আসাম, ০৪ জানুয়ারি- নাগরিক নিবন্ধন নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই নাগরিকত্বের সন্দেহজনক (ডি-ভোটার) তালিকায় থাকা প্রায় ২০ হাজার মানুষকে এরইমধ্যে বিদেশি ঘোষণা করেছে আসাম। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত রাজ্যের ফরেনার ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত বিভিন্ন রায়ে সন্দেহজনক ওই নাগরিকেরা বিদেশি হিসেবে শনাক্ত হন। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজুকে উদ্ধৃত করে উত্তর-প্রদেশভিত্তিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিন এ খবর জানিয়েছে। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকার প্রথম খসড়া প্রকাশ করে আসামের রাজ্য সরকার। প্রকাশিত খসড়া তালিকায় স্থান হয়নি প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ বাসিন্দার। যাচাই বাছাই শেষে তাদের নাম পরবর্তী ধাপের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। এরইমধ্যে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) লোকসভায় এক প্রশ্নের জবাবে কিরেন রিজিজু জানান, ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ১৯,৬১২ জন সন্দেহজনক ভোটারকে বিদেশি ঘোষণা করেছে। আসামের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালের সংশোধিত ভোটার তালিকায় আসামের ৩ লাখ বাসিন্দা সন্দেহজনক নাগরিক কিংবা ডি-ভোটার হিসেবে চিহ্নিত হন। যাচাই-বাছাইয়ের সময় ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারা বাসিন্দাদেরই ডি ভোটার হিসেবে শনাক্ত করা হয়। ২০১১ সালে ডি ভোটারদেরকে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল অর্ডার ১৯৬৪ এর আওতায় স্থাপিত ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচারের আওতায় স্থানান্তরের আদেশ দেয় গৌহাটি হাইকোর্ট। এরপর থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় সন্দেহজনক নাগরিকদের মধ্যে থেকে কাউকে বিদেশি হিসেবে শনাক্ত করার এখতিয়ারটি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের। এখন জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকার দ্বিতীয় খসড়া প্রকাশের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। তবে ইতোমধ্যেই বিদেশি হিসেবে শনাক্ত হওয়া এইসব মানুষের আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া আর তালিকায় নাম আসার সুযোগ নেই। নিউজ এইটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব মানুষকে ফরেনার ট্রাইব্যুনালে বিদেশি ঘোষণা করা হবে তাদের জন্য একমাত্র উপায় হবে হাইকোর্ট কিংবা সুপ্রিমকোর্টের শরণাপন্ন হওয়া। কেবল ওই দুই বিচারিক প্রতিষ্ঠানেরই ফরেনার ট্রাইব্যুনালের রায় পরিবর্তন করার এখতিয়ার আছে। সুনির্দিষ্ট সংখ্যক বাসিন্দাকে বিদেশি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়রানিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা, লোকসভায় ওঠা এমন এক প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিজিজু দাবি করেন, ডি ভোটারদের (সন্দেহজনক ভোটার) কাছে নোটিশ পাঠানো একটি আইনি প্রক্রিয়া। উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানির অভিযোগ নাকচ করে তিনি জানান, ডি ভোটারদের আটক করা হয় না। আটকের প্রশ্নটি কেবল বিদেশি হিসেবে শনাক্তদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিরেন রিজিজু জানান, ভোটার নিবন্ধনকারী কর্মকর্তারা যদি এই ধরনের মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় তবে আগে রেফারেন্সের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের (নির্দিষ্ট ওই জেলার পুলিশ সুপার) কাছে সেগুলো পাঠাতে হয়। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচার/আদেশ অনুযায়ী যদি কারও ভারতীয় নাগরিকত্ব নিশ্চিত হয় তবে ডি ভোটার তালিকা থেকে তার নাম বাদ যায়। আবার আদালতে সেই ব্যক্তি যদি ভারতীয় নাগরিকত্ব নিশ্চিত না করতে পারেন তবে তার নাম ভোটার তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয়। আরও পড়ুন: বৈধ নাগরিকদের নাম বাদ পড়ল, হয়রানির দায় বিজেপির নিউজ এইটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দেহজনক নাগরিক হিসেবে কাউকে পর্যায়ভূক্ত করার সিদ্ধান্তের কারণে ১৯৭১ সালের আগে ও পরে পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দুদের উপর বেশি প্রভাব পড়েছে। সর্বোচ্চ আদালত এবং গৌহাটি হাইকোর্টে নাগরিকতা যাচাই সংক্রান্ত মামলাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন আইনজীবী আমান ওয়াদুদ। তিনি বলেন, বিদেশি ঘোষিত এসব মানুষকে আটক ও বিতাড়নের জন্য পুলিশ এখন খুঁজতে পারে। তবে তারা বাংলাদেশি নন। আর তাই বাংলাদেশ কখনও তাদের গ্রহণ করবে না। তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন এআর/২১:১৮/০৪ জানুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2lV6D8A
January 05, 2018 at 03:17AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top