সুরমা টাইমস ডেস্ক :: সিলেটি নাগরীলিপি বই উৎসব ১৯ জানুয়ারি, সম্পন্ন হয়েছে। নগরীর রিকাবীবাজার সংলগ্ন কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
উৎস প্রকাশন-এর আয়োজনে গ্রীণ ডেল্টা ইন্সুরেন্স, জনতা ব্যাংক এবং অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় দিনব্যাপী বই উৎসবে আলোচনা সভা, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, পুথিপাঠ, সংগীতানুষ্ঠান ও মঞ্চ নাটক উপস্থাপনের পাশাপাশি গুণিজনকে দেয়া হয় আজীবন সম্মাননা।
রিকাবীবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে বিকেল ৪টার দিকে ‘নাগরীলিপির নবযাত্রা’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে বই উৎসবের সূচনা হয়। পরে নাগরীলিপিতে রচিত সাধকদের গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে ছন্দ নৃত্যালয়।
আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বই প্রীতি একটি বিশেষ বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্কুল কলেজে শুধু পড়লেই শিক্ষা অর্জন হয় না। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। সরকারি গ্রন্থাগারে নতুন বই থাকে না বলে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী পাঠাগার আন্দোলন গড়ে তুলতে আহবান জানান।
লেখক ও চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট মসিহ্ মালিক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও আবৃত্তিকার নাজমা পারভীনের সঞ্চালনায় উৎসবের আলোচনা পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইমিরেটাস অধ্যাপক মো. আবদুল আজিজ, শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর সৌরভ শিকদার, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক কাবেদুল ইসলাম।
নাগরীর দিকে অর্থমন্ত্রী নজর দিলে নাগরী লিপি আরো এগিয়ে যাবে দাবি করে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মো. আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, নাগরী ভাষা নয়, এটা একটি লিপি। আমরা নাগরী ভাষা চর্চা করবো না, আমাদের লিপির চর্চা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক এরহাসুজ্জামানকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। উৎসবে সিলেটের ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণগ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে নাগরীলিপিতে রচিত পঁচিশটি গ্রন্থের ‘নাগরী গ্রন্থসম্ভার’ তুলে দেওয়া হয়।
নাগরীকে ফিরিয়ে আনার আহবান জানিয়ে শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম বলেন, নাগরীর ভেতরে এ অঞ্চলের লোকায়ত প্রতিবাদ নিহিত আছে। আমাদের অস্তিত্বের জন্য তা ফিরিয়ে আনতে হবে।
ভাষার কাজ মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেয়া। জ্ঞান চর্চা করতে হলে বই পড়তে হবে। নাগরী লিপি বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না থাকায় এর অস্তিত্ব সংকটাপন্ন ছিল। এই লিপির প্রচার প্রসারে যোগপোযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও বক্তারা মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা প্রাপ্ত অধ্যাপক এরহাসুজ্জামান সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সম্মাননাত আইয়া সম্মানিত মনে খররাম। আমি যেখানো যাই সিলেটি ভাষায় কথা কই’।
স্বাগত বক্তব্যে মোস্তফা সেলিম বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিকতাকে সামগ্রিকতার পর্যায়ে পৌঁছে দিতে বিগত ৯ বছর ধরে কাজ করছি। বাংলা সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নাগরী লিপি প্রতিষ্ঠা পাবেই। এ বছরের শেষ দিকে ঢাকায় আন্তর্জাতিক নাগরী সম্মেলন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে পুথিপাঠ করেন জঙ্গনামা থেকে আলী আজহার, কেতাব হালাতুন্নবী থেকে আব্দুল আলী, সোনাবানের পুঁথি থেকে খোকন ফকির। গান পরিবেশন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী সুষমা দাস, বাউল আব্দুর রহমান, বাউল বশির উদ্দিন সরকার, বাউল শাহ নুরে আলম, বাউল সূর্যলাল দাশ ও লিংকন দাশ।
সবশেষে মঞ্চায়িত হয় নবশিখা নাট্যদলের পরিবেশনায় নাটক ‘সাত কইন্যার কাহান’। কবি শাহনুরের সাত কইন্যার বাখান অবলম্বনে নাটকটি রচনা করেছেন রুমা মোদক, নির্দেশনায় দিয়েছেন সুশান্ত কুমার সরকার, নাটকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সুদীপ চক্রবর্তী।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2BgEnC4
January 20, 2018 at 01:06PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন