নিজস্ব প্রতিনিধি:: চায়ের রাজধানী নামে খ্যাত মৌলভীবাজারে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা-নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
আগামীকাল শুক্রবার (৮ই ডিসেম্বর) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এই নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন বলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ও টি প্লান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিপিটিএবি) নিশ্চিত করেছে।
এ নিয়ে চা ব্যবসায়ী, চা বাগান মালিক ও চা সংশ্লিষ্টদের মাঝে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, নিলাম কেন্দ্রটি চালু হলে চট্টগ্রামে চা-পাতা পাঠানোর পরিবহন খরচ কমবে। সাশ্রয় হবে চা পাতা পাঠানো বাবদ পরিবহন জ্বালানির। আর এ জন্য ব্যয় কমবে। ব্যয় কমলে কম দামে চা-পাতা পাবেন ভোক্তারা।
দেশের সিংহভাগ চা সিলেটে উৎপাদন হলেও দেশের একমাত্র চা নিলাম কেন্দ্র চট্টগ্রামে। বাংলাদেশ চা বোর্ড ও খাত সংশ্লিষ্টদের হিসেব মতে দেশের ১৬২টি বাগানের মধ্যে ৯৩টি চা বাগান মৌলভীবাজার অঞ্চলে অবস্থিত। গত বছর দেশে সর্বোচ্চ ৮৫.০৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। দেশে গড়ে ৭ কোটি কেজি উৎপাদিত চায়ের মধ্যে সিলেটেই উৎপাদন হয় ৬ কোটি কেজি চা।
আবার সিলেটে উৎপাদিত এই চায়ের ৭৫ ভাগই উৎপাদিত হয় মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে। সিলেটে উৎপাদিত চা নিলামের জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে হয়। এজন্য পরিবহন ব্যয়সহ অন্যান্য খরচের জন্য বেড়ে যায় চায়ের দাম। যার কারণে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কমে যায়। এজন্য মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের দাবি তুলেন সংশ্লিষ্টরা।
এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ২০১১ সালে ’শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্র বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়। সেই সংগঠন সিলেট বিভাগের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। ২০১২ সালের ২৯শে ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌলভীবাজার সফরকালে শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা- নিলাম কেন্দ্রে স্থাপনের ঘোষণা দেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে নিলাম কাজ পরিচালনার জন্য ’টি প্লান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (টিপিটিএবি) নামে একটি কমিটি আত্মপ্রকাশ করে এবং এই কমিটি নিবন্ধনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়।
সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৪শে নভেম্বর শ্রীমঙ্গলে টি হেভেন রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন এবং টি প্লান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিপিটিএবি) আয়োজিত সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক টিপিটিএবির নিবন্ধনপত্র হস্তান্তর করা হয়।
চা ব্যবসায়ীরা জানান, শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র হলে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। ব্যবসায়ী ও চা বাগান মালিকরাও লাভবান হবেন। চায়ের গুনগত মানও ঠিক থাকবে। এখান থেকে চট্টগ্রাম চা পাতা পৌঁছাতে প্রতি ট্রাকে যে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয় সেটি আর লাগবেনা।
শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চা ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন বলেন, চা নিলাম কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আমরা শ্রীমঙ্গল শহরকে আগামী এক মাসের মধ্যে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছি। আমাদের একটি ভাড়া করা টি অকশন সেন্টার আছে যেখানে ২০০ ব্যবসায়ী বসতে পারবেন। ৩টি ওয়ার হাউজ বিদ্যমান আছে। আরো অনেক ব্যবসায়ী ওয়ার হাউজ করার কাজ হাতে নিয়েছেন।
টি প্লান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিপিটিএবি) সদস্য সচিব জহর তরফদার বলেন, শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপন হলে দেশে পাঁচ মিলিয়ন কেজি চা পাতা কম লাগবে। কারণ চট্টগ্রামে চা পাতা নিয়ে ওয়ার হাউজে রেখে আবার এটিকে নিলাম করে বাংলাদেশে পৌছাতে যে সময়টুকু ব্যয় হয় তার কারণে চায়ের লিকার কমে যায়। তখন বেশি পাতা দিয়ে লিকার করতে হয় এটি আর হবেনা। দ্বিতীয়ত চট্টগ্রামে চা পাতা নিয়ে গিয়ে নিলাম করে সারা দেশে পৌছাতে যে পরিবহন খরচ ব্যয় হয়- আমরা হিসেবে করে দেখেছি প্রায় দুই’শ কোটি টাকার পরিবহন জ্বালানী সাশ্রয় হবে।
উল্লেখ্য, আগামীকাল ৮ই ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি। উপস্থিত থাকবেন উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি ও পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসতিয়াক আহমদ। এছাড়া ঐদিন সকালে শ্রীমঙ্গলের ইছবপুরে নির্মিত রাবার কাট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টেরও শুভ উদ্বোধন ও গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্টে সকাল ৯টায় ২৬ তম আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলন এবং গাইনী ও অবস সোসাইটি অব বাংলাদেশের ৪৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন অর্থমন্ত্রী।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2AYl8RJ
December 07, 2017 at 09:53PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন