বিশ্বনাথে জাতীয় পার্টির কর্মীসম্মেলন শনিবার, কারা আসছেন নেতৃত্বে

21624138মোঃ আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: দীর্ঘদিন ধরে নেই বিশ্বনাথ উপজেলা জাতীয় পার্টির কমিটি। কমিটি গঠনের লক্ষে আগামীকাল শনিবার জাতীয় পার্টির কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। আর ওই সম্মেলনে জাপার কমিটি ঘোষণা হতে পারে বলে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। তবে পূর্নাঙ্গ কমিটি না হয়ে আহবায়ক কমিটি গঠিত হবে বলে দলীয় সূত্রে জানাগেছে। ইতিমধ্যে প্রতিমন্ত্রী বিশ্বনাথ আগমনকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় পার্টি প্রচার মিছিল করেছে। কর্মীসম্মেলন সফলের লক্ষে সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। উপজেলা সদরের নতুন বাজারস্থ এলাকায় কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কর্মীসম্মেলনে উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটি গঠিত হবে বলে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
কে হচ্ছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক, আর কারা থাকছেন ওই কমিটিতে এ নিয়ে দলের ভিতরে ও বাহিরে চলছে আলোচনা সমালোচনা। নেতৃত্ব পেতে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে জাপার শীর্ষ নেতাদের কাছেও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে সচেষ্ট পদপ্রাপ্তি নেতারা।
দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা জাতীয় পার্টির কমিটি বিহীন অতিবাহিত হলেও কমিটি ঘোষণা না হওয়া হতাশায় ছিলেন জাপা নেতাকর্মীরা। হতাশ হয়ে পড়েছিলেন পদ-প্রত্যাশী নেতারা। এ নিয়ে দলের ভিতর ও বাহিরে চলছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। অবশেষে আগামীকাল শনিবার উপজেলা জাপার কমিটি ঘোষনা হবে এমন খবরে দলীয় নেতাকর্মীর মধ্যে প্রাণচঞ্চলতা ফিরে এসেছে। তবে জাপার কমিটি ঘোষনা হলে কারা আসছে নেতৃত্বে? এনিয়ে চলছে উপজেলা জাপার নেতাকর্মীদের ব্যাপক আলাপ-আলোচনা।
নতুন কমিটির আহবায়ক পদে আলোচনায় রয়েছেন উপজেলা জাপার সাবেক সভাপতি এসএম আরশ আলী বাবলু, সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক সিতাব আলী, যুগ্ম আহবায়ক এমএ রব, মনোহর আলী, বিশ্বনাথ ইউনিয়ন জাপার আহবায়ক জয়নাল আহমদ ও জাপা নেতা সাইদুর রহমান। কমিটির আহবায়ক হতে কেউ কেউ সিনিয়র নেতাদের কাছে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। রাত-দিন রাজপথে কর্মীদের নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন কার্যক্রম। কিন্তু তারপরেও দলকে সংগঠিত করতে তাদের মধ্যে দলের জন্য কে কতটা সক্রিয় ও নিষক্রীয় রয়েছেন এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন সিলেট জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত সদস্য সহল আর রাজী চৌধুরীও। যদিও তিনি ইতিমধ্যে দলের কোন দায়িত্বে ছিলেন না, তবে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে ও দলেও বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই দলকে সু-সংগঠিত করতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত সহল আর রাজী চৌধুরীকে আহবায়কের দায়িত্ব প্রদান করা হতে পারে বলে এমনটাই দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে। তাছাড়া সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির হওয়ায় এবং আগামী নির্বাচনকে সামনের রেখে এই আসনের উপজেলা জাতীয় পার্টির কমিটিগুলোকে গুরুত্বের সাথে দেখছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও।
এদিকে, বিশ্বনাথ উপজেলা জাতীয় পার্টির তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী সহল আল রাজী চৌধুরীকে আহবায়ক করার দাবি জানিয়ে বলেন, দলকে চাঙ্গা করতে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন। জাতীয় পার্টির বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে রাজী চৌধুরী ভূমিকা রেখেছেন। তাই তাকে নেতৃত্ব দিলে বিশ্বনাথে জাতীয় পার্টির আরো সু-সংগঠিত হবে।
অপরদিকে, বিশ্বনাথ ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির আহবায়ক জয়নাল মিয়াকে উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক করার দাবি জানিয়ে অনেক নেতা বলেন, নতুন নেতৃত্বের ফলে উপজেলায় জাতীয় পার্টি আরও সু-সংগঠতি হবে। জয়লান মিয়া জাতীয় পার্টিকে সু-সংগঠতি করতে এলাকায় অগ্রনী ভূমিকা রাখছেন। তাকে দলের আহবায়ক করার দাবি জানান তারা।
দলীয় ও বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, ২০১৫সালের ২৪ মার্চ উপজেলা জাপা নেতা আবু বক্কর সিদ্দিকী কে আহবায়ক ও সিতাব আলীকে যুগ্ম-আহবায়ক করে ১০৫ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গঠনের পর থেকে বিশ্বনাথ জাপা দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব, সিলেট ২ আসনের সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ও সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহবায়ক আবদুল্লাহ সিদ্দিকী মধ্যে দন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক জেলা জাতীয় পার্টির কমিটি গঠনের পর তাদের এই দন্ধ সৃষ্টি হয়। এর ফলে বিশ্বনাথে জাতীয় পার্টি দুটি বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এমপি এহিয়া গ্রুপের নেতৃত্ব দেন জাপা নেতা সিতাব আলী ও আবদুল্লাহ সিদ্দিকীর গ্রুপে নেতৃত্ব দেন আরশ আলী বাবলু। এভাবে চলে উপজেলা জাপার কার্যক্রম। অবশেষে গত বছরের ৪ সেপ্টেবর উপজেলা জাতীয় পার্টির দু’গ্রুপে বিরোধ নিস্পত্তি হয়েছে। ফলে দলীয় গ্রুপিং ভেঙে এক হয়ে যায় জাতীয় পার্টি। ওইদিন উভয় গ্রুপে নেতাদের নিয়ে বৈঠকে করেন জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী। বৈঠকে তিনি নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্ত্বিতে উপজেলা জাতীয় পার্টির উভয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। বর্তমানে জাতীয় পার্টিতে কোনো গ্রুপিং নেই। কিন্তু এরপর পর থেকে জাতীয় পার্টি কমিটি বিহীন হয়ে পড়ে।
এব্যাপারে উপজেলা জাপার সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক সিতার আলী বলেন, দলের কমিটি না থাকায় কিছুটা ঝিমিযে পড়েছেন নেতারা। কমিটি হলে জাপা প্রাণ ফিরে পাবে। তবে আগামীকাল শনিবার জাতীয় পার্টির কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আশাকরি জেলা নেতৃবৃন্দ ত্যাগী নেতাদের দিয়ে কমিটি ঘোষনা করবেন।
উপজেলা জাপার সাবেক সভাপতি এসএম আরশ আলী বাবলু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জাপার রাজনীতি সঙ্গে জড়িত। ইতি মধ্যে উপজেলা জাপার সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। ইতিমধ্যে সম্মেলন সফলের লক্ষে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে।
সিলেটে জেলা পরিষদের সদস্য ও জাপা নেতা সহল আল রাজী চৌধুরী বলেন, ২০০৪ সাল থেকে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি লাঙ্গল প্রতি নিয়ে অংশগ্রহন করি। এরপর জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী হিসেবে জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে বিজয়ী হই। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ ও মহাসচিব জিএম কাদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে আমার আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। আমি যদিও দলের কোন দায়িত্বে নেই, তবুও শুধু বিশ্বনাথই নয়, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে জাতীয় পার্টির মিছিল, মিটিং’সহ বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে কাজ করেছি। আমি দলীয় পদ পদবি পেতে আগ্রহী নই, তবে যদি দলের স্বার্থে আমাকে কোন দায়িত্ব প্রদান করা হয় তাহলে আমি তা পালন করবো।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া বলেন, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতেই কমিটি গঠন করা হবে।



from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2l2MpMa

October 20, 2017 at 12:19PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top