সুরমা টাইমস ডেস্ক:: বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট ইউনিটের কমিটি বাতিল করা হয়েছে। সাথে সাথে স্থগিত হয়েছে আগামী ৬ই ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনও। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কেন্দ্র থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে এরকম নির্দেশনা এসেছে বলে দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। গতকাল রবিবার বিকেলে সিলেট ইউনিটের কমিটি বাতিল সংক্রান্ত এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মানবতার সেবায় বিশ্বব্যাপী কাজ করছে রেডক্রিসেন্ট। বাংলাদেশে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ইউনিটগুলো নিজ নিজ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। সরকারি বরাদ্দ, দেশি-বিদেশি দানে রেডক্রিসেন্টের কাজের পরিধি বাড়ছে। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট ইউনিটেরও রয়েছে সেবামূলক বেশকিছু কার্যক্রম। সুনামের সাথে সেবা কার্যক্রম শুরু করলেও গত প্রায় নয় বছর ধরে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় সিলেট রেড ক্রিসেন্টের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমেই রুগ্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানের সম্পদের অনিয়মতান্ত্রিক ব্যবহারও চোহে পড়ার মতো।
নগরীর ধোপাদিঘীরপাড়ে রেডক্রিসেন্টের ৭ শতক জমিতে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড করেছেন যুবলীগ কর্মী মাহমুদ আলী। ২০০৯ সালে তিনি রেডক্রিসেন্টের কাছ থেকে দুই বছরের মৌখিক চুক্তিতে জমিটি মাসিক ১২ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। এরপর ৯ বছর ধরে তিনিই আছেন ওই জমির দখলদার। দীর্ঘ সময়ে ভাড়াও বাড়েনি, তিনি আর কোন চুক্তিও করেননি রেডক্রিসেন্টের সাথে। এমনকি গত প্রায় এক বছর ধরে মাাসিক ভাড়ার ওই ১২ হাজার টাকাও দিচ্ছেন না রেডক্রিসেন্টকে। বকেয়া টাকার জন্য তাকে চাপ দিতেও বারণ করে রেখেছেন রেডক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জামিল।
একটিসূত্র জানায়, ওই মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতিমাসে পাওয়া মোটা অংকের টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়া হচ্ছে। তবে আব্দুর রহমান জামিল জানালেন অভিনব তথ্য। উত্তরপূর্বকে তিনি বলেন, ওই জমি কাউকে লিজ দেওয়া হয়নি। হয়তো খালি জায়গা দেখে কেউ গাড়ি রাখতে পারে। যদিও রেডক্রিসেন্ট অফিসসূত্র নিশ্চিত করেছে, গত কয়েক মাস ছাড়া এর আগে মাসে মাসে ১২ হাজার টাকা করে দিয়ে গেছেন ওই মাহমুদ আলী।
গত প্রায় নয় বছর ধরে রেডক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিট চালাচ্ছেন সহ-সভাপতি মনসুজ্জামান চৌধুরী বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জামিল। প্রায় ১০ মাস আগে পদাধিকারবলে এখানে সভাপতির পদ পেয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফুর রহমান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বাবুল-জামিল রেডক্রিসেন্টের ক্ষমতায় বসেন। সেই যে বসেছেন, আর কোন নড়াচড়া নেই। মাঝখানে দুই বার হয়েছে ‘নির্বাচন নির্বাচন খেলা’। ওই দুই নির্বাচনে সহ-সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর কারো ভাগ্যে জুটেনি। তাই দুইবারই বিজীয় হন অপ্রতিদ্বন্দ্বি বাবুল-জামিল জুটি। এখন ফের তারা পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার চেয়ারকে আরো দীর্ঘস্থায়ী করার নানা ফন্দি-ফিকির করছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিকসূত্র। আগামী ৬ই ডিসেম্বর হবে সেই ‘নির্বাচন’। এজন্য ইতিমধ্যে নির্বাচনি তফসিলও ঘোষণা করা হয়েছে।
বাবুল-জামিল গত ৯ বছর দায়িত্বপালনকালে রেডক্রিসেন্ট ইউনিট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নগরীর তোপখানার অফিসে খুব একটা পা মাড়াননি। যদিও ওই অফিসে তাদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা কক্ষ। কিন্তু কক্ষগুলো অব্যবহৃত থেকে কাঁচের জানালায় ধুলো জমেছে। দরজার হাতলে জং ধরেছে। তারা সেখানে না গিয়ে নিয়মিত বসেন মাতৃমঙ্গল হাসপাতালের প্রশাসনিক অফিসে। মাতৃসেবায় নিয়োজিত এই হাসপাতালে পুরুষের প্রবেশ সংরক্ষিত থাকলেও তারা দিনে-রাতে সদলবলে এখানে যাতায়াত করেন। আব্দুর রহমান জামিল দিনের চেয়ে সন্ধ্যার পরেই ব্যবসায়িক-রাজনৈতিক কাজে এই অফিসে অবস্থান করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
গতকাল রোববার রেডক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিট নিয়ে এরকম অনুসন্ধানী খবর আসে ‘উত্তরপূর্ব২৪ডটকম’ পোর্টালে। ধারণা করা হচ্ছে, এতেই নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কেন্দ্রীয় ইউনিট। এরফলে ‘মৌখিক নির্দেশে’ বাতিল করা হয় বর্তমান কমিটি, এবং এতেই স্থগিত হয়ে যায় ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2ABBmwf
November 13, 2017 at 02:57PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন