নিজস্ব প্রতিনিধি::
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগরে নিহত প্রবাসীর স্ত্রী ও তার দু’সন্তানের লাশ বাবার বাড়ি কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের মনসুরগঞ্জ গ্রামের সার্বজনিন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পাশাপাশি ৩টি কবর। রাস্তার পাশ দিয়ে যেতে যেতে পথচারিরাও কবরগুলো দেখে বিষয়টি জানতে উদগ্রিব হন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটির আশয়-বিষয় জানতে নিহত মাজেদার বাবার বাড়ি ও স্বামীর বাড়িতে দুরদুরান্তের লোকজন ভিড় করছেন। তবে বাবার বাড়িতে লোকজন থাকলেও স্বামীর বাড়ি জনশূন্য থাকায় আগন্তুকরা আসল ঘটনা না জেনেই তালা দেয়া ঘরদোয়ার দেখেই ফিরে যাচ্ছেন।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার ২১শে ডিসেম্বর সকালে নিহত গৃহবধু মাজেদা বেগমের বাবার বাড়ি নাসিরপুর (উত্তর সাদিপুর) গ্রামে গেলে বাড়ির আঙিনায় নারী পুরুষের ভিড় দেখা যায়। বুধবার মৃত্যুর খবর পেয়ে আসা আত্মীয় স্বজনরা ছিলেন এবং আশপাশের লোকজন আসছেন সত্যিকারের ঘটনা জানতে।
নিহত গৃহবধু মাজেদা বেগমের ছোট বোন সানজিদা বেগম, চাচাতো ভাই ইমরান, ফুফুতো ভাই উসমান জানান, বিয়ের পর থেকে মাজেদার সংসারে অশান্তি লেগেই ছিলো। তারপরও সবকিছু সহ্য করে স্বামীর সংসার আকড়ে পড়ে ছিলেন দুটি সন্তানের মুখ পানে চেয়ে। কিন্তু দুটি সন্তানসহ কোন মা এভাবে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারে না। পরিকল্পিতভাবেই মাজেদা বেগমকে হত্যা করা হয়েছে। কেননা মাজেদার মৃত্যুর পর তার শ্বশুড় বাড়ির কোন লোক ফোনে মৃত্যুর খবরটি পর্যন্ত জানায়নি। এতে তাদের সন্দেহ হচ্ছে।
চাচাতো ভাই ইমরান, ফুফুতো ভাই উসমান আরও জানান, তারা মাজেদার বাড়িতে গিয়ে দেখেছে পুলিশের উপস্থিতিতে লাশ নিচে নামানো আছে। কিন্তু নিহত মাজেদার শ্বশুড় বাড়ির লোকজন ৩টি মানুষ কিভাবে মারা গেলো, তাও বলেনি। পুলিশ লাশের ময়না তদন্ত শেষে কুলাউড়া বড়লেখা সড়কের পুষাইনগর বাজারে লাশ হস্তান্তর করে। কিন্তু লাশ দাফনকালে কিংবা দাফনের পরেও নিহত মাজেদা বেগমের শ্বশুড়বাড়ির কোন লোক কিংবা কাতার থেকে তার স্বামী আকামত আলীও ফোন দিয়ে কোন খোঁজ খবর নেয়নি।
নিহত প্রবাসীর স্ত্রী মাজেদা বেগমের মা মারা গেছেন ৩ বছর আগে। বাবা সোহাগ মিয়া দুবাই প্রবাসী। পরিবারে সৎ মা আর ছোট বোন সানজিদা বেগম। মামা সেলু মিয়া জানান, গত মঙ্গলবার রাতে নিহত মাজেদা বেগমের বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে বাড়ির কোন পুরুষ মানুষকে দেখতে পাননি। ৩ চাচা শ্বশুড়, সৎ দেবর সবাই ছিলেন পলাতক। ফলে তাদের সন্দেহ আরও প্রকট হয়েছে। মুলত চাচা শ্বশুড় শরাফত আলী এই ঘটনার মুলহোতা। আগে মাজেদা বেগমের নামে তার স্বামী বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতো। কিন্তু চাচা শ্বশুড় শরাফত আলীর চক্রান্তের কারণে মাজেদা বেগমের কাছে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন আকামত আলী। তাছাড়া ছোট ছেলে ফারুক আহমদের জন্মের পর গত ৩ বছর থেকে দেশেও আসেননি আকামত আলী।
এদিকে কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু ইউছুফ জানান, গত বুধবারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা ৩ চাচি শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। মামলা দেয়ার জন্য নিহত প্রবাসীর স্ত্রী মাজেদা বেগমের বাবার বাড়ির লোকজনকে খবর দেয়া হয়েছে। পরিবারের লোকজন অভিযোগ দিলে নিয়মিত মামলা হবে।
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সহিদুর রহমান জানান, দুই সন্তানসহ মায়ের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে সন্দেহজনক অনেক ঘটনাকে সামনে রেখে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। নিহত মাজেদার মামা সেলু মিয়া গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলা দিতে থানায় আসবেন বলে জানিয়েছেন।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2CXVLgo
December 23, 2017 at 12:12AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন