হঠাৎ করে মনে হতে পারে, পাথরের রাজ্যে চলে এলাম নাকি!

সুরমা টাইমস ডেস্ক ঃঃ

 জাফলং। নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে স্বচ্ছ পানির পিয়াইন নদ। তীরে বিছানো নানা আকারের পাথর। আর সীমান্ত ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ভারতের মেঘালয়ের বড় বড় সবুজ পাহাড়। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেখানে, সেখানে পর্যটকদের ভিড় খুবই স্বাভাবিক। সিলেট থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে তাই ছুটে যান অনেক পর্যটক।

জাফলংয়ে পৌঁছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি একটা জিনিসের উপস্থিতি দেখা যায় চারপাশে। সেটা হলো পাথর। হঠাৎ করে মনে হতে পারে, পাথরের রাজ্যে চলে এলাম নাকি!

এমন ভাবনা খুব একটা ভুল নয়। জাফলংয়ে নেমেই চোখে পড়ে নানা আকৃতির পাথর স্তূপ করে এদিক-সেদিক রেখে দেওয়া। পাশে পাথর ভাঙার যন্ত্র। বিকট শব্দে যন্ত্রগুলোতে পাথর ভাঙা চলছে। মনে হয়, শান্ত প্রকৃতির মধ্যে যেন দানবের চিৎকার চলছে। এখানেই শেষ নয়। ভাঙা পাথরগুলো চাহিদা অনুযায়ী বিক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে ক্রমাগত ছুটে চলছে বহু ট্রাক।

ভেঁপু, হাঁকডাক, চিৎকার আর কোলাহল কাটিয়ে সামনে গেলেও পাথর আর পাথর। শীতকাল বলে পিয়াইন নদের পানি এখন বেশ কম। তাই এর আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় চলছে পাথর তোলার কাজ। নারী-পুরুষ-শিশু সবাই মিলে এ কাজ করছে। কাজের ফাঁকে এখানেই গোসল সেরে নিচ্ছে কেউ কেউ। নদীর পাশে পাথরের গায়ে শুকাতে দিয়েছে ভেজা কাপড়গুলো। আবার কেউ কেউ দুপুরের খাবারটা খেয়ে পাথরে মাথা রেখে জিরিয়ে নিচ্ছে।

নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানোর সময় আশপাশের শ্রমজীবীদের যেসব কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে, পুরোটাই পাথরকে ঘিরে। নৌকাভ্রমণ শেষে ফিরে যাচ্ছে পর্যটকের দল। পর্যটক দলে থাকা এক শিশুর কথায় কানটা খাড়া হয়ে গেল। নাম না জানা শিশুটি তার বাবার কাছে প্রশ্ন করল, ‘বাবা, এখানে যারা কাজ করছে, তারা কি সবাই স্টোনম্যান?’ বাবা কোনো উত্তর দিলেন না। ছেলে তখন আবার প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা বাবা, এখানে কত পাথর আছে? এভাবে পাথর তুলতে তুলতে যদি একদিন সব পাথর শেষ হয়ে যায়, তখন ওরা কী করবে?’

বাবা কী উত্তর দিয়েছিলেন, সেটা শোনা হয়নি। তবে ছোট শিশুটি নির্মম সত্য কথা বলেছে। আসলেই এসব শ্রমজীবী মানুষের জীবন পাথরকে ঘিরে। পাথরের পাহাড়ে ছোট ছোট ঘিঞ্জি ঘরে তাদের বাস, সকালে উঠে পাথর তোলার কাজ শুরু, এখানেই গোসল-খাওয়া-বিশ্রাম, সন্ধ্যায় কাজ শেষে আবার পাথরের পাহাড়ের ছোট ঘরে ফিরে যাওয়া।

পর্যটক যে চোখে পাথরে ঘেরা এই স্থানের সৌন্দর্য দেখেন; তা দেখতে পারেন না হোসেন, করিম, ঝুমুসহ এখানকার শ্রমজীবীরা। তাঁদের কাছে জীবন মানেই এই পাথর। যত বেশি পাথর তুলতে পারবেন, তত বেশি মজুরি, আর একটু ভালো থাকার সম্ভাবনা।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2n88czN

January 24, 2018 at 03:23PM
24 Jan 2018

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top