এখনোও উপেক্ষিত দেশের অর্থনীতির প্রধান উৎস প্রবাসীরা

কুমিল্লার বার্তা ডেস্ক ● অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ কথাটি আজ এটা স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। এই সমৃদ্ধি অর্থনীতি গড়তে সর্বাধিক ভাবে সহায়তা করছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা লাখো প্রবাসী। যাদের পাঠানো অর্থে একটু একটু করে সেই সফলতা ধরা দিচ্ছে। সর্বশেষ সরকারি হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বের ১৫৯ দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭০ জন।

তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরও বেশি। আর এই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমান প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৪ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যংকের হিসাব অনুযায়ী রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমান এ বছরের প্রথম দিকে কিছুটা কমলেও, এখনোও তা বাড়ছে । আগে যেভাবে গার্মেন্টস খাত দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখেছে ঠিক একইভাবে গত পাঁচ-দশ বছর ধরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দিন দিন অর্থনীতির মূল চাকাতে পরিণত হয়েছে।

অথচ গার্মেন্টস খাতকে সরকার যেভাবে মনিটর করছে, সেভাবে কোন নজর দিচ্ছে না প্রবাসীদের প্রতি। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ হয়ে পড়েছে, সৌদি আরব-মালয়েশিয়ার মতো দেশ থেকে প্রচুর প্রবাসীদের ফেরত আসতে হচ্ছে। অনেক দেশে প্রবাসীরা কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না, আবার কিছু দেশে সাহায্য সহযোগিতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

যেখানে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য সরকার গার্মেন্টস খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে ; সেই সাথে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসহ র্আথিক প্রণোদনা দিচ্ছে, সেই তুলনায় প্রবাসীদের নিয়ে তেমন কোন চিন্তাই করছে না সরকার।

প্রবাসী কল্যাণ মণন্ত্রালয় প্রবাসীদের জন্য কিছুটা কাজ করলেও, বাংলাদেশের কূটনৈতিক দুর্বলতার কারণে দিন দিন মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। যেখানে অনান্য দেশ হাজারো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তাদের অবস্থান সুসংহত করছে , সেখানে আমাদের কূটনৈতিক র্ব্যথতার কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছে ক্রমান্বয়ে। সরকার দেশের এজেন্সি গুলোর দুর্নীতি এবং অপতৎপরতা ঠেকাতে মালেশিয়ায় জি টু জি ভিসা র্সাভিস চালু করে । কিন্তু এ পর্যন্ত মাত্র কয়েক হাজার শ্রমিক যেতে পেরেছে এই সুবিধায়।

অপরদিকে প্রতিদিন দালালের মাধ্যমে শত শত অসহায় বাংলাদেশী সমুদ্র বা নদী পথে মালেশিয়ায় যাচ্ছে। যাদের শেষ পরিনতি কত করুন ও অমানবিক তা মিডিয়ার কল্যাণে আমরা জানতে পারছি । বাংলাদেশের মোট প্রাসীর ৬৫ ভাগ কাজ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। আর বাকি ৩৫ ভাগ কাজ করে ইউরোপ আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশে । কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের মতো এতো বড় শ্রমবাজারে আজ বাংলাদেশিরা অনেকটাই উপেক্ষিত। সৌদির নতুন আইনে এ বছর প্রায় চারে চার লাখ প্রবাসী দেশে ফিরেছে।

এদিকে কুয়েতের লামানা ভিসায় প্রচুর খরচে যেতে পারছে না বাংলাদেশিরা। কাতারের বাণিজ্যিক অবরোধে খুব একটা ভালো নেই বাংলাদেশিরা। আর এর প্রধান কারণ মধ্যেপ্রাচ্যে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর কাযক্রমের ব্যর্থতা।

দূতাবাসগুলো শ্রমিকদের উন্নয়নে বা বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের সঠিক ভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারছে না মধ্যেপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে। যার কারণে অন্যান্য দেশের থেকে ভালো অবস্থানে থাকলেও দূতাবাসের ব্যর্থতায় বাংলাদেশি প্রবাসীরা ভালো করতে পারছে না এদেশগুলোতে। যে কারণে দিনে দিনে রেমিটেন্স প্রবাহের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। শুরু মধ্যপ্রাচ্য নয় ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতেও একই অবস্থা বাংলাদেশের। ইংল্যান্ডে একচেটিয়া রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় জড়িত ছিলো বাংলাদেশিরা।

কিন্তু আজ সেই অবস্থা নেই। ইউরোপের ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পতুর্গাল, গ্রীসের মতো দেশগুলোতে আগের তুলনায় অনেক কম আয় করছে বাংলাদেশিরা। দালালদের দৌরাত্মে প্রচুর অবৈধ বাংলাদেশির বসবাস গড়ে উঠেছে এ দেশগুলোতে। যা নিয়ন্ত্রণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না সরকার। দালালদের আটক করা ও তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার আইনি ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। ফলে দিন দিন এই দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, যতশীঘ্র সম্ভব সরকারের উচ্চ পর্যায়ে শক্তিশালী কমিটি গঠনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিক রপ্তানি সমস্যার সমাধান করা দরকার। এছাড়াও যেসকল দেশে বেশী পরিমান প্রবাসী আছে সেইসব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রম দ্রুত এবং স্বচ্ছতার করা দরকার।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ নয় , যেসকল বাংলাদেশী প্রবাসীর চাকরির জন্য যাবে তাদের প্রত্যেকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দেশের আইন কানুন সর্ম্পকে যেন আলাদা কোর্স করা হয়। কেননা তারা যেনো সেদেশে কোনো অপর্কমে জড়িত না হয়। এমনকি হুন্ডির প্রবণতা বন্ধের জন্য প্রত্যেক প্রবাসীর বা তার পরিজনের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক বলেও মনে করেন তিনি। প্রবাসীরা যতবেশী স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে ততবেশী রেমিটেন্স দেশে আসবে। আর বেশী রেমিটেন্স মানেই দেশর অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি।তাই দেশের সুন্দর অর্থনীতির কথা চিন্তা করে সরকারের উচিত এখনই প্রবাসীদের নিয়ে সঠিক নীতিমালা প্রনয়ন করা। যে নীতিমালার ফলে প্রবাসীরা সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচলে সর্বাধিক ভূমিকা পালন করতে পারে।

The post এখনোও উপেক্ষিত দেশের অর্থনীতির প্রধান উৎস প্রবাসীরা appeared first on Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা.



from Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা http://ift.tt/2xhN1PD

October 23, 2017 at 09:54PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top