বাংলা ট্রিবিউন ● একজন অসুস্থ শিক্ষিকার পরীক্ষার হলে ঘুমিয়ে পড়ার ছবি তুলে তা ফেসবুকে দেওয়া প্রসঙ্গে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ বলেছেন,‘ আমি তো তার বেডরুমে গিয়ে ছবি তুলি নাই। পরীক্ষার হলে ঘুমিয়ে পড়ার ছবি তুলেছি। আর ওই ছবি ফেসবুক এবং অনলাইনে প্রকাশ হওয়ায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপকার হয়েছে।’ তিনি আরও দাবি করেন,‘ওই শিক্ষিকা কোনোভাবেই অসুস্থ ছিল না। সে রমরমা অবস্থায় ছিল। মিডিয়া তাকে অসুস্থ বানিয়েছে।’
গত ১৮ অক্টোবর সিলেটের জকিগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মডেল টেস্টের দায়িত্ব পালনের সময় স্কুলশিক্ষিকা দীপ্তি বিশ্বাসের ঘুমিয়ে পড়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে গেলে তার মোবাইল ফোন দিয়ে সঙ্গে থাকা লোকজন ওই ছবি তোলেন। দীপ্তি বিশ্বাস অসুস্থ ছিলেন। একজন অসুস্থ শিক্ষিকার এই ধরনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ায় তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
রবিবার ওই বিষয় নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ। তিনি দাবি করেন,‘ওই শিক্ষিকা আগেও স্কুল ফাঁকি দিত বলে আমার কাছে অভিযোগ ছিল। ওইদিন আমি গিয়ে তাকে পরীক্ষার হলে ঘুমন্ত অবস্থায় পাই। ছবি তোলার পর সে জেগে ওঠে। সে আমার পরিচিত। আমাকে দেখার পরই হেসে আদাব দেয়। আমি বললাম, আপনি খুব আরাম করছেন আর বাচ্চারা পরীক্ষা দিচ্ছে। সে বলল, আমার মাথাটা ধরেছিল, তাই ঘুম লেগেছিল।’
শিক্ষিকা অসুস্থ ছিলেন এই তথ্য অস্বীকার করে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন,‘ তিনি মোটেই অসুস্থ ছিলেন না। খুবই সুস্থ ছিলেন এবং ঝরঝরা কথা বলছিলেন। সে আমাকেও অসুস্থতার কথা বলে নাই। হেডমাস্টার ডেকে নেওয়ার পরও অসুস্থতার কথা বলে নাই। কিন্তু এটা নিয়ে যখন অনেক সমালোচনা হল (ফেসবুকে ছবি প্রকাশের পর) তখন তার স্বামী ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিল যে আমার স্ত্রী অসুস্থ এবং স্কুলে যেতে চায়নি। আসলে মিডিয়া তাকে অসুস্থ বলে চালিয়ে দিয়েছে।’
আপনিতো ফেসবুকে ওই ছবি দিয়েছেন?
-না আমি ফেসবুকে দেই নাই। লোকজন ফেসবুকে দিয়েছে। কিছু অনলাইনে ছেপেছে।
ছবিতো আপনার মোবাইল ফোনেই তোলা হয়েছে?
-হ্যাঁ । তবে আমি তুলি নাই, আমার লোকজন তুলেছে। ওই শিক্ষিকা ক্লাসে ফাঁকি দিয়ে ক্লাসরুমেই ঘুমাচ্ছিলেন। তার ছবি তুলে একটা ভালো কাজ হয়েছে। সবাইকে সচেতন করার জন্য করা হয়েছে। এখন কোনও কোনও সাংবাদিক প্রশ্ন তুলছেন আমি কেন শিক্ষিকার ঘুমন্ত অবস্থায় ছবি তুললাম। আমিতো তার বেডরুমে গিয়ে ছবি তুলি নাই। সে তার ক্লাসে দায়িত্বরত অবস্থায় ঘুমাচ্ছিল সেখানে গিয়ে ছবি তুলেছি।’
তিনি তো একজন নারী। তার অনুমতি না নিয়ে যে অবস্থায়ই হোক না কেন ছবি তোলা ঠিক হয়েছে?
– নারী তো না, নারীর কোনো হিসাব নাই, সবাই স্যার। রাষ্ট্রীয় আইন করা হয়েছে কোনও ম্যাডাম বলা যাবে না, স্যার। নারী বলে কি সে বেতন কম নেবে?
তার বিরুদ্ধে কি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
– হ্যাঁ তাকে অফিসিয়ালি শোকজ করা হয়েছে। আর আমি মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ে অভিযোগ জানিয়েছি।
তিনি সুস্থ না অসুস্থ তা কি চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছেন?
– এটাতো ওনারা দেখাবেন। আর আমি একশ’ ভাগ শিওর অসুস্থ ছিল না। আমি ছিলাম হেডমাস্টার ছিলেন। ওনার তখন একদম রমরমা অবস্থা। শরীরে অসুস্থতার কোনও ছাপ ছিল না।
তার এই ঘুমন্ত অবস্থার ছবিটি প্রকাশ করায় ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে?
– ভালো খারাপ আমি বলবো না। তবে এটা দেখে বাংলাদেশের সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত যে আমরা যদি এ ধরনের কাজ করি তাহলে জাতির ক্ষতি হবে। এই ধরনের ফাঁকিবাজ শিক্ষকের কারণেই আমাদের দেশের লেখাপড়ার মান খারাপ হচ্ছে।
ইকবাল আহমেদ সাংবাদিকদের ওপর বেশ ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন,‘সাংবাদিকরা নাকি জাতির বিবেক। আমি দেশের শিক্ষার জন্য একটি ভালো কাজ কলাম। উল্টো সাংবাদিকরা আমার বিরুদ্ধে লিখেছে। আমি ভালো কথা যা বলছি তা প্রকাশ না করে হাল্কা কথা প্রকাশ করছে।’
অন্যদিকে, ঘটনার পর স্কুল শিক্ষিকাকে হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
এর আগে ২০ অক্টোবর স্কুলশিক্ষিকা দীপ্তি বিশ্বাস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাত থেকেই অসুস্থ ছিলাম। ওই অবস্থাতেই বুধবার (১৮ অক্টোবর) সকালে স্কুলে যাই। ক্লাস শেষ করে অফিস রুমে বসে ছিলাম। এসময় সহকর্মী আরেক শিক্ষিকার অনুরোধে তার পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণির মডেল টেস্টের ডিউটিতে যাই। কিন্তু অসুস্থতার কারণে পরীক্ষা চলাকালেই সংজ্ঞাহীন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। এই সময়েই ক্লাসরুমে উপস্থিত হন চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ। এসময় পরীক্ষার্থীরা তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানালে তিনি হাত দিয়ে তাদেরকে চুপ থাকতে বলেন। এরপর ঘুমন্ত অবস্থায় আমার ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন।’
The post ‘আমি তো তার বেডরুমে গিয়ে ছবি তুলি নাই’ appeared first on Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা.
from Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা http://ift.tt/2yJTkPx
October 22, 2017 at 11:11PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন