বাংলাদেশের জঙ্গীবাদের প্রথম যারা উদ্ভাবক, তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন হাসানুল হক ইনু
স্টাফ রিপোর্টারঃ প্রয়াত সাংবাদিক আতাউস সামাদ ও সঞ্জীব চৌধুরীর স্মরনে দৈনিক আমার দেশ পরিবার এক স্মরণসভা মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত হয়। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও আমার দেশ-এর উপদেষ্টা সম্পাদক আতাউস সামাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ২৬ সেপ্টেম্বর। একই পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধান সঞ্জীব চৌধুরী পরলোকগমন করেন গত ৩১ আগস্ট। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্তে আলোচনায় অংশ নেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ, মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, প্রয়াত সঞ্জীব চৌধুরীর স্ত্রী সীমা চৌধুরী, সাংবাদিক কবি আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমদ, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, হাসান হাফিজ, জাহেদ চৌধুরী, এম আবদুল্লাহ, আবদুল আউয়াল ঠাকুর, ইলিয়াস খান, কাদের গনি চৌধুরী, মোরসালিন নোমানী প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মরহুম আতাউসসামাদ এবং সঞ্জীব চৌধুরীর প্রিতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং তাদের শোক সনতপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, আপনারা একটু আগেই শুনেছেন আমার মিডিয়াতে আসার পেছনে সামাদ ভাইয়ের অবদান অপরিসীম। আমারদেশে আসার পরে যে ব্যাক্তির বাংলা লেখা আমাকে মুগ্ধ করত সে ব্যাক্তি সঞ্জীব চৌধুরী।
আজকে মিডিয়ার কি অবস্থা! কতটা নতযানু হয়ে গেছে মিডিয়া এখন। এখন একদিকে শেখ হাসিনার ভয়, আরেকদিকে দিল্লির ভয়। এই দুই ভয়ের মধ্যে থেকে প্রতিকাগুলোকে প্রতিদিন পত্রিকা বের করতে হচ্ছে। এই ধরবের ভীতির উর্ধে আমার দেশে কিন্তু আমরা উঠতে পেরেছিলাম। এবং সেখানে মরহুম আতাউস সামাদ এবং স্বর্গত সঞ্জীব চৌধুরী অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন। সামাদ ভাই বিবিসির নাকি সামাদ ভাইয়ের বিবিসি, কথাটা কিভাবে বলব আমি ঠিক ভেবে পাচ্ছিনা। কারন বিবিসিকে বাংলাদেশে জনপ্রিয় করেছিলেন সামাদ ভাই। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, যে বিবিসিতে এক সময় আতাউস সামাদের মত বরেণ্য সাংবাদিক ছিলেন সেই বিবিসিতে পরবর্তীতে সুবির ভৌমিকের মত ভাড়াটে সাংবাদিক কাজ করছে। আপনারা জানেন, যে কদিন ধরে খুব চেচামেচি চলছে শেখ হাসিনার কথিত হত্যা প্রচেষ্টা নিয়ে। এবং এই সংবাদটি তৈরী হয়েছে সুবীর ভৌমিক নামক ব্যাক্তির মস্তিষ্ক থেকে। এই সুবীর ভৌমিকের পরিচয়টা কি? এক নম্বর পরিচয় তিনি বিবিসিতে কর্মরত ছিলেন দীর্ঘদিন। এটা বিবিসির জন্য লজ্জাষ্কর যে বিবিসির কতটা অধঃপতন ঘটেছে তার প্রমান হয়েছে সুবীর ভৌমিকের সাংবাদিকতা।দিত্বীয় পরিচয় হচ্ছে তার একটি ভারতীয় কানেকশন রয়েছে। তার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসেই তিনি বলেছেন যে অনেকে তাকে ‘র’ এর এজেন্ট বলে থাকে। তিনি যে ‘র’ এর এজেন্ট নাকি অন্য কারও এজেন্ট সেটা আমরা জানিনা, তবে ভারত সরকারের সংগে তার যে একটা সংযোগ রয়েছে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তৃতীয় আরেকটি পরিচয় আছে। বাংলাদেশে একটি সংবাদ সংস্থা আছে, প্রাইভেট। তার নাম বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম। তিনি নাকি বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কমের জৈষ্ঠ সম্পাদক। এই জাতীয় একটা পদ তার শুনতে পাই। আমি বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ছিলাম। বিনিয়োগ বোর্ডের একটা দায়ীত্ব হচ্ছে যে বিদেশী কেউ যদি বাংলাদেশে চাকুরী করতে আসে, তাহলে তার অনুমতি বিনিয়োগ বোর্ড থেকে দিতে হয়। আমি জানিনা সুবীর ভৌমিক বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কমে যে চাকুরী করছেন, তার কোন অনুমতি তিনি সরকারের কোন সংস্থা থেকে তিনি গ্রহন করেছেন কিনা ? অথনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার এমন কোন অবস্থা হয়েছে কিনা যেখানে ভারতীয় কোন ব্যাক্তিকে যদি বাংলাদেশে চাকুরী করতে হয় তাহলে এসব অনুমতি তনুমতির তোয়াক্কা করতে হয়না। ভারতীয় নাগরীক হলেই বাংলাদেশে এসে চাকুরী করতে পারবেন। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বর্তমান অবস্থা।
তো তিনি কি করেছেন সুবীর ভৌমিক? সোয়ে মিন্ট নামক বার্মিজ এক ভদ্রলোক বার্মার একটি বিমান হাইজ্যাক করে ভারতে নিয়ে গিয়েছিল। ভারত সরকার সেই সোয়া মিন্টকে খাইয়ে পরিয়ে কলকাতায় রেখেছিল।সেই সোয়ে মিন্ট মিজিমা নামের একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদক। এই সোয়ে মিন্ট এবং সুবীর ভৌমিক মিলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একটা কাহিনীর জন্ম দিয়েছেন। গত চার পাচ দিন ধরে এই কাহিনী নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন গনমাধ্যম এবং তথাকথিত ভারতীয় দালাল মিডিয়াতে টক শো হয়েছে। সুবীর ভৌমিকের ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছে।
এখন আমার প্রশ্ন হল যে বাংলাদেশে নাকি একটি আইসিটি এ্যাক্টের আইন ৫৭ ধারা রয়েছে। সেই আইসিটি আইন ৫৭ ধারার সর্ব প্রথমভিকটিম কিন্তু আমি। আমি যে গ্রেফতার হয়েছিলাম ২০১৩ সালের ১১ই এপ্রিল, সেটা আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায়। আজ পর্যন্ত আমার দেশের প্রেস যে বে আইনি ভাবে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে সেটাও সেই আইসিটি আইন ৫৭ ধারার বলে। এখন আমার প্রশ হল বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর যেখানে সুবীর ভৌমিক চাকুরী করেন, কিংবা যে সকল টেলিভিশন চ্যানেল অথবা যে সকল পত্র পত্রিকায় এই বানোয়াট সংবাদটি প্রচারিত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আইসিটি ৫৭ ধারা আজকে প্রযোজ্য হচ্ছে না কেন?
তার মানে কি এটাই যে ভারতীয় কারও বিরুদ্ধে কিংবা ভারতের দালাল কারও বিরুদ্ধে কিংবা শেখ হাসিনার তল্পিবাহক কোন সাংবাদিক বা সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে এই আইসিটি আইন ৫৭ ব্যাবহৃত হবেনা।এটা ব্যাবহৃত হবে কেবলমাত্র ভিন্নমতের বিরুদ্ধে।
আরও মজার কথা দেখুন, আমাদের যিনি বর্তমান তথ্যমন্ত্রী তিনি একজন সাবেক সন্ত্রাসী। আপনারা জানেন তার নাম হাসানুল হক ইনু। তিনি এক সময় গণবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। এবং গণবাহিনী তখন কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকান্ডই বাংলাদেশে করে বেড়াত। কাজেই বাংলাদেশের জঙ্গীবাদের প্রথম যারা উদ্ভাবক, তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন হাসানুল হক ইনু।
বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য যে তিনি আজ বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী।
তিনি নিউজ ১৮ নামক একটি কথিত টেলিভিশন চ্যানেলে ইন্টারভিউ দিয়েছেন। সেই নিউজ ১৮ নামের চ্যানেলের নাম আমি আগে কোনদিন শুনিনি। এটা কোন দেশে অবস্থিত সেটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে। কেউ বলে এটা ভারতে, কেউ বলে এটা বার্মাতে আবার কেউ বলে ‘র’ এর বিল্ডিং এর অভ্যন্তরেই নাকি এর স্টুডিও। এই নিউজ ১৮ এ হাসানুল হক ইনু দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। একটা দেশের তথ্যমন্ত্রী তিনি জানেন না যে কোন মিডিয়াতে ইন্টারভিউ দিতে হয় বা কোন মিডিয়াতে ইন্টারভিউ দেয়া যায়না, সেই সংক্রান্ত নূন্যতম ধারনা বাংলাদেশের বর্তমান তথ্যমন্ত্রীর নেই।
এই যে নতযানু অবস্তা তৈরী হয়েছে বাংলাদেশের মিডিয়ার এ সংক্রান্ত কোন লেখা আমারা আমাদের মূল ধারার মিডিয়াগুলোতে কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না।
আজকে আমার দেশ যদি থাকত, আতাউস সামাদের মত উপদেষ্টা সম্পাদক যদি থাকতেন কিংবা সঞ্জীব চৌধুরীর মত সাংবাদিক থাকতেন, তাহলে ঠিকই এ বিষয়ে আমার দেশ পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হত, সম্পাদকীয় লেখা হত।
দূর্ভাগ্যের বিষয় হল, ইনভেষ্টিগেটিভ জার্নালিজম নামের যে বিষয়টি আছে সেই বস্তুটির বাংলাদেশে মৃত্যু ঘটেছে। বাংলাদেশে এখন সরকারের বক্তব্যই প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় দেখতে পান। সেটা তথাকথিত শেখ হাসিনার হত্যা প্রচেষ্ঠা নিয়ে হোক কিংবা তথাকথিত ইসলামিক জঙ্গীবাদ নিয়েই হোক। কোন রখন ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম বাংলাদেশে আর অবশিষ্ট নেই। সেজন্য আমি যেমন মরহুম আতাউস সামাদ ভাই, স্বর্গীয় সঞ্জীব দার জন্য শোক প্রকাশ করি, তেমমি বাংলাদেশের নিহত মিডিয়ার জন্যও শোক প্রকাশ করি।
এই নিহত মিডিয়াকে বাচানোর জন্য গণতন্ত্র ফিরে আসতে হবে। গণতন্ত্র যদি ফিরে না আসে তাহলে স্বাধীন মিডিয়া বিকশিত হতে পারেনা। তার সর্বশ্রেষ্ট প্রমান বাংলাদেশ। কারন এক সময় এই বাংলাদেশেই কিন্তু মিডিয়া কতটা স্বাধীন ছিল আপনাদেরমনে আছে। অন্ততপক্ষে ৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মিডিইয়া তাদের হাত খোলে লিখতে পেরেছে। তাদেরকে ৫৭ ধারার ভয় পেতে হয়নি। গুমের ভয় পেতে হয়নি, পুলিশি আক্রমনের ভয় পেতে হয়নি। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার সংগে বাংলাদেশের মিডিয়ার উন্নতিও আমরা দেখতে পেয়েছিলাম।
২০০৬ সালের পরে যখন মঈনের সরকার আসল তখন ডিজিএফআই থেকে নির্দেশ দেয়া হত। ডিজিএফআই এর নির্দেশ অনুযায়ী তখন পত্রিকায় সংবাদ ছাপানো হত। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার সের ডিজিএফআই এর নির্দেশ আমার দেশ পত্রিকাইয় কিন্তু কখনও আসে নাই। কারন ডিজিএফআই জানত আমার দেশ পত্রিকায় নির্দেশনা দিয়ে সংবাদ ছাপানো যাবেনা। অথচ বাংলাদেশের একজন সুশীল সম্পাদক মিডিয়াতে স্বিকার করেছেন তিনি এই ডিজিএফআই এর নিউজ ছাপতেন। এবং এই নিউজ ছাপানোর জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। অবশ্য ক্ষমা চেয়ে তার শেষ রক্ষা হয়নি। তার বিরুদ্ধে আবার হাসিনা সরকার অনেকগুলো মামলা দিয়েছে।
আমার দেশে আমরা একটা পরিবারের মত ছিলাম। এজন্যই আমরা পত্রিকাটাকে দাড় করানোর চেষ্টা করেছি স্বাধীনতার কথা বলার জন্য। এজন্য আমার দেশের মাস্ট হেডে লেখা থাকত আমার দেশ স্বাধীনতার কথা বলে। আজকে আমার দেশ নেই – স্বাধীনতাও চলে গেছে। কাজেই স্বাধীনতা বাংলাদেশে আছে কি নেই তার একটা মানদন্ড বাংলাদেশে দেখবেন আমার দেশ আছে কি নেই। যেদিন দেখবেন আমার দেশ চালু হয়েছে সেদিন মনে করবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূণরুদ্ধার হয়েছে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2fXhE67
October 09, 2017 at 11:25AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন