নিজস্ব প্রতিবেদক ● এবার ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রুটে হাইস্পিড ট্রেন (বুলেট) চালুর উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে নতুন এই বুলেট ট্রেন। আর এ জন্য চীন থেকে আনা হবে দ্রুতগতির এক্সপ্রেস ট্রেন। নতুন করে তৈরি করা হবে স্ট্যান্ডার্ড গেজের ডাবল রেললাইন। এতে অনায়াসে ঢাকা থেকে এক ঘণ্টারও কম সময়ে কুমিল্লায় আর দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে।
প্রকল্পটির সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইনের ১০৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলতি মাসে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের নির্দেশ দেন। তখন থেকেই প্রকল্পের ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল) তৈরির কাজ শুরু করে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে কয়েক দফা পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভাও হয়েছে। বুলেট রেলপথ নির্মাণে সমীক্ষা প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য সমীক্ষা প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণেরও একটি সম্ভাব্য সমীক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। বুলেট রেলপথটি এ এক্সপ্রেসওয়ের পাশ দিয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনটি সম্ভাব্য রুট নির্ধারণ করা হয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য। এর মধ্যে মদনপুর (ঢাকা)-দাউদকান্দি-কুমিল্লা-ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম রুটের দৈর্ঘ্য ২১৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার। মদনপুর (ঢাকা)-দাউদকান্দি-বরুড়া-ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম রুটের দৈর্ঘ্য ২০৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং মদনপুর (ঢাকা)-দাউদকান্দি-চাঁদপুর-ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত। এই রুটের দৈর্ঘ্য ২৮০ কিলোমিটার।
এ তিনটি রুটের মধ্যে দূরত্ব কম হওয়ায় মদনপুর (ঢাকা) দাউদকান্দি-বরুড়া-ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম রুটে হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। মন্ত্রী বলেন, রেলের মাধ্যমে আমরা জাতিকে আরো সেবা দিতে চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিদিনই রেলপথে যাত্রী বাড়ছে সড়ক নিরাপত্তা ও সাশ্রয়ীর কথা বিবেচনা করে মানুষ দিন দিন ট্রেনে ভ্রমণ বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলেও জানান। মন্ত্রী আরো জানান, আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন রেলপথে প্রতিদিন এক লাখ ৬০ হাজার থেকে এক লাখ ৭০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হতো। এখন আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। রেলপথের সমস্যা অনেক কমে এসেছে। বাকি যেসব সমস্যা আছে, সেগুলোরও সমাধান করব বলে জানান।
রেল কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রেল করিডোর ব্যবস্যা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবদিক বিবেচনায় খুব গুরুত্বপূর্ণ। মহেশখালীকে ঘিরে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ হাব গড়ে তোলা হচ্ছে। এ কারণে প্রচুর দেশি-বিদেশি নিয়মিত ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাবেন।
এর ওপর এ রুটে যাত্রীর চাপ বাড়ছে দ্রুত গতিতে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী বুলেট ট্রেন প্রকল্প নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রেলপথ হচ্ছে একটি নিরাপদ আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী মাধ্যম। পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, বুলেট ট্রেন চালু করতে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন। ভারত ও মুম্বাই থেকে আহমেদাবাদ বুলেট ট্রেন লাইন তৈরিতে ৬৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েও অর্থায়ন এবং জমি সংকটে হোঁচট খেয়েছে ভারত। এর আগে বিএনপি সরকারের আমলেও একবার পাতাল রেলের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় রেলওয়ে। তবে দেশের অর্থনীতি এখন অনেক বড়। সরকার আন্তরিক হলে এ রকম বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রুটে সফলভাবে বুলেট ট্রেন চালু করতে পারলে এটিকে কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণে সুযোগ থাকবে। ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে উচ্চগতির ট্রেন চললে সম্ভাব্য যাত্রীর সংখ্যা আরো বাড়বে। এতে পর্যটকরা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছতে পারবেন। এতে পর্যটন খাত দ্রুত প্রসার লাভ করবে।
প্রকল্পটি সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হবে। বুলেট ট্রেনের লাইন নির্মাণে চীনের সঙ্গে জি-টু-জি ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। বুলেট ট্রেনে রেলপথের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইনের লক্ষ্যে এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ১০৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে। দেড় বছর মেয়াদে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইনের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনুমানিক ৩০ হাজার ৯৫৫ কোটি ৭ লাখ টাকার এ প্রস্তাবিত বিশাল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে রেল। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে চীন থেকে আসবে ২৪ হাজার ৭৬৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। নতুন এই রেললাইন নির্মিত হলে তা বাংলাদেশের জন্য হবে তৃতীয় মাত্রার রেললাইন। বর্তমানে দেশে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ রেললাইন চালু আছে। মিটারগেজ লাইনের প্রস্থ ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি প্রায় (১০০০ মিলিমিটার), স্ট্যান্ডার্ড গেজ লাইন ৪ ফুট ৮.৫ ইঞ্চি (১৪৩৫ মিলিমিটার) ও ব্রডগেজ লাইনের প্রস্থ ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১৬৭৬ মিলিমিটার)।
The post বুলেট ট্রেনে ঢাকা-কুমিল্লা ১ ঘণ্টায়! appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2ziKCpu
October 12, 2017 at 03:04PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন