এক সংবাদপাঠিকার জীবনও বিষিয়ে তুলেছেন ডিআইজি মিজান

নিজের পিস্তল উঁচিয়ে আত্মহত্যার ভঙ্গিতে ডিআইজি মিজানুর রহমান

শুধু মরিয়ম আক্তার ইকোই নয়, সমাজের বেশ কয়েকজন উচ্চশিক্ষিত হাইপ্রোফাইল মেয়ের জীবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ডিআইজি মিজানুর রহমান। তার ফাঁদে পড়ে একাধিক মেয়ের সাজানো সংসারও ভেঙে গেছে।

পুলিশের এই পদস্থ কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে রোববার যুগান্তরে তথ্যপ্রমাণসহ বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকে যুগান্তরে এবং প্রতিবেদককে ফোন করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? এ রকম একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্র ও ক্ষমতা অপব্যবহারের চিত্র যদি এই পর্যায়ে চলে আসে তাহলে ধরে নিতে হবে তার নিয়ন্ত্রণকারী কেউ নেই।

পাশাপাশি এটাও সত্য যে, কারও ব্যক্তিগত অপরাধের জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীকে দায়ী করা যাবে না। তবে তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনাটির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্বও সরকারের।

রোববার যমুনা টিভির ‘সন্ধ্যার বাংলাদেশ’ খবরে প্রধান শিরোনামে আনা যুগান্তরের এ আলোচিত সংবাদের বিশ্লেষক হিসেবে বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অ্যাড. এলিনা খান বলেন, অবিলম্বে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। কেননা পুলিশ দিয়ে তদন্ত করলে ভিকটিম ন্যায়বিচার পাবে না। প্রকৃত সত্য বের হবে না।

এছাড়া তিনি বলেন, ভুক্তভোগী মরিয়ম আক্তার ইকো নিজেই মামলা করতে পারেন। চাইলে তারাও তাকে আইনগত সহযোগিতা দেবেন।

এদিকে গতকাল এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তা দুপুরের মধ্যে টক অব দ্য কান্ট্রিতে রূপ নেয় প্রতিবেদনটি। দেশের বেশির ভাগ স্থানে সকাল ১০টার মধ্যে পত্রিকার কপি বিক্রি শেষ হয়ে যায়। আগ্রহী অনেক পাঠক পত্রিকা না পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিক এবং সরাসরি যুগান্তরে ফোন করেন। তবে যারা মূল পত্রিকা পড়তে পারেননি তারা অনলাইনের এই যুগে বঞ্চিত হননি। যুগান্তর অনলাইনে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই রিপোর্টের পাঠক ৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়। লাইক ও শেয়ার হয় লক্ষাধিক। আর ফেসবুকে তো এই রিপোর্ট নিয়ে নানা মন্তব্য ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই রিপোর্ট প্রকাশ যুগান্তরের বড় সাহসী ভূমিকা উল্লেখ করে অনেকে ফোন করে যুগান্তরকে ধন্যবাদ জানান।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ভুক্তভোগীদের কয়েকজন আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। পাওয়া যায় বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের একজন সংবাদপাঠিকার সঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমানের উত্ত্যক্ত বাক্যবিনিময়ের ফোনালাপের রেকর্ড।জানা যায়, অন্যান্য সেক্টর ছাড়াও তিনি গণমাধ্যমে কর্মরত বেশ কয়েকজন মেয়ের জীবনকেও কিভাবে বিষিয়ে তুলেছিলেন।

যুগান্তর প্রতিবেদকের কাছে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় মরিয়ম আক্তার ইকো অভিযোগ করেন, একটি নিউজ চ্যানেলের জনৈক সংবাদপাঠিকার সঙ্গে আমার স্বামীর পরকীয়া রয়েছে। বিয়ের উকিল বাবা ও মিজানুর রহমানের গাড়িচালক গিয়াসউদ্দিনই এই তথ্য তাকে দেয়। এরপর এ নিয়ে মরিয়মের সঙ্গে ডিআইজি মিজানের বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ইকোকে মারধরও করেন ডিআইজি মিজান। এর প্রতিবাদে ফেসবুকে অনেক লেখালেখি করেন তিনি। একপর্যায়ে মরিয়মের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়। এরপর তিনি ভিন্ন নামে ফেসবুক ব্যবহার করেন। ফেসবুকের ওই ওয়ালে মিজানুর রহমানকে নিয়ে চ্যানেলটির ওই উপস্থাপিকা ও মরিয়ম আক্তার ইকোর মধ্যে ভাইভারে মেসেজের মাধ্যমে তুমুল কথা কাটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে উপস্থাপিকা ইকোর কাছে ক্ষমা চেয়ে লিখেন, ‘সরি আপু, তোমাকে অযথা কষ্ট দেবার জন্য। আমি জানি তুমি অনেক কষ্টের মধ্যে আছো। তুমি ভেবনা, মিজান ভাইয়ের সাথে আমার কিছু নাই। তুমি জাস্ট আমাকে গতকাল আঘাত করে কথা বলেছো বিধায় আমি একটু রিঅ্যাক্ট করেছি। মিজান ভাইয়ের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক না, প্রমিজ করছি আর কখনো শুনবেও না। তুমি আর মিজান ভাই ভালো থাকো। আমি তোমার মাঝে কোনো সমস্যা না। তুমি আবার এটা ভেবো না যে, তোমার ধমকে আমি এইগুলা বলছি। নিজের নাম উল্লেখ করে উপস্থাপিকা লিখেন, … কাউকে ভয় পাই না। … আমি আট-দশটা মেয়ের মতো না। তুমি ছোট বোন, তোমার আবেগ দেখে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। তাই এইগুলা বলা। তোমার মিজান তোমারই আছে। কথা দিলাম আপু, তুমি আর … এই ইস্যুতে কোনো কষ্ট পাবে না।’

২২ নভেম্বর এই মেসেজের ভাইভার লোগোসহ মেসেজের স্ক্রিনসর্ট দিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে আপলোড করেন মরিয়ম আক্তার ইকো। এই মেসেজের সত্যতা মেলে ওই উপস্থাপিকা ও ডিআইজি মিজানের মোবাইল কথোপকথনের দুটি অডিওতে।

সংবাদপাঠিকা ও ডিআইজি মিজানের ফোনালাপ

প্রায় ১৪ মিনিটের ওই অডিওতে মরিয়ম আক্তার ইকোকে বগুড়ার পাগল উল্লেখ করে ডিআইজি মিজান বলেন, ‘পাগল বগুড়ার পাগল এইডা। তোমারে মনে হয় বলেছি। ব্যাংকে মনে হয় চাকরি করে। তোমাকে বলিনি- সে আমারে বারবার ফোন দিচ্ছে। এর জবাবে ওই সংবাদপাঠিকা বলেন, ‘তুমি কোনোদিনই আমাকে বলনাই। কোনো ব্যাংকারের কথা বলোনি। জবাবে ডিআইজি মিজান বলেন, আমি বলছি, আমি বলছি।

সংবাদপাঠিকা বলেন, কেন তুমি এই ধরনের খেলা খেলতেছো? জবাবে ডিআইজি মিজান বলেন, জান আমি কোনো খেলা খেলি না। ওকে বলো। আমি তো তোমার সামনেই গালিগালাজ করেছি। সংবাদপাঠিকা বলেন, কোথায় তুমি আমার সামনে গালিগালাজ করছো? ডিআইজি বললেন, তোমার সামনেই তো আমি গালিগালাজ করলাম। সংবাদপাঠিকা বলেন, ওই মেয়েটা ফোন দিয়ে আমার কাছে কান্নাকাটি করতেছে। ডিআইজি মিজান : কান্নাকাটি করলে হবে নাকি। ওতো আমাকে একশ’বার ডিস্টার্ভ করছে। সংবাদপাঠিকা বলেন, তোমাদের নাকি বাচ্চা ছিল একটা? পেটের বাচ্চা তুমি নষ্ট করেছো? ডিআইজি মিজান : ছি ছি ছি। কি বলে ওইসব। ফালতু কথা বলে এইগুলা। আমার লাইফ নিয়ে খেলতেছে মনে হয় সবাই। সংবাদপাঠিকা : সবাই মানে? না ওই মেয়েটা খেলতেছে আমার লাইফ নিয়ে।

এরপর ডিআইজি মিজান বলেন, আমি তোমাকে বলেছি যে, এই রকম একটা নাম্বার থেকে আমাকেও ডিস্টার্ভ করতাছে। ফোন করতেছে। এমনকি আমার বাসায়ও বলছি। বুঝতে পারছো? সংবাদপাঠিকা বলেন, সে আমাকে ফোন করে এইসব বলতেছে আর কান্নাকাটি করতেছে। ডিআইজি মিজান : সে আমাকে একটা না, বহু কল দিছে। এরপর সংবাদপাঠিকা খুব গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, আচ্ছা ঠিক আছে রাখি। আমি আর তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই না। ডিআইজি মিজান : রাখ, আমি তোমার সঙ্গে পরে কথা বলছি। আমি গাড়িতে উঠে গেছি।

২ মিনিট ১১ সেকেন্ডের এই কল রেকর্ডের পর যুগান্তরের তথ্যানুসন্ধানে প্রায় ১১ মিনিট ৩ সেকেন্ডের আরও একটি কল রেকর্ড পাওয়া যায়।

এর হুবুহু তুলে ধরা হল : সংবাদপাঠিকা : ফোন কল রেকর্ড করছো মানে কি? আমি কেন ফোন কল রেকর্ড করবো, বল? ডিআইজি মিজান : কালকের ঘটনাটা হচ্ছে, … থামিয়ে দিয়ে সংবাদপাঠিকা বলেন, এই ফাইজলামি কথা বলবা না। তোমাকে বারবার আমি ক্ষমা করেছি। ডিআইজি মিজান : না না ঠিক আছে। তুমি আর কি চাচ্ছ আমার কাছে? জবাবে সংবাদপাঠিকা বলেন, ওই মেয়েটা আমাকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছে, তোমাকে বলছি। আমি ওকে বলছি- সে যেন তোমার কোনো ক্ষতি না করে। আমি ওইভাবে ওই মেয়েকে বলছি। ওই মেয়ে যদি আমাকে কোনোরকম ফোনকল দেয় তোমার বিরুদ্ধে যদি কোনো কমপ্লেইন আসে, আমি কিন্তু আইজিপি সাহেবকে ফোন দিব।

ডিআইজি মিজান : এর মানে বুঝলাম না। জবাবে সংবাদপাঠিকা বলেন, আমাকে যেন কেউ ডিস্টার্ভ না করে। ডিআইজি মিজান : তোমাকে ওই মেয়ে ডিস্টার্ভ করলে ওই মেয়েকে ধরো তুমি। আমি তোমাকে কেন ডিস্টার্ভ করবো। সংবাদপাঠিকা বলেন, আল্লাহর কছম আমি কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে হোম মিনিস্টারের কাছে যাব। বহুবার তোমাকে আমি ক্ষমা করেছি। ডিআইজি মিজান : এবার আমি বলি, আমার একটা কথা শোনো। আমার পক্ষ থেকে তোমাকে কোনো ডিস্টার্ভ হবে না। আমার দিক থেকে। এখন ওই মেয়ে করলে তো আমার ব্যাপার না।

সংবাদপাঠিকা : ইউ হ্যাব টু কন্ট্রোল হার। তোমার সাথে রিলেশন ছিল, তোমার বাচ্চা ছিল তার পেটে। ডিআইজি মিজান : না না না এইগুলা বানাইয়া বলতাছে সে। সংবাদপাঠিকা : বানাইয়া বলতাছে একটা মেয়ে? তুমি এখনো বলতাছো বানাইয়া বলতাছে? ডিআইজি মিজান : এইগুলা সে বানাইয়া বলতাছে। তুমি গাজীকে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল বিভাগের ডিন ও ডিআইজি মিজানের বন্ধু অধ্যাপক গাজী শামিম হাসান) ফোন করে জিজ্ঞেস করো। সংবাদপাঠিকা বলেন, আমি কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করব না। এ নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার যতটুকু দেখবার, যতটুকু জানবার, বুঝবার ততটুকু আমি জেনে ফেলেছি। তুমি কেমন বান্দা আমি টের পাইছি।

ডিআইজি মিজান : ওর কোনো ফোন ধরবা না, ওই… কোনো ফোন তোমার ধরার দরকার নাই। সংবাদপাঠিকা : আমি সব ব্লক করে দিছি। এরপরও যদি আমাকে ডিস্টার্ভ করা হয় আই উইল ব্লেইম ইউ। আমি বলে দিছি আমি ডিরেক্ট আইজির কাছে যাব। ডিআইজি মিজান : আমাকে কেন তুমি ব্লেইম দিবা? সংবাদপাঠিকা বলেন, অবশ্যই তোমাকে ব্লেইম দিমু। একটা মেয়ের সাথে তোমার সম্পর্ক, তুমি তাকে কন্ট্রোল করতে পারবা না, ওই মেয়ে আমাকে যন্ত্রণা দিবে, ডিস্টার্ভ করবে।

ডিআইজি মিজান : আমার ওই মেয়ের সঙ্গে ওইরকম কোনো সম্পর্ক থাকলেও তোমার বিষয় না। সংবাদপাঠিকা : ইউ গোয়িং টু মেরি হার? ডিআইজি মিজান : প্রশ্নই ওঠে না, প্রশ্নই ওঠে না। তোমাকে বললাম …। টিভি উপস্থাপিকার নাম উল্লেখ করে ডিআইজ মিজান বলেন, এত কাঁচা না আমি। সংবাদপাঠিকা : তুমি কাঁচা হও, পাকা হও, ঝুনা হও- দেটস আপ টু ইউ। আমাকে যেন কেউ হ্যাচেল না করে। আমি না করে দিছি। আমি কিন্তু ভয়ানকভাবে ডিস্টার্ভ হয়ে গেছি।

ডিআইজি মিজান : আমার হয়ে যদি তুমি আমার বিরুদ্ধে কম্পেলেইন করো- এটা কিন্তু ঠিক হবে না। তুমি কাঁচা হও, পাকা হও, ঝুনা হও- দেটস আপ টু ইউ। আমি কোনো কম্পেলেইন করব না, বাট আমি কিন্তু বড় সাংবাদিকদের হেল্প নিব। সবার হেল্প চাইব। আমি ডিরেক্ট কিন্তু আইজির কাছে যাব, কমিশনারের কাছে যাব। তাদের নাম্বার ওলরেডি আমার কাছে আছে। আমি কিন্তু আইজি এবং হোম মিনিস্টারের কাছে যাব। একজন পুলিশ অফিসার থেকে যদি এভাবে সাংবাদিকদের ডিস্টার্ভ করা হয় তাহলে এটা টু মাচ।

জবাবে ডিআইজি মিজান বলেন, ঠিক আছে তাহলে ওই মহিলাকে ফোন দিবা না। সংবাদপাঠিকা বলেন, আমি ওর সঙ্গে কথা বলব না। তুমি তাকে বিয়ে করেছো আমি কেন ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলব। ডিআইজি মিজান : তুমি ওর টোটাল নাম্বার ব্লক করে দাও, ঠিক আছে? সংবাদপাঠিকা : আমি ব্লক করে দিছি। ডিআইজি মিজান : তুমি আন নোওন কোনো নাম্বার ধরবা না। সংবাদপাঠিকা বলেন : তুমিও আমাকে আর কোনোদিন ফোন দিবা না। কোনো দিন না। ডিআইজি মিজান : তোমাকে আমি কোনো ফোন দিচ্ছি না। ঠিক আছে।

সংবাদপাঠিকা : তুমি যদি মানুষ হয়ে থাকো নেবার কল মি। বহুবার তোমাকে আমি মাফ করে দিছি। তুমি ভুলে যেও না কতবার তুমি আমার পা ধইরা মাফ চাইছ। ডোন্ট ফোর গেট ইট। ডিআইজি মিজান : আমি তোমাকে কোনো ফোন দিচ্ছি না। কল দিচ্ছি না। তুমি কোনো আননোন নাম্বার ধরবা না, তুমি ওর নাম্বার ব্লক করে দাও জান। এটা আমার রিকোয়েস্ট। সংবাদপাঠিকা : ওই মেয়ের পেটে তোমার বাচ্চা ছিল।

এরপরও তুমি তাকে গালাগালি কর? এরপরও যদি শুনি তাকে অসম্মান করে কথা বলছো তাহলে ইউ হেভ টু পে দেট। আমি তোমাকে মাফ করবো না। বলে দিলাম, আমি তোমাকে মাফ করবো না। ডিআইজি মিজান : আমিও বলে দিচ্ছি আল্লাহর ওয়াস্তে ক্রস লিমিট করো না। সংবাদপাঠিকা : আমি তোমাদের ওই সম্পর্কে যাচ্ছি না। আমি এ বিষয়ে যা বলার বলে দিছি। তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিছি যাতে তোমার লাইফে কোনো সমস্যা না হয়।

ডিআইজি মিজান : তুমি ক্রস লিমিট করো না। সংবাদপাঠিকা : ক্রস লিমিট মানে? আমাকে ডিস্টার্ভ করলে আমি কেন এটা সহ্য করবো? ডিআইজি মিজান : ওই মেয়ের সঙ্গে কেন তুমি কথা বলতে গেলা কালকে। ওই কনফারেন্সটা (তিন ফোন এক করে কথা বলা) করেই তো তুমি ভুলটা করলা। সংবাদপাঠিকা : তোমাকে জিজ্ঞাসা করেই তো কনফারেন্স করছি (উপস্থাপিকা মরিয়ম আক্তার ইকোকে কনফারেন্সে নিয়ে ডিআইজি মিজানের সঙ্গে কথা বলেন।) সংবাদপাঠিকা : আমি এটা কেন সহ্য করব। ডিআইজি মিজান: না এটা ঠিক আছে।

সংবাদপাঠিকা : সে কেন আমার সঙ্গে কান্নাকাটি করবে? এম আই ইউর ওয়াইফ? অনেকটা কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে ডিআইজি মিজান : নো নো, ওই মেয়েটা সম্পর্কে বহুদিন বলেছি, খারাপ একটা মেয়ে আছে। সংবাদপাঠিকা : সংবাদ পাঠিকা : খারাপ মেয়ের সঙ্গে তুমি জড়াইলা কিভাবে? তুমি যা মন চায় তুমি করো। আমার নামের পাশে যেন একটা শব্দও যোগ না হয়। আমার নাম নিয়ে একটা বাজে কথা বলবে তো খবর আছে।

ডিআইজি মিজান : জীবনেও তোমাকে ফোন দেয়ার দরকার নাই। সংবাদপাঠিকা : ইউ হ্যাভ টু নো সামওয়ান ডিস্টার্ভিং ইউ? সি ইজ ইউর ওয়াইফ। এটা আমি বলব না। ডিআইজি মিজান : অবশ্যই আমি এটা মেয়েটাকে বলবো। ঠিক আছে? বাট, আমার পক্ষ থেকে তুমি কল পাবা না। আর প্লিজ আমাকে তুমি ডিস্টার্ভ করো না। সংবাদপাঠিকা : আমি তোমাকে ডিস্টার্ভ করি মানে? মাইন্ড ইউর ওয়ার্ড। কথা সাবধানে বলবা এখন থেকে, আমি বলে দিছি। আমি তোমাকে ডিস্টার্ভ করি? ডিআইজি মিজান : না না ঠিক আছে আমি তোমাকে ফোন দিব না। তবে আমার কোনো ক্ষতি করবা না।

সংবাদপাঠিকা : তুমি আমাকে এখনো চিন নাই, বুজছো, মানুষ চিন নাই। ডিআইজি মিজান : আমার কোনো ক্ষতি করো না। সংবাদপাঠিকা : আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। আমি ওই মেয়ে না। তুমি এখনো মানুষ চিন নাই। আমাকে যেন ওই মেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি না করে। ডিআইজি মিজান : ও যদি তোমাকে ডিস্টার্ভ করে তো আমি কি করবো, বলো। এই যে আমার সামনে গাজী (অধ্যাপক গাজী শামীম হাসান) আছে, কথা বলো। উপস্থাপিকা : না আমি গাজী ভাইয়ের সঙ্গে কোনো কথা বলবো না। ওই মেয়েকে তুমি কন্ট্রোল করো। ওই মেয়ে যেন আমাকে ফোন না দেয়। যদি ফোন দেয় তাহলে তুমি দায়ী থাকবা। তুমি যা করলা…। ডিআইজি মিজান : তুমিও যা করতেছো এটাও ঠিক না। সংবাদপাঠিকা : আমি কি করতাছি একটু বলবা?

ডিআইজি মিজান : ইউ এক্সপ্লয়িড মি। সংবাদপাঠিকা : কিভাবে আমি এক্সপ্লয়িড করলাম? ডিআইজি মিজান : বিবেকের কাছে জিজ্ঞেস করো। সংবাদপাঠিকা : না এটা তোমাকে বলতে হবে, এটা আমাকে জানতে হবে। ডিআইজি মিজান : আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। সংবাদপাঠিকা : তোমাকে আইসা আমার পা ধইরা বইসা থাকা উচিত যে আমি তোমাকে ক্ষমা করছি কিনা। ডিআইজি মিজান : যাও ক্ষমা চাচ্ছি, এ ব্যাপারে আর রিং দিবা না- ঠিক আছে? সংবাদপাঠিকা : সম্মান দিয়া কথা বলবা আমার সাথে বইলা দিছি।

এদিকে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এক অভিযোগে জানা যায়, নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল গলায় ঠেকিয়ে ছবি তোলেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। পরে ওই ছবি হোয়াটসঅ্যাপ বা ভাইবারে দিয়ে তার পছন্দের কোনো তরুণীর কাছে পাঠান। আত্মহত্যার ভঙ্গি করে তিনি তরুণীদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ডিআইজি মিজানুর রহমান গতরাতে যুগান্তরকে বলেন, মরিয়ম আক্তার ইকো তার এক বান্ধবীর মাধ্যমে আমার কাছে একটি লিখিত পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, যমুনা টিভি বা যুগান্তর পত্রিকার কাছে তিনি কোনো অভিযোগ করেননি। টিভি উপস্থাপকের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই উপস্থাপকের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। তার কাছে আমরা টাকা-পয়সা পাই। টাকা না দেয়ার কারণে সে আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেছে।

তিনি বলেন, ওই উপস্থাপক এক জায়গা থেকে আমার নাম বলে গাড়ি নিয়েছে। পরে ৮ লাখ টাকা দেয়নি। এখন কোনো সম্পর্ক নেই। ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘ভাই ওই বিষয়ে আর বলার দরকার নাই। যা হবারতো হয়েছেই।’ http://ift.tt/2EmFGBs



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2Fiq5nY

January 09, 2018 at 04:39AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top