আসাম, ০১ জানুয়ারি- ভারতের প্রতীক্ষিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকার প্রথম খসড়া প্রকাশ করেছে আসামের রাজ্য সরকার। প্রকাশিত খসড়া তালিকায় মোট ৩ কোটি ২৯ লাখ বাসিন্দার মধ্য থেকে প্রথম পর্যায়ে প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ বাসিন্দার নাম অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। বৈধ ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এখনও স্বীকৃতি মেলেনি প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ বাসিন্দার। যাচাই বাছাই শেষে তাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবর থেকে এসব কথা জানা গেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ববর্তী সময় থেকে ২০ লাখেরও বেশি মুসলিম ভারতের আসাম রাজ্যে গেছেন। বিজেপি সরকারের অধীনে ভারতীয় নাগরিক স্বীকৃতি পেতে তাদের ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে সেখানে বসবাসের পারিবারিক প্রমাণপত্র দিতে হবে। তবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মুসলিমদের কেউ কেউ বলছেন, তাদের পূর্বসূরীরা এসব প্রমাণ বা নথি সংরক্ষণ করার কথা বুঝতে পারেননি। নাগরিক প্রমাণের মতো যথেষ্ট কাগজপত্র নেই অনেকেরই। তাই জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকার আওতায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে অনেক মুসলিমকে বের করে দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিলো। তবে রবিবার দিবাগত মধ্যরাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল সাইলেশ তালিকার খসড়া প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, যাদের এখন পর্যন্ত যাচাই করা হয়েছে তাদের নিয়ে এই খণ্ডিত খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বাকিদের নাম বিভিন্নভাবে যাচাই করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষ হলেই আমরা আরেকটি খসড়া প্রকাশ করব। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) গত বছর আসামে সরকার গঠন করে। অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় হিন্দুদের কর্মসংস্থান নষ্ট করছে দাবি করে অবৈধ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার শপথ নেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় একটি আদমশুমারি চালানো হয়। তালিকা প্রকাশকে ঘিরে তাই আতঙ্কে ছিলেন মুসলমান অধ্যুষিত বরপেটা, দুবরি, করিমগঞ্জ, কাছাড়সহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা। রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয় তালিকা প্রকাশকে ঘিরে। নাগরিক নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা আসামের অর্থমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা রয়টার্সকে আগেই বলেছিলেন, আসামে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করতেই এনআরসি করা হয়েছে। এতে যাদের নাম থাকবে না, তাদের ফেরত পাঠানো হবে। তবে তালিকা প্রকাশের পর এনআরসির রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা বলেন, প্রথম তালিকায় বাদ পড়াদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, কারও নাম যাচাই করা একটা ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া। প্রথম তালিকা থেকে কোন পরিবারের দুয়েকজনের নাম বাদ পড়তে পারে। বাকিদের তথ্যও যাচাই করা হচ্ছে তাই এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। ১৯৮৫ সালে আন্দোলনের মুখে আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ও ভারত সরকারের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি চুক্তির প্রেক্ষাপটে ২০০৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আসামে নাগরিক তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেন। এরপরের খসড়া তালিকা কখন প্রকাশ করা হবে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী এপ্রিল মাসে কোর্টের পরবর্তী শুনানি হবে বলেও জানান তিনি। সাইলেশ বলেন, তবে পুরো প্রক্রিয়াটি ২০১৮ সালের মধ্যেই শেষ হবে। ২০১৫ সালের মে মাসে শুরু হওয়া আবেদন প্রক্রিয়ায় আসামের ৬৮ লাখ পরিবারের কাছ থেকে সাড়ে ৬ কোটি নথি বা দলিল গ্রহণ করা হয়েছে। হাজেলা বলেন, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর বাকি নামগুলোও সেখানে স্থান পেলে অভিযোগ গ্রহণ শুরু হবে। তিনি বলেন, প্রথম তালিকাটি প্রত্যেক গ্রামের সেবা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যাবে। এছাড়া কেউ চাইলে অনলাইনে বা মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও তথ্য জানতে পারবে। ২০০৫ সালে কেন্দ্র সরকার, রাজ্য সরকার ও আসামের প্রভাবশালী সর্বদলীয় ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক শেষে সেখানকার বৈধ নাগরিকদের তালিকা করার সিদ্ধান্ত হয়। মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে আসামের অবস্থান ভারতে দ্বিতীয়। আরও পড়ুন: এক নজরে দেখে নিন ২০১৭-তে কী কী ঘটল পশ্চিমবঙ্গে প্রথম তালিকা প্রকাশের পর যেকোনও ধরনের সহিংসতা এড়ানোর জন্য রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আসামে প্রায় ৬০ হাজার পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনাবাহিনীও। আসামের ডিজিপি মুকেশ সাহাই বলেন, যেকোনও ধরনের গুজব থেকে অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আর স্পর্শকাতর এলাকাগুলোয় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন এআর/১২:২৫/০১ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2lwV0DQ
January 01, 2018 at 06:24PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন