যাজেটার মাধ্যমে প্রথম আলোচনায় আসে। ভিকোন্তাকে নামের সামাজিক মাধ্যমের এফ ৫৭ নামের একটি গোষ্ঠীর অনুসারী কমপক্ষে ১৬ জন কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যার সাথে এই গেমটির সাথে সম্পৃক্ততা তুলে ধরা হয়।
বলা হয়ে থাকে, এই সুইসাইডাল গেমটির ফাঁদে পা দিয়ে সর্বপ্রথম ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল জুলিয়া ওভা এবং ভের্নিয়া ওভা নামের দুই বোন। আত্মহত্যার আগে জুলিয়া ওভা সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি নীল তিমির ছবি আপলোড করে লিখে গিয়েছিল ‘The End’!
এই গেমের নাম করনের কারণকে তুলনা করা হয় নীল তিমির জীবনের শেষ পর্যয়ের সাথে। বলা হয়ে থাকে, নীল তিমি নিজেই জীবনের একটি পর্যায়ে চলে আসে সমুদ্র তীরে, শুকনা ভূমিতে ধীরে ধীরে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
বাস্তব প্রমান পাওয়া যায় ২০০৮ সালে ৫৫টি নীল তিমি একযোগে সমুদ্র সৈকতে চলে আসে, উদ্ধারকারীরা তাদেরকে সাগরে ফেরত পাঠালেও তারা তীরের দিকে বারবার চলে আসে। মনে হয় আত্মহত্যাই যেন তাদের উদ্দেশ্য। আর এরই সূত্র ধরে আত্নহত্যা প্রেমীদের জন্য এই গেমের নামকরণ করা হয় “ব্লু হোয়েল”।
গ্রেপ্তার করা পর এই গেমের আবিষ্কারক ফিলিপ বুদেকিনের কাছে যখন জানতে চাওয়া হয় যে তিনি কেন খেলার নামে টিনেজারদের আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করছে?
তখন এর জবাবে তিনি বলেন, ‘There are people – and there is biological waste. Those who do not represent any value for society. I was cleaning our society of such people.’ অর্থাৎ তার মতে, গেম খেলে আত্মহত্যাকারী এই টিনেজাররা হচ্ছে ‘বায়োলজিক্যাল ওয়াস্ট’! যাদেরকে সমাজ থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা তিনি নিজের দায়িত্ব বলে মনে করেন।
মূলত, ১৪-১৮ বছরের ছেলে-মেয়েদের উদ্দেশে তৈরি করা হয়েছে এই গেম।
এই বয়সি ছেলে-মেয়েরা এমনিতেই প্রতিযোগিতা প্রবন বা চ্যলেঞ্জপ্রিয় হয়ে থাকে। এরা অপরিচিত মানুষদের বেশি বিশ্বাস করে এবং বাস্তব জগতের চাইতে অবাস্তবকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। এরা যেকোন চ্যালেঞ্জ গ্রহনের জন্য প্রস্তুত থাকে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে দেখা যায়, প্রশাসকগন অংশগ্রহণকারীদের ৫০ (পঞ্চাশ) দিনের জন্য পঞ্চাশটি ঝুঁকিপূর্ণ টাস্ক বা কাজ দিয়ে থাকেন। যার প্রথম দশটি লেভেলকে নিতান্ত মামুলি ধরে নেয়া যায়। যেমন- ভোর ৪টায় ঘুম থেকে ওঠা, রাতে হরর মুভি দেখা, পছন্দের কোন খাবার খাওয়া, সারাদিন কারো সাথে কথা না বলা, একা ছাদের রেলিং ধরে হাঁটা, অ্যাডমিনের পাঠানো ভয়ঙ্কর কোন মিউজিক শোনা ইত্যাদি।
১১-২০ লেভেল আগের চেয়ে খানিক উচ্চতর। যেমন- শীতের মধ্যে খালি গায়ে থাকা, সারা রাত না ঘুমানো, গভীর রাতে কবরস্থান থেকে ঘুরে আসা ইত্যাদি। মূলত ১৫ নাম্বার লেভেল পর্যন্ত অ্যাডমিন ভিকটিমের সকল ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে থাকে। আর ২০ লেভেল থেকে ৩০ পর্যন্ত চলতে থাকে কঠিন সব চ্যালেঞ্জ।
এর মধ্যে ড্রাগ অ্যাডিকশন একটি। নির্ঘুম রাত কাটানো। এ সময় ড্রাগ অ্যাডিকশনের ফলে টিনেজারদের হিপনোটাইজ হয়ে যায় সহজেই। অর্থাৎ, কিউরেটর বা অ্যাডমিন যা বলে ভিকটিম তাই করতে থাকে। খুব কাছের বন্ধুর সাথে চরম দুর্ব্যবহার, বাবার পকেটের টাকা চুরি, কোন প্রাণীকে খুন করা ইত্যাদি অসংলগ্ন কাজগুলো ভিকটিম ঘোরের বশেই করতে থাকে।
গেমটির ৩১-৪০ লেভেল পর্যন্ত কাজগুলো রীতিমত বীভৎস এবং অমানবিক। এখানে ভিকটিমের নগ্ন ছবি থেকে শুরু করে সেক্সুয়াল ভিডিও পর্যন্ত পাঠাতে হয় কিউরেটরকে। ব্লেড দিয়ে নিজের শরীরে ব্লু হোয়েল আঁকা তো আছেই!
৪০তম লেভেলের পর ভিকটিম যখন ভীত হয়ে গেমটি ছেড়ে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি শুরু করবেন তখন ভিকটিমের পাঠানো তথ্যগুলো দিয়েই শুরু হবে ভিকটিমকে ব্ল্যাকমেইল করা। এগুলো পরিবার এবং বন্ধুদের কাছে প্রকাশ করা হবে এমন হুমকি চলতে থাকে। ভিকটিম তখন গেম থেকে সরে যেতে চাইলে তার আত্বীয় এবং বন্ধুদের মেরে ফেলার হুকমিও দেয়া হবে।
অংশগ্রহণকারীকে সব টাস্ক সম্পন্ন করে নির্দৃষ্ট গোষ্ঠীকে প্রমানস্বরূপ ছবি বা ভিডিও পাঠাতে বা নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিডিয়ায় সেগুলি পোস্ট করতে হয়। সর্বশেষ, পঞ্চাশতম টাস্ক বা চ্যালেঞ্জটি হলো আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যা করতে পারলেই খেলোয়াড় বিজয়ী। খেলাটির অন্যতম বিশেষ দিক, একবার খেলায় অংশগ্রহণ করলে খেলাটি কোনোভাবেই বন্ধ (আনইন্সটল) করা যাবে না। এমনকি কেউ বন্ধ করলে তাকে অনবরত নিজের এবং তার পরিবারের মৃত্যুর ভয় দেখানো হয়। যদিও এই হুমকিগুলোর কোন ভিত্তি নেই তারপরও নেশাগস্থ হিপনোটাইজড ব্যক্তির কাছে এসব সত্য বলে মনে হবে।
বিশ্বে এখনও পর্যন্ত ব্লু হোয়েল খেলতে গিয়ে ১৩০ জনেরও বেশি কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী করা হয়।
বাংলাদেশে ব্লু হোয়েল গেমটি আলোচনায় এসেছে, গত বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ওয়াইডব্লিউসিএ হাইয়ার সেকেন্ডারি গালর্স স্কুলের মেধাবি ছাত্রী “পূর্বা বর্ধন স্বর্ণার” মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। পূর্বার মৃত্যুর একদিন পরে তার মা, সানি বর্ধনের মোবাইলফোনে অপূর্বার বন্ধু পরিচয়ে কয়েকজন কল করে।
এদেরই একজন অপূর্বার বাবা-মাকে জানায়, অপূর্বা হয়তো আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা ‘ব্লু হোয়েল গেমে’র শিকার হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই ব্লু হোয়েল গেমের ৫০টি ধাপের সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে আত্মহত্যা। চূড়ান্ত ধাপে যাওয়ার আগে নিজের হাতে ব্লেড দিয়ে কেটে তিমি আঁকতে হয়। এরকম কোন কিছুই অপূর্বা বর্ধনের শরীরে পাওয়া যায়নি। এমনকি মায়ের যে ফোনটি সে ব্যবহার করতো সেটিও খতিয়ে দেখে কিছু পায়নি পুলিশ।
কয়েকটি পত্রিকায় অপূর্বার বাবা সুব্রত বর্ধনেরর বরাতে বলা হয়েছে, তার মেয়েসহ বাংলাদেশে ৬১ জন তথাকথিত ব্লু হোয়েল গেমের জন্য আত্মহত্যা করেছে। অথচ পুলিশের কাছে এমন কোন তথ্য নেই।
জানা যায়, সোমবার (৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল অনলাইনভিত্তিক গেম ‘ব্লু হোয়েল’এর বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে।
এক সূত্র এটা নিশ্চিত করে যে, ‘ব্লু হোয়েল’গেমটি গুগল প্লে স্টোর বা অন্য কোথাও থেকে ডাউনলোড করা যাবে না।
অর্থাৎ, কেউ চাইলেই গেমটি ডাউনলোড করে খেলা শুরু করতে পারবেন না। তবে আলোচনায় আসার পরে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থা এই গেমের ফেক ভার্সন বের করে ছড়িয়ে দিয়েছে অনলাইনে। অর্থাৎ, সার্চ দিয়ে কেউ যদি ব্লু হোয়েল গেম খুঁজে পায়, তবে নিশ্চিত থাকতে হবে সেটি নকল।
এই গেম খেলার জন্য অ্যাডমিন প্যানেল নিজেই আপনাকে নির্বাচন করবে। আপনার ইনবক্স বা মেইলে পাঠাবে গেমের লিংক এবং সেখানে ক্লিক করে গেমটি খেলতে আগ্রহ প্রকাশ করা মাত্র আপনার অজান্তেই ফোনের যাবতীয় তথ্য হ্যাক করে নিবে গেম অ্যাডমিন। তাই কেউ ইচ্ছা করলেই এই গেম খুঁজে পাবে না।
বাংলাদেশে পূর্বা বর্ধন স্বর্ণার মৃত্যুসহ আরও বেশ কিছু কারণে এ গেমটি এখন ব্যাপক আলোচিত। আর এরই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু প্রতারক চক্র ফেসবুক, টুইটার, গুগল, ওয়্যাটঅ্যাপ, ইমু সহ আরও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করছে প্রতারণা, হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
ফেসবুকে বেশ কিছু গ্রুপ ও পেইজে এ ধরণের তথ্য দেখা যায়। এসব গ্রুপে দেখা যায়, অনেকেই খুব বেশি কৌতুহলী হয়ে ছন্নছাড়া হয়ে খুজছে তাদের কাঙ্খিত গেমস ‘ব্লু হোয়েল’। আবার অনেকেই এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে।
কেউ কেউ পোস্ট করছে আমি ‘ব্লু হোয়েল’এর আসল লিঙ্ক চাই। এতে কেউ মন্তব্য করছে, আমি দিব তবে, এর জন্য আমাকে টাকা দিতে হবে। আবার কেউবা ভুয়া লিঙ্ক দিচ্ছে।
কেউ আবার একে “popcorn carnival” নামে ছড়াচ্ছে। আবার অনেকে (+917574999093) নাম্বারটিকে ‘ব্লু হোয়েল’ এর নাম্বার বলে দাবি করে।
তবে, এত রহস্যের ভিড়ে রহস্যই যেন সাধনার বিষয়। তাই অনেকেই ব্যন্ত হয়ে বার বার খোজার চেষ্টা করে এই আত্নজ্ঞাতী গেম ‘ব্লু হোয়েল’।
তবে আগ্রহী হয়ে খেলার জন্য এই গেম খোঁজাখুঁজি না করাই উত্তম। সবারই উচিত হবে এই ফাঁদ থেকে নিজে দূরে রাখা এবং অন্যদের প্রতিও যত্নবান হওয়া, যাতে কেউ ভুল করেও কেউ এই সুইসাইডাল গেমের সাথে জড়িয়ে না পড়ে।
অনেকেই চিন্তা করে আমি খেলব কিন্তু আমার কিছু হবে না, কিন্তু, বাস্তবে আমরা যা চাই সবসময়েই কিন্তু তা হয় না। তাই সবাই উচিত হবে এর থেকে দূরে থাকা এবং সতর্ক থাকা। সূত্র: ইন্টারনেট।
The post ‘ব্লু হোয়েল’ এর নামে চলছে ব্যবসা, হচ্ছে প্রতারণা appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2gqJ9FA
October 10, 2017 at 12:48PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন