বিনোদন ডেস্ক ● ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ বিজয়ী হয়েছেন জান্নাতুল নাঈম। শুক্রবার রাতে নগরীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রী হলে এই প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়। ১৮ নভেম্বর চীনের সানাইয়া শহরে অনুষ্ঠিত হবে ৬৭তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা। এতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সুন্দরীদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে লড়বেন জান্নাতুল নাঈম।
প্রায় ২৫ হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে জমকালো গ্র্যান্ড ফিনালেতে বিচারকরা চূড়ান্ত বিজয়ীকে নির্বাচন করেন। প্রথম রানার্সআপ হয়েছেন জেসিয়া ইসলাম, দ্বিতীয় রানার্সআপ হন জান্নাতুন সুমাইয়া। জমকালো পরিসরে ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত ৮টা ১০ মিনিটে পর্দা ওঠে লাভেলো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ, ২০১৭-এর গ্র্যান্ড ফিনালের।
এটুকু ঠিক আছে। কিন্তু এর মধ্যে রয়ে গেছে ফাঁক। আর এ ফাঁক গলেই ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’কে ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধছে। যার শুরু বিজয়ীর নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে। অথচ এর শুরই হয়েছিল মিথ্যে দিয়ে।
অন্তর শোবিজ ও অমিকন এন্টারটেইনমেন্টের দাবি ছিল, এটিই প্রথম ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতা। যদিও এ প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে প্রথম হয় ২০০০ সালে। তখনকার বিজয়ী প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন মিস ইউনিভার্সেও।
কিন্তু মিথ্যা তথ্য দিয়েই থেমে থাকেনি মিস ওয়ার্ল্ডের এবারের আয়োজন। চূড়ান্ত বিজয়ী ঘোষণার ক্ষেত্রে রীতিমতো হয়ে গেছে কেলেঙ্কারি। এদিন প্রতিযোগিতার শীর্ষ ১০ প্রতিযোগীর মধ্যে জান্নাতুল সুমাইয়া হিমিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আয়োজকরা জানান, তিনি হয়েছেন দ্বিতীয় রানারআপ! পরে জান্নাতুল নাঈমকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অথচ এখন জানা যাচ্ছে, বিচারকদের তালিকায় তার নামই ছিল না।
বিচারকরা যাকে প্রথম নির্বাচিত করেছিলেন, আয়োজকরা তাকে দ্বিতীয় ঘোষণা করতে বাধ্য করেন উপস্থাপিকাকে। তার এ ঘোষণা শুনে থতমত খেয়েছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা! ‘লাভেলো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালের বিচারক ছিলেন জুয়েল আইচ, শম্পা রেজা, বিবি রাসেল, চঞ্চল মাহমুদ, রুবাবা দৌলা ও সোনিয়া বশির কবির। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন শিনা চৌহান।
কয়েকজন বিচারক গণমাধ্যমকে বলেন, এটা খুব অন্যায় হয়েছে। আমাদের সবার কাছে যে প্রথম হয়েছে, তাকে প্রথম করা হয়নি। যাকে প্রথম করা হয়েছে, সে আমাদের প্রথম তিনজনের তালিকায়ও ছিল না।
যেহেতু এটা একটা আন্তর্জাতিক ইভেন্ট, তাই আমরা এমন একজন প্রতিযোগীকে বাছাই করতে চেয়েছি, যে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারবে। আমরা একবাক্যে জেসিকা ইসলামকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নির্বাচিত করি।
শুক্রবার রাতে যা ঘটল, তা আমাদের জীবনে খুব খারাপ একটা অভিজ্ঞতা হয়ে থাকল। এত বড় একটা অন্যায় এভাবে হবে, ভাবতেও পারিনি।
তারা বলেন, আয়োজকেরা যদি নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, তাহলে তো বিচারক হিসেবে আমাদের রাখার প্রয়োজন ছিল না। আমাদের জন্য এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। নাম ঘোষণার ওই মুহূর্তে এত মানুষের সামনে আমরা আয়োজকদের অপমান করতে চাইনি। এখন মনে হচ্ছে, তখন আমাদের এই কাজটি করা উচিত ছিল।
এ বিষয়ে জুয়েল আইচ বলেন, মিস বাংলাদেশ ঘোষণা নিয়ে তারও বক্তব্য আছে। তবে তিনি তা প্রকাশের আগে আয়োজকদের একদিনের সময় দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আয়োজকরা আমার কাছ থেকে একদিনের সময় চেয়েছেন। আমি আগামীকাল এ বিষয়ে বক্তব্য রাখব।
বিচারক শম্পা রেজা বলেন, তারাতো আমাদেরই দেশের মানুষ, খারাপ চাই না। কিন্তু কোনো রকম অন্যায়ও যেন না হয় এটাও তো চাই। এটা যেহেতু ইন্টারন্যাশালি যাবে তো খুব যত্নসহকারে হওয়া উচিত, তাই না?
এদিকে অন্তর শো বিজের চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরী বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। আয়োজক হিসেবে আমিই তো রায় দিব। আমিই পয়সা দিয়ে বিচারক নিয়োগ করেছি। এমন সব বিচারক নিয়োগ করেছি, যারা সবাই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। তাদের প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ আমার নেই।
বিচারকদের রায়েই জান্নাতুল নাঈম বিজয়ী হয়েছেন। আমরা আন্তর্জাতিক মানের একটি অনুষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেছি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছি। এটি নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করা আসলেই দুঃখজনক।
এদিকে এরই মধ্যে মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে জনসম্মুখে আসে তিনি আসলে বিবাহিত! এর সত্যতার প্রমাণও মিলেছে। জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলকে নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। নিজের পরিচয়-বৈবাহিক অবস্থা গোপন করে মিডিয়াতে এসেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার বেশ কয়েকজন নিকটাত্মীয়।
আর এভাবেই পরিচয় গোপন করে পৌঁছে যায় সুন্দরী প্রতিযোগীতায়। ঢাকায় নিজেদের বাড়ি-গাড়ি, বাবা সিঙ্গাপুরে, বড় ভাই বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও অনুসন্ধানে মিলেছে উল্টোটা। তার জন্ম একটি সাধারণ কৃষক পরিবারে। এখনো খুব অভাব-অনটনে দিন কাটছে তাদের।
জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলের জন্ম চট্টগ্রামের একটি সাধারণ কৃষক পরিবারে। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার এভ্রিলের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ৫নং বরমা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। বাবা তাহের মিয়া। তারা দুই ভাই, দুই বোন। ফোরকান উদ্দিন (৩০), জান্নাতুল আয়শা (২৮), রিয়াজ উদ্দিন (২৬)।
এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সুন্দরী আমেনাকে দেখে পছন্দ হয় সেখানকার এক যুবকের। পরীক্ষার পর বেশ ঘটা করেই পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আমেনার।
৮ লাখ টাকার কাবিননামায় উসুল ধরা হয় ৩ লাখ। বিয়ের অনুষ্ঠানে বরপক্ষ খরচ করে ১৫ লাখ টাকা। চন্দনাইশ বড়মা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী জান্নাতুল নাঈম আমেনার স্বামী জামিয়াতুল আহম্মদিয়া সুন্নি আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র মনজুর উদ্দিন রানা। এসএসসি পরীক্ষায় আমেনা ৪.৪৪ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
সাড়ে তিন বছর আগে জান্নাতুল নাঈমকে বিয়ে করা মো. মনজুর উদ্দিন রানা বর্তমানে কাপড়ের ব্যবসা করেন। চন্দনাইশ সদরে রয়েছে তার দোকান। এভ্রিল মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বাইক চালানো শিখেন। এরপর ধীরে ধীরে মোটরবাইক চালানো তার শখে পরিণত হয়। এ যানকে ঘিরেই চলতে থাকে তার নানা কসরত।
মনজুর উদ্দিন রানার বাবা চুন্নু মিয়ার শখ ছিল নাতিকে নিয়ে মজা করার। কিন্তু তার আগেই বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাদের, তখন আমেনা দুই মাসের সন্তান-সম্ভবা ছিলেন বলে জানান তার স্বামী।
এরপর নিরুদ্দেশ হয়ে যান জান্নাতুল নাঈম আমেনা। দীর্ঘদিন পর তার বাবা-মা জানতে পারেন- স্থানীয় এক যুবকের হাত ধরে ঢাকায় চলে গেছে আমেনা। ঢাকায় এসে জান্নাতুল নাঈম আমেনা হয়ে যান জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন নৈপুণ্য দেখাতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি।
এভ্রিলের বাইক নৈপুণ্য প্রদর্শনী, বাইক চালানোর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। সেলিব্রেটি বনে যান তিনি। ফেসবুক ফলোয়ারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০ হাজারে। বর্তমানে এই যুবতী ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের অ্যাক্টিভিটি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন।
বিয়ের আগেই এভ্রিলের চলাফেরা স্বাভাবিক ছিল না। বিভিন্ন ছেলে-বন্ধুর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। বিয়ের পর বেশিদিন সংসার টেকেনি। ঢাকায় এসে মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য গড়ে তোলেন নিজের নেটওয়ার্ক। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির প্রোমোটর হিসেবে নিয়োগ পান।
এদিকে জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলকে তার এলাকার অনেকেই প্রতারক হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রতারণার জন্য তার শাস্তিও দাবি করেছেন।
শুধু এলাকারই নয়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার বাবা স্বয়ং অভিযোগ করেছেন। ৫নং বরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, তার নাম জান্নাতুল নাঈম আমেনা। এলাকায় বিয়ে হলেও সে সংসার বেশিদিন টেকেনি।
এখন প্রশ্ন ওঠে, একজন বিবাহিত মহিলা কীভাবে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদশ’ হন। বিচারকদের রায়কে পাশ কাটিয়ে জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম করায় আয়োজক প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়েও সমালোচনার ঝড় উঠে। আয়োজকের এমন কাণ্ডে এরই মধ্যে এই প্রতিযোগিতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
The post একজন বিবাহিত মহিলা কীভাবে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদশ’ হন appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2hEzU8j
October 02, 2017 at 01:47PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন