ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি- সব কিছুই তার দেরিতে। মাশরাফি বিন মর্তুজা আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ডাক পাওয়া আব্দুর রাজ্জাককে বাদ দিলে তামিম, মুশফিক আর সাকিবসহ জাতীয় দলের বর্তমান বহরের সবাই তার বয়সে ছোট। তারপরও জাতীয় দলের হয়ে সাকিব, মুশফিক আর তামিমের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে মাহমুদউল্লাহর আগে। একই ভাবে তার চেয়ে বয়সে ছোট সাকিব ও মুশফিক জাতীয় দলের অধিনায়কও মনোনীত হয়েছেন তার আগে। সাকিবের বাঁ হাতের হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল ফেটে না গেলে এবারও হয়তো নেতৃত্ব পাওয়া হতো না মাহমুদউল্লাহর। যাই হোক, কথায় বলে না-কারো পৌষ মাস , কারো সর্বনাশ। এক্ষেত্রে সাকিবের সর্বনাশেই টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর পৌষমাস বা অভিষেক হতে যাচ্ছে। কিন্তু অধিনায়ক হতে পারলেও ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহর যাত্রা কেমন হবে, তা নিয়ে অাছে জোর সংশয়- সন্দেহ। কারণ যিনি টেস্টে বাংলাদেশের প্রাণভোমরা, প্রাণশক্তি ও একাই একাশো- সেই সাকিবের অনুপস্থিতি বা ঘাটতি পোষানো কঠিন। এক কথায় সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর। সাকিব মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের বড় নির্ভরতা। আর বল হাতে এক নম্বর অস্ত্র। এমন টু ইন ওয়ান ছাড়া দলের নেতৃত্ব যে বাড়তি চ্যালেঞ্জ! এভাবে নিয়মিত অধিনায়ক ও দলের সেরা পারফরমার ইনজুরিতে মাঠের বাইরে, তার বিকল্প হিসেবে নেতৃত্ব দেয়া কি চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ? এটা কি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ নয়? কি ভাবছেন মাহমুদউল্লাহ ? আজ দুপুরে বন্দর নগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অফিসিয়াল মিডিয়া সেশনে মাহমুদউল্লাহও মানলেন, এটা একটা চ্যালেঞ্জ অবশ্যই। তবে সে চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গেই মোকাবিলার দৃঢ় সংকল্প তার চোখে-মুখে। তাই তো মুখে এমন সংলাপ, ক্রিকেটারদের জীবনে চ্যালেঞ্জে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। এটা ভালো একটা সুযোগ, তার থেকেও বড় কথা, সিরিজটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে আমরা ওডিআই সিরিজটা শুরু করেছিলাম (আসলে ত্রিদেশীয় সিরিজ) সেখান থেকে অবশ্যই ধরে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দেরিতে হলেও অধিনায়কত্ব লাভ। এটা অবশ্যই স্বপ্নপূরণ। কেমন লাগছে? ব্যক্তিগতভাবে আর সবার মত তারও জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার স্বপ্ন ছিল কি? মাহমুদউল্লাহর জবাব, প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে তার দেশকে নেতৃত্ব দেবার। সেই আলোকে আমারও স্বপ্ন ছিল। তবে মাহমুদউল্লাহ মানছেন, সাকিবের ইনজুরির কারণে দায়িত্ব প্রাপ্তিটা খুব একটা উপভোগ্য হয়নি। ডানহাতি এই অলরাউন্ডারের সরল স্বীকারোক্তি, যেভাবে তার কাঁধে অধিনায়কত্বর দায়িত্বটা বর্তেছে, সেটা অপ্রত্যাশিত। এভাবে সাকিবের মত সেরা ক্রিকেটার থাকবে না, আর তিনি দলকে টেস্টে নেতৃত্ব দেবেন, তাও তিন জাতি ক্রিকেটে অমন স্বপ্নভঙ্গের পর; তা ভাবেননি মাহমুদউল্লাহ। আরও খবর: অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল এ সম্পর্কে তিনি বলেন, যেভাবে অধিনায়কত্ব পেয়েছি, সেভাবে পেতে চাইনি অবশ্যই। কারণ সাকিব আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। ওকে লস করা আমাদের দলের জন্য বড় একটা বিপর্যয়ই বলতে হবে। ওর মতো টপ ক্লাস ক্রিকেটারকে মিস করা দলের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর একটা জিনিস। তারপরও দিন শেষে আমরা সবাই বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করছি। বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করাও একটা সুযোগ। দলের জন্য ভালো কিছু করার সুযোগ। সেদিক থেকে আমরা সবাই বেশ রোমাঞ্চিত। এ সিরিজে সাকিব নেই। তারপরও অধিনায়ক হিসেবে তার লক্ষ্য, যে কোনো ভাবে দলকে ভালো খেলায় অনুপ্রাণিত করা। সাহস জোগানো ও সামর্থ্যের সেরাটা বের করে আনা। এমনকি দলের সাফল্যের জন্য প্রয়োজনে কঠোর হতেও রাজি নরম স্বভাবের মাহমুদউল্লাহ। সতীর্থদের প্রতি তার আগাম বার্তা, আমি যখন দল পরিচালনায় থাকবো, তখন কোনো কিছুতেই ছাড় দেব না। যেভাবেই হোক দলকে যতটুকু ভাবে সাপোর্ট করা সেটা একটু রুঢ় হয়েও হোক বা ভালোভাবে অনুপ্রেরণা দিয়ে হোক; সব দিক থেকেই চেষ্টা করবো। আসল কথা হচ্ছে এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট। বাংলাদেশ দলকে ভালো কিছু দিতে হবে। এটাই আমাদের দায়িত্ব, এটাই আমাদের কর্তব্য। তার বোধ ও উপলব্ধি, আগে পরে যত রকম লক্ষ্য ও পরিকল্পনা করা হোক না কেন, মূল কাজ হলো মাঠে জায়গামত পারফর্ম করা। আর অধিনায়ক হিসেবে মাঠে খেলা চলাকালিন সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্তও সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত। সেজন্য অধিনায়কের ধীর স্থির থাকা খুব জরুরী বলে মনে হয় মাহমুদউল্লাহর। নেতৃত্বে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নিয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হয় অধিনায়কত্বের বড় একটা কাজ হচ্ছে মাঠের মধ্যে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যদি আপনি মাথা ঠান্ডা রাখতে না পারেন, তবে সিদ্ধান্তগুলো এদিক-সেদিক হয়ে যেতে পারে। যদি আপনি মাথা ঠান্ডা রাখেন, তবে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। এটা আমি সব সময় করি। আমি যখন ঘরোয়া ক্রিকেটেও অধিনায়কত্ব করি, তখন যতটুকু পারি ঠান্ডা থাকার চেষ্টা করি। সাবেক কোচ হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচ থাকার সময় শততম টেস্ট দলেই রাখেননি মাহমুদউল্লাহকে। এতে ক্যারিয়ারের একটি বড় ও স্মরণীয় মাইলফলক মিস হয়ে গেছে তার। এখন এই হাথুরুর কোচিংয়ের দল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই টেস্ট অধিনায়কত্বের অভিষেক হতে যাচ্ছে, এটা কি মধুর প্রতিশোধ? বিনয়ী মাহমুদউল্লাহ কিছুতেই তা ভাবতে নারাজ। তার কথা, না, আমার ওসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমি চিন্তা করি যে আমি আমার দলকে কিভাবে সেরা সার্ভিসটা দিতে পারবো। সেটাই আসল কাজ। আমি যদি আমার সেরা কাজটা করতে পারি, তাহলেই হবে। সবাই মিলে যদি আমরা নিজেদের কাজটা করতে পারি, এটাই যথেষ্ট। সূত্র: জাগোনিউজ২৪ আর/১২:১৪/৩১ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2FymHEP
January 31, 2018 at 06:43AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন