কুমিল্লার বার্তা ডেস্ক ● হঠাৎ করেই একমাসের ব্যবধানে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। সেপ্টেম্বর মাসে বড় ধরণের পতনের পরে অক্টোবর শেষে আশাব্যঞ্জক রেমিট্যান্স এসেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লেগেছে। সামনের মাসেও আরও ভালো পরিমাণে রেমিট্যান্সের আশা করছেন তারা। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, হুন্ডি ও বিকাশের মাধ্যমে অবৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধে কড়াকড়ি এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ রেমিট্যান্স তথ্য অনুযায়ী, সদস্য শেষ হওয়া অক্টোবর মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৫ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা ৯ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার। এ হিসাবে অক্টোবর মাসে আগের মাসের চেয়ে চেয়ে ৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ২ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা বেশি এসেছে।
অপরদিকে গত বছরের অক্টোবর মাসের চেয়ে এবার ১৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার বেশি এসেছে রেমিট্যান্স।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সময়ে সময়ে হুন্ডি ও অবৈধভাবে টাকা পাঠানো বন্ধ করতে অনেক কাজ করেছে। নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তদারকী বাড়িয়েছে, এর প্রভাবেই রেমিট্যান্স বেড়েছে। আশা করা যায়, আগামীতে প্রবাসী আয় আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। মাস হিসাবে বিগত সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে এটি ছিল সর্বনিম্ন। এর আগের মাস আগস্টে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ১৪১ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, জুলাইয়ে ছিল ১১১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, প্রবাসীরা চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৪৪৫ কোটি এক লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত বছরে রেমিট্যান্স কমতে শুরু করলেও জানুয়ারি মাস থেকে বৃদ্ধির আশা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু তা না বেড়ে একই গতিতে চলতে থেকে মে মাসে কিছুটা বেড়েছিল। পরে আবার কমে যায়। সর্বশেষ আগস্ট মাসেই এ বছরের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে।
অক্টোবর মাসে আগের মাসের চেয়ে কিছুটা বাড়লেও এটি ছিল এবছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এরপর প্রতিবছরই রেমিট্যান্স কমেছে।
প্রসঙ্গত, একটানা গত দুই অর্থবছর ধরে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ কমে গিয়েছে। অথচ প্রবাসে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা কমেনি, উল্টো বেড়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অর্থমন্ত্রণালয় চিন্তিত হয়ে পড়ে। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশ সফর করেন একটি প্রতিনিধি দল।
দেশে ফেরত এসে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় হুন্ডি ও মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি। হুন্ডি রোধে আড়াই হাজারের বেশি বিকাশ এজেন্টের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বন্ধ করে দেয়া অ্যাকউন্ট গুলো দিয়েই হুন্ডি করা হত বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ তথ্য পেয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্স বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রবাসীদের পাঠানোর ফি পরিশোধ করবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো। যদি এটা করা যায়, তাহলে পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলেই আসবে। আর প্রবাসীদের মধ্যে এই পরিমাণ টাকা পাঠানোর সংখ্যাই বেশি ।
কারণ হিসেবে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশে যাওয়া বাংলাদেশি প্রবাসীরা বেশি বেতনে চাকরি পান না অদক্ষতার জন্য। তাদের খরচ বাদ দিয়ে মাস শেষে বেতনের যে অংশটি বাংলাদেশে থাকা পরিবারের কাছে পাঠান তার পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এই পরিমাণ টাকা পাঠানোর সংখ্যাই সিংহভাগ। তাই তাদের টাকা পাঠানোর খরচ যদি ব্যাংক বহন করে তাহলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বাড়বে।
The post হাওয়া লেগেছে প্রবাসী আয়ের পালে appeared first on Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা.
from Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা http://ift.tt/2h3ciKK
November 01, 2017 at 11:01PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন