ময়মনসিংহ, ২৯ ডিসেম্বর- দেখো মা, তোমার মেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরে ফিরেছে! অনেক দিন পরে বাড়ি ফিরে মাকে জড়িয়ে ধরে গলায় ঝোলানো মেডেল দেখিয়ে বলল মেয়ে। গর্বিত মুখ দেখে আড়ালে চোখ মোছেন মা। আর অস্ফুট স্বরে বলেন, আজ যদি তোর বাবা বেঁচে থাকত! মেয়ে বাড়ি ফিরবে..., ছোট এই কথাটি বুকের মাঝে লিখে রেখেছিলেন এনাতো মান্দা। বাড়ির উঠানের গাছের পেয়ারায় পাক ধরে পোকা ধরে গিয়েছে, পাড়া হয়নি। জাম্বুরাগুলোও সুগন্ধি ছড়িয়েছে, তবুও কেউ হাত দিতে পারেনি। বাড়ির ছোট মেয়েটি বাড়ি ফিরবে, সে অপেক্ষায় তুলে রাখা। মেয়ে বাড়ি ফিরেছে, আর শেষ হয়েছে এনাতো মান্দার অপেক্ষার প্রহর। সঙ্গে রেহাই পেয়েছে পচতে থাকা গাছের পেয়ারা ও জাম্বুরাও। ফলগুলোর দিকে তাকালেও বোঝা যায়, ছোট মেয়েটির জন্য কী ভালোবাসাটাই না জমিয়ে রেখেছিলেন এনাতো। তিন মেয়ের মধ্যে ছোটটি মারিয়া। নামটি চেনা চেনা লাগছে, তাই তো? হ্যাঁ, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ দলের অধিনায়ক। যার হাত ধরেই অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। অনেক দিন পরে কলসিন্দুরে মেয়ের পা পড়েছে। আজ মেয়ে চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু ধোবাউড়ার কলসিন্দুর এলাকার পাশের গারো পাহাড় সাক্ষী দেবে আসল চ্যাম্পিয়ন মা এনাতো। মারিয়া অল্প বয়সে তার বাবাকে হারালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহপরিচারিকার কাজ করে মেয়েকে বড় করেছেন। অথচ তখনো তিনি ছিলেন পাঁচ মাসের গর্ভবতী। গর্ভাবস্থায়ও কাজ করতে পিছপা হননি তিনি। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাঁর কোলজুড়ে এসেছে পরিবারের একমাত্র ছেলেটি। আরও পড়ুন: রাশিয়া বিশ্বকাপে টিকিট কিনতে ২৩ লাখ আবেদন! পরিবারে অনেক দুঃখ ছিল; যা অনেকটা কেটেও গেছে। মাটির ঘরের ওপরে টিন লেগেছে। তবু এই সুখের দিনে মেয়েটার জন্যই তাঁর বেদনা, মেয়েটা আজ অনেক বড় খেলোয়াড়। সবাই তাকে চেনে। ওর চোখের সামনে সবাই তার বাবাকে ডাকে। কিন্তু আমার মেয়েটা পারে না। এই দুঃখটা আমার আরও অনেক দিন থাকবে। এনাতো যখন তাঁর সুখ-দুঃখের গল্পটা বলছেন, তখন বাড়ির উঠানে বড়দিনের বিদায়ী সুর। ফুটবলের জন্যই শেষ দুই বড়দিনের সময় বাড়িতে থাকতে পারেনি মারিয়া। অবশেষে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরদিন রোববার উৎসবের রাতে বাড়িতে ফিরেছে মেয়েযা বাড়ির উৎসবকে রাঙিয়ে দিয়েছে বহু গুণ। দুই বড়দিন পর মেয়ে এবার বাড়িতে থাকবে, তা জানাই ছিল মা এনাতোর। তাই বাড়ির ছোট মেয়েটির জন্য পায়েস রান্না হয়েছে, পিঠা তৈরি হয়েছে, চেষ্টা করা হয়েছে তার পছন্দের মাংসও রান্না করতে। ছোট মেয়েটি অনেক দিন পরে বাড়িতে ফিরবে যে! সবকিছু ছাপিয়ে মেয়ের মুখটা দেখাই নাকি ছিল তাঁর বহু তিতিক্ষা, ছয় মাস পরে মেয়ের মুখ দেখলাম। আমার তো আর সয় না। কথাটি বলায় সময় মেয়ের মুখের দিকে আরও একবার তাকিয়ে নিলেন চ্যাম্পিয়ন মেয়ের চ্যাম্পিয়ন মা। ঢাকা থেকে প্রায় ছয় ঘণ্টার জার্নি শেষে কলসিন্দুরে আসা। অতঃপর ক্লান্ত শরীর নিয়ে হেঁটে ছোট একটি নদী পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছা। তখনো জানা ছিল না, অপেক্ষা করছে এক চ্যাম্পিয়ন মায়ের মুখ; যার মুখ দেখে দূর হয়ে যাবে সব অবসাদ, ক্লান্তি। সূত্র: প্রথম আলো এফ/০২:০২/২৯ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2DvAryO
December 29, 2017 at 08:04AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন