কুয়ালালামপুর, ১৭ ডিসেম্বর- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী সোহেল আহমেদ (ছদ্মনাম) গত ৫ ডিসেম্বর পরিবারসহ ছুটি কাটাতে রওয়ানা হন মালয়েশিয়া। বেসরকারি এক এয়ারলাইন্সে মধ্য রাতে পৌছেন কুয়ালালামপুর আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে। বেশ খুশি মনে প্লেন থেকে নামেন। কিন্তু এয়ারপোর্টে নামতেই দেখেন ফ্লাইটে আসা সকল যাত্রীর পাসপোর্ট কেড়ে নিচ্ছেন দুজন ইমিগ্রেশন অফিসার। এই ভিড় পেরিয়ে ৪ বছরের সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চান সোহেল। বাধ সাধেন ইমিগ্রেশন অফিসাররা। ইমিগ্রেশন কাউন্টারের আগেই কেন পাসপোর্ট নিচ্ছেন জানতে চাইলে ধমক দিয়ে তাকে লাইনে দাঁড়াতে বলেন। সোহেল বলেন, নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল। ঠিক যেন অপরাধী ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদেরকে লাইন ধরে হাঁটতে বলেন এবং একটু পর পর ধমক দিয়ে লাইন ভাঙ্গতে নিষেধ করতে থাকেন। আমাদের ইমিগ্রেশন ডেস্কে না নিয়ে অফিসের সামনে নিয়ে লাইন ধরানো হয়। এরও প্রায় ১ ঘণ্টা পর একজন একজন করে ভেতর থেকে ডাকা হতে থাকে। এর মধ্যেই কয়েকজন ইমিগ্রেশন পুলিশ এসে ধমক দিয়ে ফ্লোরেই বসতে বলেন। যেন চোরদের ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষ হিসেবে গণ্য করছিল না আমাদের। আমাদের ডাক পড়লে রিটার্ন টিকিট চেক করে, হোটেল বুকিং আর ডলার চেক করে মালয়েশিয়ায় ঢোকার অনুমতি মেলে। আমার ছোট সন্তান ক্ষুধার জ্বালায় কান্না শুরু করেছিল। এই তো গেলো সোহেল আহমেদের কথা। যাকে ইমিগ্রেশন ছেড়ে দেয়। আরেকজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রুহুল আমিনও (ছদ্মনাম) গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। তাকে কিন্তু ইমিগ্রেশন অফিস থেকে ছাড়া হলো না। সব মিলিয়ে ওই ফ্লাইটের আরো ৭ বা ৮ জনের সঙ্গে তাকেও নিয়ে যাওয়া হলো অন্য একটি রুমে। বলা হলো সেখানে অপেক্ষা করতে। রুহুল বলেন, ওই রুমে বেশিরভাগই বাংলাদেশি। কেউ ফ্লোরে বসে আছেন, কেউ চেয়ারে। সারা রাতের ভ্রমণ আর ইমিগ্রেশন অফিসের জেরায় যখন শরীর ক্লান্ত ততক্ষণে বোঝা হয়ে গেছে আমাকে আর মালয়েশিয়া ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। হোটেল বুকিং, রিটার্ন টিকিট আর ৪০০ ডলার দেখিয়েও রক্ষা হলো না। বরং ওই ডলারে দৃষ্টি পড়লো ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কৃষ্ণর। রুহুল বলেন, আমাদের বলা হলো একশ ডলার করে দিতে। কারণ আমাদের রিটার্ন ফ্লাইট ঠিক করে দেয়া হবে। একজন বললেন, আমাদের তো রিটার্ন টিকিট করাই আছে। এটা বলতেই তাকে বুট দিয়ে লাথি মারেন এক ইমিগ্রেশন পুলিশ। ভয় পেয়ে সবাই একশ ডলার করে দেন। একই সঙ্গে ওই রুমে সবারই মোবাইল নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, এরপর এসে বলা হয় তোমাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। আরো দুইশ ডলার করে দিতে হবে। যারা দিতে পারছিলেন না, তাদেরকে কয়েকজন মিলে মাটিতে শুইয়ে লাথি ঘুষি দিতে থাকে। পকেট থেকে জোর করে যা টাকা আছে সব ছিনিয়ে নেয়া হয়। রুহুল তার অভিজ্ঞতার বর্ণনায় আরো বলেন, একজন যাত্রীকে এমনভাবে মারা হচ্ছিল যে তিনি কাঁদতে শুরু করেন। বারবার হাত জোড় করে বলতে থাকেন, আমি ঘুরতে এসেছি। আমাকে ঢুকতে না দিলে পাঠিয়ে দাও। আমি বাংলাদেশে একটি মর্যাদাপূর্ণ চাকরি করি। আমি এদেশে থাকতে আসিনি। কিন্তু নিষ্ঠুর ইমিগ্রেশন পুলিশদের মনে দয়া হয় নি। তারা মেরেই যাচ্ছিলেন। অমানবিকতা গত দুই সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় ভ্রমণ করা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি যাত্রীকে ইমিগ্রেশন অফিসে পাঠানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে নারী, বয়স্ক, শিশু বা অক্ষম ব্যক্তি কিছুই মানা হচ্ছে না। এমনকি হুইল চেয়ারে বসা যাত্রীদেরও ডেস্ক থেকে ইমিগ্রেশন অফিসে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সেখানে সন্মান দূরে থাক, দয়ারও কোন লেশ নেই। ডলার ও মোবাইল সেট কেড়ে নেয়া ফেরত আসা যাত্রী রুহুল বলেন, যাত্রীদের কাছে ডলার চাওয়া হয়। না দিলে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বেধড়ক পিটিয়ে পকেট হাতিয়ে ডলার বা রিঙ্গিত যাই থাকুক কেড়ে নেয়া হয়। এছাড়াও সবার মোবাইল সেট রেখে দেয়া হয়। কিন্তু দামি মোবাইলগুলো আর ফেরত দেওয়া হয়নি। যাত্রীরা বলেন, সব তথ্য দিয়েই আমরা ট্যুরিস্ট ভিসা নেই। এরপরও যদি ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠায় সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু বেধড়ক মারা আর দামি জিনিসপত্র লুটে নেয়া অসভ্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ট্যুরিস্ট ভিসার প্রকার স্টিকার ছাড়াও বর্তমানে ই-ভিসা দিচ্ছে ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ান হাইকমিশন। আবার এজেন্ট ছাড়া সরাসরি স্টিকার ভিসার আবেদন করা যায় না। যাতে ১০ দিনের মত সময় চলে যায়। খরচ হয় ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। আবার ই-ভিসা তাড়াতাড়ি পাওয়া গেলেও এখনো তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। ঢাকা এবং কুয়ালালামপুরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের অনেকেই এই ভিসার বিষয়ে অজ্ঞ। এতে খরচ হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ টাকা। ট্যুরিস্ট ভিসা বা এই সোস্যাল ভিজিট ভিসার মেয়াদ থাকে তিন মাস। পূর্বে তিন মাসের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি দেয়া হলেও এখন সিঙ্গেল এন্ট্রি দেয়া হচ্ছে। আর একবার প্রবেশ করলে পুনরায় অনুমতি না নিয়ে এক মাসের বেশি থাকাও যাবে না। ভিসা নিতে যা যা প্রয়োজন যে পদ্ধতিতেই ভিসা করুক না কেন পেশা ভেদে ট্রেড লাইসেন্স, ছুটির অনুমতিপত্র ছাড়াও ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন হয়। ব্যাংক স্টেটমেন্টে কমপক্ষে ১ হাজার ডলার থাকতে হচ্ছে। এছাড়াও ভিসার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা বার্থ সার্টিফিকেট, ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট, দুই কপি নির্দিষ্ট আকারের পাসপোর্ট সাইজের ছবি, হোটেল বুকিং, রিটার্ন টিকেট জমা দিলে ভিসার অনুমতি মেলে। কেন এই নির্যাতন! ফেরত আসা যাত্রীরা বলেন, ইমিগ্রেশন পুলিশ বলেছে, বাংলাদেশ থেকে নাকি সব মানুষ পাচার হয়ে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট ভিসায়। তবে তারা ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করে দিচ্ছে না কেন! যতদিন সেখানে ওয়ার্ক ভিসায় মানুষ যাচ্ছে। এছাড়াও সন্দেহ হলে ফিরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এভাবে নির্যাতন করার অধিকার তাদের নেই। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাই কমিশন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা। আর/১৭:১৪/১৭ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2CwQwnw
December 17, 2017 at 11:35PM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
ফিলাডেলফিয়ার রাজনীতিতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জয়জয়কার
07 Oct 20200টিপেনসিলভানিয়া, ৭ অক্টোবর- যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার সনদ যে নগরীতে গৃহীত হয়েছিল, সেই ফিলাডেলফিয়ার রাজন...আরও পড়ুন »
দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসী হামলার গোলাপগঞ্জের যুবক নিহত
05 Oct 20200টিকেপটাউন, ০৫ অক্টোবর- দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় সিলেটের গোলাপগঞ্জের যুবক জাকির হোসেন (৩৫) ন...আরও পড়ুন »
নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হট্টগোল
03 Oct 20200টিনিউইয়র্ক, ০৩ অক্টোবর- যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের সমাবেশে আবারও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। বাংল...আরও পড়ুন »
নিউইয়র্কে গাড়ির ধাক্কায় বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু
03 Oct 20200টিনিউইয়র্ক, ০৩ অক্টোবর-যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জেরিকোর লং আইল্যান্ড এক্সপ্রেসওয়েতে হেঁটে যাওয়ার সম...আরও পড়ুন »
জার্মানিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর শতাধিক বাড়ি
02 Oct 20200টিবার্লিন, ০২ অক্টোবর- নিজের জমানো টাকায় কিশোর বয়স থেকে ব্যবসা শুরু করে জার্মানিতে এখন শতাধিক বাড়ির ম...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.