ঢাকা, ০৭ জানুয়ারি- নন্দিত নির্মাতা শিবলী সাদিক। মহানায়ক, ভেজা চোখ, সারেন্ডার, দোলনা, তিন কন্যা, নোলক, আনন্দ অশ্রু, মায়ের অধিকার, অন্তরে অন্তরে ইত্যাদি ছবিগুলো দিয়ে তিনি কিংবদন্তি হয়ে আছেন ঢাকাই ছবির ইতিহাসে। চিত্রপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের সহকারী হয়ে তিনি পা রেখেছিলেন সিনেমা নির্মাণে। দীর্ঘদিন ধরে একাগ্রতায় তিনি উপহার দিয়েছেন বহু জনপ্রিয় ও সুপারহিট সিনেমা। আজ এ নির্মাতার সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। দীর্ঘদিন রোগে ভুগে ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন শিবলী সাদিক। চোখের দেখাতে তিনি না থাকলেও তার কর্ম তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে আজও। চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলো শিবলী সাদিকের মতো সুপারস্টার নির্মাতাকে নিয়ে চোখে পড়ার মতো আয়োজন অবশ্য করেনি, তবে তাকে মনে রেখেছেন তার সহকর্মীরা, চলচ্চিত্রের মানুষেরা। ব্যক্তিগতভাবে তারা শিবলী সাদিকের বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করছেন। অনেকেই ফেসবুকে তার ছবি পোস্ট করে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তবে শিবলী সাদিক একটি অন্তরে আবেগের তুলিতে লেখা নাম। সেখানে তিনি শ্রদ্ধার আসনে চিরকালের কিংবদন্তি হয়ে আছেন। সেই অন্তরের মালিক চলচ্চিত্র অভিনেত্রী চম্পা। ঢাকাই সিনেমার সফল এ অভিনেত্রীর নায়িকা হওয়ার শুরুটা ছিল শিবলী সাদিকের হাত ধরেই। ১৯৮৫ সালের ২০ নভেম্বর মুক্তি পায় তিন কন্যা ছবিটি। শিবলী সাদিকের পরিচালনায় সুচন্দা ও ববিতা- দুই বোনোর পাশাপাশি অভিনয় করেন চম্পাও। এটিই ছিল নায়িকা হিসেবে চম্পা অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। যেখানে তার বিপরীতে ছিলেন তৎকালীন সুপারস্টার ইলিয়াস কাঞ্চন। শিবলী সাদিকের মৃত্যু দিনে তিনি বিমর্ষ। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এ অভিনেত্রী জানালেন, গুণীদের আমরা ভুলে যাই। আমাদের মন থেকে খুব সহজেই মুছে যান তারা, মুছে যায় তাদের অবদান। কিন্তু এটা ঠিক না। এটা চরম অকৃতজ্ঞতা। শিবলী সাদিকের মতো নির্মাতা যুগে যুগে আসেন না। তাকে ঘটা করেই মনে রাখা উচিত আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের। তার জীবন ও সাফল্যের গল্প শুনে নতুন নির্মাতা ও শিল্পীরা উৎসাহ পাবে। কিন্তু শিবলী ভাইয়ের স্মরণে আমি এখন পর্যন্ত কোনো অনুষ্ঠানের কথা শুনিনি। আমার সাধ আছে, কিন্তু একা একা প্রাতিষ্ঠানকি আয়োজনে কিছু করা যায় না। তাই আমার গুরুর স্মরণে আমি শ্রদ্ধাঞ্জলিই দিয়ে যাই প্রতি বছর। নিভৃতে তার জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন এ ভালো মানুষটাকে বেহেস্ত দান করেন। শিবলী সাদিককে গুরুর সম্মান জানিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, শিবলী সাদিক আমার পরিবারের মানুষ ছিলেন। তিনি প্রায়ই আসতেন আমাদের বাসায়। আমি তখন বেশ ছোট। সুচন্দা আর ববিতা আপা তখন সুপারহিট অভিনেত্রী। শিবলী ভাই আসতেন, আমি তার সঙ্গে গল্প করতাম। তিনি আমাকে কোলে নিতেন। আমরা মজা করে সিনেমা দেখতে যেতাম। বলা চলে তার কোলেপিটে মানুষ হয়েছি আমি। তিনিই আমাকে চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে ব্রেক দিয়েছিলেন। তার জন্যই আমি আজকের সবার পরিচিত, জনপ্রিয় চম্পা। একটা সাধারণ চম্পার খবর কে রাখে? কিন্তু অভিনয় নামের পরশ পাথরের জন্য দেশের মানুষ আমাকে চেনেন ও আমার খবর রাখেন। শিবলী সাদিক আমাকে সেই পরশ পাথরের সন্ধান দিয়েছিলেন। আরও পড়ুন: শাকিবের সঙ্গে নাচতে ব্যাংককে মিম চম্পা আরও বলেন, যদিও আমার দুই বোন তারকা অভিনেত্রী ছিলেন তবু আমার জন্য নায়িকাটা হওয়াটা ছিল অনেক কঠিন। কারণ, আমি যে ছবি দিয়ে শুরু করেছিলাম সেখানে সুচন্দা, ববিতার মতো নায়িকা ও তারকা অভিনেত্রীরা ছিলেন। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে নিজেকে চেনানো অতো সহজ ছিল না। তার ওপর এ ছবিতে সোহেল রানা, প্রবীর মিত্র, ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো অভিনেতারা ছিলেন। তাদের সঙ্গে মানিয়ে সবার নজর কাড়তে পেরেছিলাম কেবলমাত্র শিবলী সাদিকের জন্যই। তিনি আমাকে গ্রুমিং করেছিলেন। আমাকে রুপালি পর্দার জন্য তৈরি করেছিলেন। একজন দক্ষ অভিনয়শিল্পী হতে উৎসাহী করেছিলেন। তার সেই শিক্ষা, উপদেশ মেনেই আমি চিরদিন অভিনয় করেছি। তার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। শিবলী ভাই যতো বড় মাপের নির্মাতা ছিলেন মানুষ হিসেবে ছিলেন ততোটাই বড়। তার আচরণ, সদালাপী মনোভাব, সততা যে কাউকে মুগ্ধ করতো। চলচ্চিত্রকে তিনি সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। এমন মানুষদের চলে যাওয়া সমাজের জন্য অপুরণীয় ক্ষতি। আমার দাবি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের প্রতি, শুধু শিবলী সাদিক নন; তার মতো গুণী মানুষরা চলে যাওয়ার পর কিছুটা সম্মান যেন পান আমাদের কাছ থেকে। রাষ্ট্র অনেক সময় অনেককিছুর সাধ থাকলেও পারে না। তবে আমরা নিজেরা চেষ্টা করতে পারি নিজেদের প্রিয় মানুষগুলোকে মনে রাখতে এবং সম্মান জানাতে। তাদের কর্মগুলোকেও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।-যোগ করলেন চম্পা। প্রসঙ্গত, ১৯৮৪ সালে মুক্তি পাওয়া বালা ছবি দিয়ে সৈয়দ আওয়ালের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনায় নাম লেখান তিনি। ২০০৬ সালে সরকারি অনুদানে নির্মিত তার পরিচালনায় সর্বশেষ বিদেশিনী চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। বেশ কিছু চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন তিনি। শিবলী সাদিক বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। নতুন পরিচালকদের উৎসাহিত করতে কুটির-ই-চলচ্চিত্র নামে একটি সংগঠন করেন। তার সহকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সোহানুর রহমান সোহান। বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন শিবলী সাদিক। ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারিতে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এফডিসিতে জানাজা শেষে তাকে উত্তরায় দাফন করা হয়। সূত্র: জাগোনিউজ২৪ আর/৭৭:১৪/০৭ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2qzZL5h
January 08, 2018 at 12:21AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন