নিজস্ব প্রতিবেদক:: যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি করে ‘মৃত্যুকূপে’ পরিণত হওয়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলায় যান চলাচলের সব কটি পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কার্যত ‘বন্দী’ করে টিলার অন্তত ধ্বংসাবশেষ রক্ষার চেষ্টা করছে প্রশাসন। গত ২৩শে জানুয়ারি টিলা কেটে অবৈধভাবে পাথর তুলতে গিয়ে টিলার ভূমিধসে একসঙ্গে ছয়জন পাথরশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। এ ঘটনার পর থেকে টিলায় যান চলাচলের তিনটি পথে বাঁশের বেড়া দিয়ে রেখেছিল প্রশাসন। কিন্তু সেই বেড়া ডিঙিয়ে পাথর পরিবহনের ট্রাক চলাচল করত।
২৩শে জানুয়ারির পর আরও চারটি ভূমিধসের ঘটনা ঘটলে এবার বাঁশের বেড়া তুলে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা পিলার। গত বৃহস্পতিবার থেকে পিলার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। এতে টিলার সঙ্গে সরাসরি পরিবহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। তখন টিলার অন্তত ধ্বংসাবশেষ রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে উপজেলা প্রশাসন।
লালচে ও বাদামি মাটিতে ঢাকা বড় বড় পাথরখণ্ডের এই টিলা একটি ঐতিহ্যবাহী টিলা। কথিত আছে, হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর সফরসঙ্গী শাহ আরেফিন (রহ.) এই টিলায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সেই থেকে নাম হয়েছে শাহ আরেফিন টিলা। ১৩৭ দশমিক ৫০ একর জায়গার এই টিলাভূমি পুরোটা সরকারি খাস খতিয়ানের। ২৩ জানুয়ারি শ্রমিক হতাহতের ঘটনার পরপর সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) তদন্ত করে ‘৪৭ পাথরখেকো’ চিহ্নিত করেন। ২রা ফেব্রুয়ারি ‘৪৭ পাথরখেকো’র তালিকা-সংবলিত তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসনে দাখিল করা হয়। পাথরখেকো সম্পর্কে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে টিলাসহ আশপাশের এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পুরো এলাকা। পাথরখেকোরা প্রভাবশালী। সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনে টিলাকে আর টিলা নয়, ধ্বংসাবশেষ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে টিলার সঙ্গে যাতায়াতের তিনটি রাস্তায় বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়। যাত্রীবাহী যানবাহন ছাড়া ট্রাকসহ অন্যান্য ভারী যান চলাচল নিষেধ করা হয়। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা ডিঙিয়ে বাঁশের বেড়া উপড়ে ফেলে পাথরকারবারিদের যান চলাচল করত। সম্প্রতি আরও এক দফা টিলা এলাকায় ভূমিধসে দুজন শ্রমিক চাপা পড়ার ঘটনা ঘটে। এই দুজন শ্রমিককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করার পর প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে টিলায় যাতায়াতের তিনটি রাস্তায় পাকা পিলার নির্মাণ শুরু হয়। প্রথম পিলার হচ্ছে টিলায় যাতায়াতের নারায়ণপুর-চিকাডহর সড়কের মুখে। দ্বিতীয়টি শাহ আরেফিনবাজার-বনবাড়ী সড়কে এবং তৃতীয়টি পুরান জালিয়ারপাড় সড়কে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল লাইছ চলতি সপ্তাহের মধ্যে পাকা পিলার নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, পাকা পিলার নির্মাণে ওই সব সড়ক দিয়ে পাথরবাহী কোনো যান চলাচল করতে পারবে না। তখন টিলার ওপর যন্ত্রের আর আঁচড় পড়বে না। এভাবে ‘বন্দী’ করে টিলা রক্ষা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, টিলাটি রক্ষায় গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৭টি টাস্কফোর্স অভিযান চালানো হয়েছে। যেটুকু আছে, সেটা প্রশাসনিক চেষ্টায়। এখন অবশিষ্ট অংশ রক্ষায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
টিলা কেটে অবৈধভাবে ঠিক কী পরিমাণ পাথর লুট হয়েছে, এ-সম্পর্কিত কোনো তথ্য প্রশাসনে সংরক্ষিত নেই। তবে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বেলা একটি কমিটির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে। এতে বলা হয়েছে, ৯৬ দশমিক ২৫ একর জায়গার ৭০ ভাগ টিলা কেটে ৬২ লাখ ৮৮ হাজার পাথর লুটপাট হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে বাকি ৩০ ভাগ টিলা কেটে যত্রতত্র পাথর উত্তোলন চলছে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2yV5jLm
November 13, 2017 at 01:04AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন