কত ঘটনা, হাসি-কান্না, বিষাদ ও উত্তেজনা ছাপিয়ে স্বপ্ন আর দিনবদলের প্রত্যাশা নিয়ে আসছে আরেকটি বছর। অসীমের পানে মহাকালের যাত্রায় একেকটি বছর আসে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে, নতুন প্রেরণা নিয়ে। যে প্রেরণা নিয়ে শুরু হয়েছিল বিদায়ী বছরও। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র; যার যার অবস্থান থেকে চেষ্টা করেছে বিদায় হতে যাওয়া বছরে প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির সম্মিলন ঘটাতে। বাদ ছিল না বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনও। বিশ্বব্যাপী ক্রীড়া শিল্প সম্পর্কে একটি স্বতন্ত্র কথা প্রচলিত আছে, সেটা হল এই অঙ্গন কখনোই নিস্তেজভাবে যায় না। খেলা পাগল ও বিনোদনের জন্য অতৃপ্ত সমর্থকদের জন্য বছরজুড়ে কিছু না কিছু ঘটেই। আগের বছরের মত ২০১৭ সালেও ক্রীড়াঙ্গন ছিল সুখ-দুঃখের ভাগাভাগিতে। ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস ও বক্সিং- প্রত্যেকটি প্রধান খেলাতেই ছিল স্মরণীয় নানা মুহূর্ত। বছর শেষের দরজায় দাঁড়িয়ে চ্যানেল আই অনলাইন ক্রীড়াঙ্গনের সেইসব ঘটনা তুলে ধরছে, যেগুলো তাদের অনুরাগীদের কখনও আনন্দে ভাসিয়েছে বা কখনও ডুবিয়েছে হতাশায়। মাশরাফীর অবসর ক্রীড়াঙ্গনের সুখ-দুঃখের আলোচনায় প্রথমেই চোখ দেয়া যাক বাংলাদেশের দিকে। যেকোনো কিছুর বিদায় মানেই দুঃখের। যদিও তাতে মাঝে মাঝে সুখের ব্যথাও থাকে। সুখ আর দুঃখের এমনই মিলিত ব্যথা দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। জনপ্রিয় খেলাটির অঙ্গনের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাট থেকে এ বছরই বিদায় নিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা নায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। টি-টুয়েন্টি থেকে মাশরাফীর অবসরের গুঞ্জন অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। তবে গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা বিপক্ষে সিরিজের সময়ই ঘোষণাটা দিয়ে দেন তিনি। ৫২ টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলা মাশরাফী ভবিষ্যৎ শুভকামনা জানিয়ে বিদায়টা নেন। তবে আবারও তাকে এই ফরমেটে ফেরানোর চেষ্টা নিয়ে চলছে বলে গুঞ্জন। মাশরাফীর টি-টুয়েন্টিকে বিদায় বলার বছরে এই ফরম্যাটের অধিনায়কত্বে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। টাইগার অলরাউন্ডার বছরের শেষভাবে এসে টেস্টের দলপতিও হয়েছেন। শততম টেস্টে জয় নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচে জয় দিয়ে এ বছরই ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। একশ টেস্ট খেলা দশ দেশের মধ্যে চতুর্থ দেশ হিসেবে শততম ম্যাচে জয়ীদের তালিকায় নাম লেখায় লাল-সবুজরা। শ্রীলঙ্কাকে তাদেরই মাটিতে হাড়িয়ে ইতিহাস গড়ে তামিম-সাকিব-মুশফিকরা। বাংলাদেশ ছাড়াও যে তিনটি দেশ তাদের শততম টেস্টে জয় পেয়েছে তারা- অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান। হাথুরুসিংহের বিদায় বাংলাদেশের ক্রিকেটমহলে আলোচনার অনেকটা জায়গাজুড়ে ছিল কোচের পদ থেকে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বিদায়। টাইগারদের কোচের পদ থেকে তার পদত্যাগের বিষয়টি সামনে আসে বিপিএলের সময়। বিসিবিতে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে গত সাউথ আফ্রিকা সফরের পরই অস্ট্রেলিয়া যেয়ে চুপ বসে থাকেন হাথুরু। বিসিবি তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে শুরুতে নাগাল পায়নি। একই সময় খবর আসতে থাকে, শ্রীলঙ্কায় ম্যাথুজদের দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুত হাথুরু। সেটাই হয়েছে। সেখানে বছর শেষ হতে চললেও অবশ্য নতুন কোচ নিয়োগ করতে পারেনি বাংলাদেশ। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে আপদকালীন কোচের পদ সামলাচ্ছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। কিশোরীদের সাফ জয় পুরুষদের ফুটবলে যখন ধারাবাহিক হতাশাজনক খবর, তখন আশা জাগাচ্ছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ফুটবলের প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় কিশোরীরা। মাঠের খেলার প্রভাব পড়েছে মাঠের বাইরেও। সর্বশেষ ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে লাল-সবুজের মেয়েদের ফুটবল দল ৬ ধাপ উন্নতি করে উঠে এসেছে ১০০তম স্থানে! যা বাংলাদেশের নারী ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ র্যাঙ্কিং। হারানোর শোক ২০১৭ সালটা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য ছিল শোকেরও। ফুটবল-ক্রিকেটে উঠতি-নামী খেলোয়াড়দের হারাতে হয় এ বছরই। মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ে আগস্টে মারা যান স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য আইনুল হক। আর সেপ্টেম্বরে আরেক খ্যাতিমান ফুটবলারকে হারায় বাংলাদেশ। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও গোলকিপার মোতালেব হোসেন মারা যান। ২০১৫ এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে জয়ী বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। সেপ্টেম্বরে মাত্র তিন দিনের জ্বরে মৃত্যুর কাছে হেরে যান কলসিন্দুরের মেয়ে সাবিনাও। তিন ফুটবলারের সঙ্গে এক তরুণ ক্রিকেটারকেও এবছর হারায় বাংলাদেশ। কুমিল্লার তরুণ ক্রিকেটার রবিউল আলম মারা যান সেপ্টেম্বরেই। দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল পেস অলরাউন্ডার রবিউল আলমের। কিডনি ছাড়াও ফুসফুস আর হার্টের জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন ২০১৫ সালে কুমিল্লা জেলা প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আনন্দ ২০১৭ সালে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয় ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এবং ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডকে পূর্ণ সদস্য দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেশ দুটি এখন টেস্ট খেলতে পারবে। যুদ্ধ-বিগ্রহে বিধ্বস্ত আফগানিস্তান ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম চমকের নাম। ২০১৫ বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার পাশাপাশি পরের বছর টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপেও চমকে দিয়েছিল দেশটি। দলটির কাছে হার দেখেছে সেই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজও। আর আয়ারল্যান্ড তো ২০০৭ বিশ্বকাপেই সুপার এইটে খেলেছে। সেই আসরে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে হারিয়ে চমক দেয়া শুরু আইরিশদের। ভারত-পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট মানেই অন্যরকম উত্তাপ। এবছর দুবার ছড়ায় এই উত্তাপ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে পাকিস্তানের সেমিফাইনালে ওঠা নিয়েই ছিল অনিশ্চয়তা। একে একে সাউথ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখা দলটি টুর্নামেন্টের হটফেভারিট ভারতকে উড়িয়ে জিতে নেয় শিরোপাটাও। ইতিহাস গড়েই প্রথমবারের মত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জেতে পাকিস্তান। ফখর জামানের সেঞ্চুরি আর মোহাম্মদ আমির, হাসান আলীদের বোলিং তাণ্ডবে ভারতকে ১৮০ রানে হারিয়ে দেয় আগের তুলনায় তারকা দ্যুতিহীন পাকিস্তান। উত্তরের খোঁজে ব্যথিত ইতালিয়ানরা রোদ আর নরম নেই। রাগের আঁচও কম নেই। তবু ভিজে যাচ্ছিল চোখের পাতা। তবু স্যাঁতস্যাঁতে হচ্ছিল মনের খাতা। চিৎকার করে কাঁদবে? নাকি নিঃশব্দে প্রতিবাদ করবে? তালগোল পাকানো মুহূর্তে এমনই হয়। অনুভূতি পথ হারায়! সেই হারানো পথে তাদের দেখা মাত্র গোটা বিশ্ব সমস্বরে নিশ্চয়ই প্রশ্ন করেছে, ওহে ইতালিবাসী, তোমরা কি পথ হারাইয়াছো? ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে সবচেয়ে আলোচিত মিডিয়া ইন্ট্রো হয়ত ছিল এটাই? গত ৬০ বছরে এমন লজ্জার সামনে পড়তে হয়নি ইতালিকে। ১৯৫৮ সালে সবশেষ দর্শক হয়ে বিশ্বকাপ দেখতে হয়েছিল চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। এবছর প্লে-অফে সুইডেনের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ গোলে হেরে রাশিয়া বিশ্বকাপে যাওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় তাদের। প্রাথমিক শোক সামলে বিপর্যয়ের কারণ খোঁজার দাবি ওঠে জোরেশোরে। ইতালিকে দ্রুত ময়নাতদন্তে বসতে হয়। বিপর্যয়ের ময়নাতদন্তে প্রথম বলি হন কোচ। পরে পদত্যাগ করেন ফুটবল ফেডারেশনের প্রধানও। ইতালিয়ানদের মত হৃদয় ভেঙেছে ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট নেদারল্যান্ডস সমর্থকদেরও। রাশিয়ায় যে কমলা ঝড়ও দেখার উপায় নেই। সুঁতোয় ভাগ্য ঝুলিয়ে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ইতালি ছিটকে যাওয়ার আগে বিশ্বকাপ বাছাইতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল রাশিয়ায় যেতে পারবে তো আর্জেন্টিনা? ইকুয়েডরের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত সুঁতোয় ঝুলে ছিল আর্জেন্টিনার ভাগ্য। ড্র করলেও হয়ত বাদ পড়ে যেতে হবে, জিতলেও সরাসরি নিশ্চিত নয় বিশ্বকাপ এমন কঠিন সমীকরণ ছিল আর্জেন্টিনার শেষ ম্যাচে। ছিল ইকুয়েডরের পর্বতচূড়ায় খেলার কঠিনতম চ্যালেঞ্জও। যেখানে আর্জেন্টিনার সর্বশেষ জয় ছিল ১৬ বছর আগে। আর্জেন্টিনা তখন ১৯৭০ বিশ্বকাপের পর প্রথম বাছাইপর্বে ছিটকে যাওয়ার ফাঁদে। কিন্তু লিওনেল মেসির বীরত্বে সেখান থেকেই বিশ্বকাপের টিকিট কাটে আকাশী-নীল জার্সিধারীরা। ক্ষুদে জাদুকরের হ্যাটট্রিকে ৩-১ গোলে জিতে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে আলবিসেলেস্তারা। বিশ্বকাপ চ্যালেঞ্জে ছোট দেশের বড় আশা সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলছে আইসল্যান্ড। ফুটবল বিশ্বকাপে এটাই তাদের প্রথম অংশগ্রহণ। এর আগে তারা জনসংখ্যার নিরিখে আসরের ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে খেলতে নামে ২০১৬র ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে। ইউরোর নকআউট পর্বে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফুটবল বিশ্বকে শক্তির জানান দেয় আইসল্যান্ড। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে গ্রুপ সেরার মর্যাদা নিয়েই মূলপর্বের টিকিট পায় তারা। নেইমারের ক্লাব পরিবর্তন ২০১৭ সালে ক্রীড়াঙ্গনের আলোচিত ঘটনার মধ্য উপরের দিকে ছিল নেইমারের দলবদলের খবর। যার পুরোটাজুড়ে ছিল নাটক। শেষটাও হয় নাটকের মধ্য দিয়েই। ২২২ মিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ২ হাজার ১৮০ কোটি টাকা) দুনিয়া কাঁপানো ট্রান্সফার ফিতে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা থেকে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনে (পিএসজি) নাম লেখান ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড নেইমার। একজন খেলোয়াড়ের দাম ২ হাজার ১৮০ কোটি টাকা! ফি, বেতন ও বোনাস মিলিয়ে নেইমারের চুক্তিটার অর্থমূল্য ৪৫ কোটি ইউরো বা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা! গত বছর গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের সম্মিলিত খরচ ছিল ৩৩০ কোটি ইউরো। কিন্তু এবার গ্রীষ্মের দলবদল শেষ হওয়ার মাসখানেক আগেই খরচ ৩০০ কোটি ইউরো ছাড়িয়ে যায়! কারণ ওই নেইমার! রোনালদোর সোনার বছর ২০১৭ সালটা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জন্য ছিল সোনায় মোড়ানো। ক্লাব, মাঠ ও ঘর-পরিবার প্রতিটি জায়গায় সম্ভব্য সবই জিতেছেন তিনি। ক্লাবের গত মৌসুমের সম্ভাব্য ছয়টির মধ্য পাঁচটি ট্রফিই জিতেছেন সিআর সেভেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও লা লিগা, স্প্যানিশ সুপারকাপ, উয়েফা সুপারকাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা সবই জিতেছেন। ব্যক্তিগত পুরস্কার জয়েও বছরটাকে রাঙিয়েছেন। চারটি পুরস্কার জিতেছেন পর্তুগিজ তারকা। ফিফার বর্ষসেরা, ব্যালন ডিঅর, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। ব্যক্তিগত প্রাপ্তিতে যোগ হয়েছে তিন সন্তানও। এবছরই জমজ দুই সন্তানসহ তিন সন্তানের বাবা হয়েছেন রোনালদো। আলোচিত তারকাদের নীরব বিদায় চাইলে পেতে পারতেন মেসি কিংবা রোনালদোদের মত তারকাখ্যাতি। কিন্তু ইতালিয়ান ক্লাব এএসকে রোমার প্রেমে এতটাই মজেছিলেন ফ্রান্সিস্কো টট্টি যে, শেষপর্যন্ত প্রিয় ক্লাবের হয়ে ২৪টি বসন্ত পার করে এই ২০১৭ সালেই ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন দ্য কিং অব রোমা। কিন্তু টট্টির মত এত সৌভাগ্য হয়নি কাকার। অনেকটা নীরবে-নিভৃতে দীর্ঘ ১৭ বছরের ফুটবলকে ক্যারিয়ারকে এই বছরই বিদায় জানিয়েছেন ২০০৭ সালের বিশ্বসেরা খেলোয়াড়। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে প্রিয় ক্লাব এসি মিলানের হয়ে নতুন জীবন শুরু করার ইচ্ছা ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলের সদস্যের। অন্যদিকে ক্লাব ফুটবলে খেললেও জাতীয় দলের জার্সি তুলে রেখেছেন ওয়েন রুনি। থ্রি লায়ন্সদের হয়ে ১১৯ ম্যাচে ৫৩ গোল করেছেন ইংলিশদের সাবেক ফরোয়ার্ড। দীর্ঘ দিনের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে বিদায় জানিয়ে চলতি বছরই ফিরেছেন শৈশবের ক্লাব এভারটনে। ক্ষুদে ফুটবল সমর্থকের করুণ বিদায় মাত্র ১৮ মাস বয়সে শরীরে প্রাণঘাতী ক্যান্সার বাসা বাঁধার পর ফুটবল দুনিয়ার সঙ্গে গভীর সখ্য গড়ে উঠেছিল ফুটবল অন্তঃপ্রাণ শিশু সমর্থক ব্র্যাডলি লরির। মাত্র ৬ বছর বয়সে বিশ্বকে কাঁদিয়ে গত জুলাইতে মারা যান ক্ষুদে এই ফুটবল সমর্থক। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল সান্ডারল্যান্ডের সমর্থক লরির চিকিৎসার জন্য উঠেছিল লাখ লাখ পাউন্ড। চিকিৎসকেরা অনেক চেষ্টাও চালিয়েছেন। কিন্তু ক্যান্সার যে প্রাণঘাতী হয়েই বাসা বেঁধেছিল ছোট্ট লরির শরীরে। যার কাছে হারতে হয় শেষঅবধি। লরির জন্য বিশেষ আয়োজন হয়েছিল সান্ডারল্যান্ড-এভারটন ম্যাচে। তার নামে সেদিন স্লোগান তুলে গ্যালারি মুখর করেছিলেন দর্শকরা। সান্ডারল্যান্ডের জার্সি পরে মাঠে নেমে সে একটি গোলও করেছিল লরি, ক্যান্সার ধরা পড়ার পর। পেনাল্টি থেকে পরাস্ত করেছিল এভারটনের গোলকিপার বোগোভিচকে! পুরোটাই ছিল লরির জন্য এক আনন্দ আয়োজন। গতিদানবের মলিন বিদায় বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের ১৬তম আসরের মধ্যমণি ছিলেন বোল্ট। যিনি জেতার নিশ্চয়তা দিয়ে জানিয়ে রেখেছিলেন তাকে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হবে- অপরাজেয়, অপ্রতিরোধ্য বোল্ট। ১০০ মিটারে শেষবারের দৌড়ের পর তিনিই শিরোনামে থাকলেন, তবে ঠিক করে দেয়া শিরোনামটা লেখার মত পরিস্থিতি এনে দিতে পারলেন না সর্বকালের সেরা এই গতিমায়েস্ত্র। পেশাদার ক্যারিয়ারে গত নয় বছরে প্রথমবার কোনও দৌড়ে তৃতীয় হয়ে শেষ করেন বোল্ট। চোটের কবলে পড়েন টাচ লাইনের আগেই। এরপরও গ্যালারি থেকে তার নামে গর্জন ঢেউ উঠে। অলিম্পিকের ৮ সোনা কিংবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ১১ সোনার হিসেব তখন তুচ্ছ! বিজয়ী গ্যাটলিনও হাঁটু গেড়ে বিদায়ী সম্মাননা জানান বোল্টকে। আর আক্ষেপ না ঝরিয়ে বোল্ট বলে যান, আমি দুঃখিত! জয় দিয়ে শেষ করতে পারলাম না। সমর্থনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছেন। অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা ছিল এই পথ চলা। শীতকালীন অলিম্পিকে নিষিদ্ধ রাশিয়া ২০১৮ সাউথ কোরিয়া শীতকালীন অলিম্পিক থেকে নিষিদ্ধ করা হয় রাশিয়াকে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ডোপিংয়ের অভিযোগে দেশটিকে নিষিদ্ধ করে ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)। সংস্থাটির চোখে যা বিরামহীন কুকর্মের যোগ্য শাস্তি। কেবল মাত্র রাশিয়া নয়, দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ভিতালী মুটকো এবং ক্রীড়া-প্রতিমন্ত্রী ইউরি নাগোরিংখকেও অলিম্পিকের সবরকম আসর থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে আইওসি। টেনিসের উত্থান-পতন টেনিস ভক্তদের জন্য পিলে চমকানোর মত ছিল ২০১৭ একটি ঘটনা। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তালিকায় ১১৭ নম্বরে থাকা ডেনিস ইস্টোমিনের কাছে দ্বিতীয় রাউন্ডেই হেরে গিয়েছিলেন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ও শীর্ষ বাছাই নোভাক জোকোভিচ! ৬ বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চ্যাম্পিয়ন জোকোভিচ ৪ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট লড়াই করেন। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি! জোকোভিচের জন্য দুঃখ হলেও টেনিস ভক্তদের সুখের বার্তা দেন গ্লামার গার্ল মারিয়া শারাপোভা। নিষিদ্ধ ড্রাগ মেলডনিয়াম ব্যবহারের অভিযোগে ১৫ মাস নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে অক্টোবরে আবার কোর্টে ফেরেন রুশ সুন্দরী। এছাড়া ফেদেরার পাঁচ বছর এবং নাদাল তিন বছরের খরা কাটিয়ে আবার গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতেন ২০১৭তেই। শিরোনামের ছিল টেনিসের কৃষ্ণ সুন্দরী সেরেনা উইলিয়ামসের মা হওয়ার খবরও। শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বক্সিং ম্যাচ বক্সিং দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লড়াইটা হয় ২০১৭তেই, ২৫ আগস্ট। বক্সার ফ্লয়েড মেওয়েদার বনাম কিক-বক্সার কোনোর ম্যাকগ্রেগরের মধ্যে। শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বক্সিং ম্যাচের খেতাব পাওয়া ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে মেওয়েদার পকেটে পুরেছেন ৪০ কোটি ডলার। প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে হারে স্বাদ না পাওয়া এই বক্সার তার ৫০তম জয় তুলে নিয়ে শেষ করেছেন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। অপরদিকে আইরিশ কিক-বক্সার কনোর ম্যাকগ্রেগর পেয়েছেন ৩.৪ কোটি ডলার। নিজ অঙ্গনে খুবই জনপ্রিয় এ আইরিশ কিক-বক্সার। যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের টি-মোবাইল এরিনার মুখোমুখি হন বিশ্বখ্যাত দুই চ্যাম্পিয়ন। শুধু তাই নয়, ম্যাচটি ঘিরে বাজি ধরা হয়েছিল ৬-৮ কোটি ডলারের। সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন এফ/১২:৫৫/২৯ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2CkV01z
December 29, 2017 at 07:09AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন