বিদেশে যাওয়ার রেকর্ড আছে কিন্তু নেই ফেরার

কুমিল্লার বার্তা ডেস্ক ● জনশক্তি রপ্তানির হিসাব সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে থাকলেও কারো কাছেই নেই ফিরতি জনশক্তির হিসাব। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী ১৯৭৬-২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ১১ লাখ ৯২ হাজার আটশ ৭৯ জন বিদেশে গিয়েছেন। তবে কতজন এ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে এসেছেন বা বিদেশে কর্মরত আছেন তার কোনো হিসাব সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থার কাছেই নেই।

এ তথ্য না থাকায় একদিকে অর্থনীতিতে প্রবাসী শ্রমিকদের মাথাপিছু অবদান নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে অব্যবহৃত থাকছে দেশে ফেরত আসা শ্রমিকদের অর্জিত দক্ষতাও।

বিএমইটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে যাওয়া, চুক্তির মেয়াদ ও অন্যান্য সূত্রের সহায়তায় ফেরত আসা শ্রমিকদের তথ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা এখনো সফল হয়নি। এক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন পুলিশ, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, বিএমইটি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে এগোতে হবে বলেও মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর যে পরিমাণ জনশক্তি বিদেশে রপ্তানি করা হয় তার হিসাব মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকলেও ফেরতের সংখ্যা নেই। জনশক্তি রপ্তানির সময় মন্ত্রণালয়ের কাছে হিসাব থাকে। তবে কতজন ফেরত আসল বা কর্মরত আছেন তার প্রকৃত হিসাব মন্ত্রণালয়ে রাখার কোনো পদ্ধতি এখনো নেই।

এ ছাড়া প্রতিনিয়ত প্রবাসী শ্রমিকদের লাশ আসছে বাংলাদেশে। অনেকের লাশ বিভিন্ন দেশেই দাফন করা হচ্ছে। তার হিসেবও নেই মন্ত্রণায়নের কাছে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ জন প্রবাসীর লাশ আসছে। ২০১৬ সালে মোট ২ হাজার ৯৮৫ জনের লাশ এসেছে, যা গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ৪২১ জনের এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ৭৫ জন প্রবাসীর লাশ আসে। সব মিলিয়ে ২০১৬ সালে ৩ হাজার ৪৮১ জনের লাশ আসে। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩০৭ জন। আর ২০০৫ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৯৫৮ প্রবাসীর লাশ এসেছে।

বিএমইটি এর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যখন জনশক্তি বিদেশে পাঠানো হয় তখন তারা সরকারের নিয়ম অনুসরণ করে। অর্থাৎ লিখিত কাগজপত্র করে যায়।

এর জন্য যাবার হিসেব থাকে কিন্তু ফিরে আসার সময় সরকারকে কোনো তথ্য দিতে হয় না। আমাদের এখানে এখনো এমন কোনো পদ্ধতি বা নিয়ম চালু হয়নি। সেজন্য ফেরতের হিসাব আমাদের কাছে থাকে না। এ ব্যাপারে জনশক্তি রপ্তানির সরকারি সব ক্ষেত্রগুলো একত্রে কাজ করলে হয়তো সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয় ১৯৭৬ সাল থেকে এবং নারী জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয় ১১৯১ সালে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৬ লাখ ৬২ হাজার চারশ চল্লিশ জন। ২০১৬ সালে নারী জনশক্তি রপ্তানির সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮ জন হলেও এবছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা ৮৮ হাজার তিনশ ৬৫ জন।

সরকারি হিসাব অনুসারে এবছর অক্টোবর পর্যন্ত সৌদি আরবে ৪ লাখ ৬২ হাজার সাতশ ১৩, ইউএইতে ৩ হাজার চারশ ৮২, কুয়েতে ৪২ হাজার ৩১, ওমানে ৭৪ হাজার নয়শ ৪৩।

কাতারে ৭০ হাজার চারশ ৪০, বাহরাইনে ১৮ হাজার চারশ ১০, লেবাননে ৭ হাজার একশ ১৪, জর্ডানে ১৭ হাজার আটশ ১৯, লিবিয়ায় ১, সুদানে ১ হাজার চারশ ৬৩, মালয়েশিয়ায় ৬৬ হাজার তিনশ ৮৬, সিঙ্গাপুরে ৩৪ হাজার দুইশ ৩৩, সাউথ কোরিয়ায় নয়শ ৭, ইউকেতে ৬, ইতালিতে ১, জাপানে ৯৮, ইজিপ্টে ২৬, ব্রুনাইয়ে ৭ হাজার ৮২, মাউরিতিয়াসে ৪ হাজার নয়শ ৮৯, ইরাকে ৩ হাজার চারশ ৮২ এবং অন্যান্য দেশে ৮ হাজার নয়শ ৫৩ জন জনশক্তি হিসেবে বিভিন্ন দেশে গেছেন।

তবে এর বাইরেও গোপনে সরকারের অনুমতি না নিয়েই অনেকেই বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। তবে সেগুলো কোনো হিসেব সরকারের কাছে নেই।

The post বিদেশে যাওয়ার রেকর্ড আছে কিন্তু নেই ফেরার appeared first on Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা.



from Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা http://ift.tt/2gWXzwY

November 02, 2017 at 09:39PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top