সুরমা টাইমস ডেস্ক:: ভেঙ্গে গেলো ২০ দলীয় জোটের আরও একটি শরিক দল জমিয়তে ইসলাম বাংলাদেশ। শনিবার সকালে দলটির নির্বাহী সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি ওয়াক্কাছের নির্বাহী সদস্যপদ স্থগিত করে এ ভাঙনের সূচনা হয়েছে। এদিন দলের একটি অংশ কার্যনির্বাহী বৈঠক ডেকে মুফতি ওয়াক্কাছের সদস্যপদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে, মুফতি ওয়াক্কাছ এ মাসের মধ্যেই পাল্টা সম্মেলন আয়োজন করে নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘যারা সদস্যপদ স্থগিত করেছেন, তাদের এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক, অবৈধ। তারা অনধিকার চর্চা করেছেন। আমরাও পাল্টা সম্মেলন করব। আমাদের অবস্থান তুলে ধরব।’
জানতে চাইলে জমিয়তের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সভায় সর্বসম্মতিক্রমে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়ে সহ-সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাছের দলীয় নির্বাহী সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। একইসঙ্গে কেন তাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় জমিয়তের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা দেশব্যাপী সফরের সিদ্ধান্ত নেন।’
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মুফতি ওয়াক্কাছ বলেন, ‘তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা অবৈধ। আমরা এ মাসের মধ্যেই সম্মেলন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব। নতুন যারা আমদানি হয়েছেন, তাদের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।’
উল্লেখ্য, জমিয়তের কোনও-কোনও নেতার অভিযোগ, খেলাফত মজলিস ছেড়ে যাওয়ার আবদুর রব ইউসূফী ও খেলাফতে ইসলামী ছেড়ে যাওয়া জুনায়েদ আল হাবিবের কারণেই জমিয়তে ভাঙন তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে আব্দুল মোমিন ও নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে একটি অংশ ইসলামী ঐক্যজোটের দিকে যেতে পারে। আর মুফতি ওয়াক্কাছের অংশটি বিএনপি-জোটের সঙ্গেই থেকে যাবে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ইউসূফী ও জুনায়েদ আল হাবিবকে অন্তত কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে ওয়াক্কাছ অংশের নেতা মাওলানা অলিউল্লাহ আরমান বলেন, ‘বিএনপি-জোটের সঙ্গে মুফতি ওয়াক্কাছ ছিলেন, থাকবেন, আগামী দিনেও থাকবেন ইনশাল্লাহ।’
এদিকে, জমিয়তে নির্বাহী সভাপতি মুফতি ওয়াক্কাছের সদস্য পদ স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বৈঠকে বসেছে জমিয়তের আরেকটি অংশ। মুফতি ওয়াক্কাছ যশোর থেকে বিমানে ঢাকায় নেমে সরাসরি এ বৈঠকে যোগ দেবেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনের ১১৬/২ ঠিকানায় জমিয়তের বাকি নেতারা অবস্থান নিয়েছেন।
এই অংশের অন্যতম নেতা মাওলানা অলিউল্লাহ আরমান বলেন, পল্টনে তাদের সঙ্গে আছেন জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা মুনসুরুল হাসান রায়পুরী, আবদুর রহিম ইসলামাবাদী, অধ্যাপক তৈয়্যবুর রহমান নিজামী, মুফতি গোলাম রহমান রয়েছেন। এছাড়া যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দীন ইকরাম, মুফতি শেখ মুজিবুর রহমান, সহকারী মহাসচিব মুফতি আরিফ বিল্লাহ, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি রেজাউল করিম রয়েছেন।
অলিউল্লাহ আরমান জানান, ‘শনিবার সন্ধ্যায় তারা বৈঠকে বসেছেন। মুফতি ওয়াক্কাছ যশোর থেকে এসে বৈঠকে যোগ দিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।’ এক্ষেত্রে এ মাসেই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানান মাওলানা অলিউল্লাহ আরমান।
এর আগে আজ শনিবার সকালে পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় জমিয়তের (মোমিন-কাসেমী) অংশের কার্যনিবাহী কমিটির বৈঠক। ওই বৈঠকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দলের প্রস্তুতি এবং রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
এই অংশের প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবেদীন জানান, সকালের বৈঠকে জমিয়তের সভাপতি আব্দুল মোমিন শায়খে ইমাম বাড়ী’র সভাপতিত্বে মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী, সহসভাপতি মাওলানা জহিরুল হক ভূঁইয়া, মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব মওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজিজ, মাওলানা হাফেজ নাজমুল হাসান, মাওলানা মুহাম্মদ উল্লাহ জামী, সহকারী মহাসচিব মুফতি মাসুদুল করীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে (মোমিন-কাসেমী) অংশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন দুই ভাগ হবে কিনা, সেটা তো বলতে পারবো না।’
তবে মোমিন-কাসেমী অংশ বিএনপি জোটে থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে আফেন্দী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তো জোটে আছি। আগামী দিনে কী হবে, আল্লাহই তা ভালো জানেন।’
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2AJqeyZ
December 09, 2017 at 10:13PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন