কলকাতা, ২৭ নভেম্বর- হিন্দু না মুসলিম? না, এ প্রশ্ন কেউ জিজ্ঞাসা করেননি। সকলেই জানতেন, পাড়ার মেয়েটির বিয়ে হচ্ছে না। আর তাই উদ্বেগ সকলেরই। ধর্মের তথাকথিত বিভাজন, আরোপিত বিভেদ সেখানে কখন যেন তাই ভেঙে পড়ে। জেগে থাকে নির্ভেজাল মানবিকতা। মালদার খানপুর গ্রামে বাস শোভারানির। স্বামী গত হয়েছেন। একমাত্র মেয়ে সরস্বতীর বিয়ের ব্যবস্থা কিছুতেই করে উঠতে পারছিলেন না তিনি। অনেক কষ্টে একটি সম্বন্ধ ঠিক হয়। পাত্রপক্ষের চাহিদা মতো টাকা জোগাড় করাও শুরু করেন। কিন্তু মোটে ২০০০ টাকা তিনি সংগ্রহ করতে পারেন। তাতে পণ দেওয়া হল। কিন্তু বিয়ের খরচ জোগাবেন কী করে? মজুর হিসেবে যা আয় তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। মেয়ের বিয়ের আশা একরকম ছেড়েই দিয়েছিলেন শোভারানি। কিন্তু পাড়ার সকলে থাকতে পাড়ারই মেয়ের বিয়ে হবে না! তাই আবার হয় নাকি! এগিয়ে এলেন আবদুল, ইমাদুল, জালালউদ্দিনষ শহিদুলরা। নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান। তাঁরা সকলে মিলে ঠিক করেন, শোভারানির বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য। হতে পারে সরস্বতী অন্য ধর্মের মেয়ে। কিন্তু সে তো তাঁদেরই সন্তানতুল্য। শুধু শোভারানির মেয়ে নয়, এক সিদ্ধান্তেই সরস্বতী হয়ে উঠলেন পাড়ার সকলের মেয়ে। কন্যাদায় তাই গোটা পাড়ারই। তোলা হল চাঁদা। সেই টাকা তুলে দেওয়া হয় শোভারানির হাতে। অবশেষে প্রতিবেশীদের কল্যাণেই স্বামীর ঘর করতে চলেছেন সরস্বতী। বিয়ের আসরেও এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন সকলে। কনেকর্তা হয়ে রহমান নিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন গেটের মুখে। হাত জোড় করে বরপক্ষের লোকেদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছিলেন। সরস্বতীর বাবা বেঁচে থাকলে এ কাজ তিনিই করতেন। কিন্তু সরস্বতী যে তাঁরও মেয়ের মতোই। বাবার দায়িত্ব তিনি ভুলবেন কী করে! ভোলেননি মোতিউর রহমান। ভোলেননি খানপুর গ্রামের কোনও বাসিন্দাই। তাঁরাই যেন মনে করিয়ে দিলেন, হিন্দু-মুসলিম পারস্পরিক সম্প্রীতির ঐতিহ্য আজও বাংলা ভোলেনি। তথ্যসূত্র: সংবাদ প্রতিদিন এআর/২০:৫৫/২৭ নভেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2zJeMGh
November 28, 2017 at 02:59AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top