সুরমা টাইমস ডেস্ক:: রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মানসিক ভারসাম্যহীন এক তরুণকে চিকিৎসা না করে আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত নয় মাস ধরে ওই তরুণকে ফ্ল্যাটে আটকে রাখার কারণে তিনি প্রায়ই সেখান থেকে উদ্ধার হওয়ার আর্তি জানাচ্ছেন। নিজের ঘরে বন্দি থাকা অবস্থায় ওই তরুণ সবসময় চিৎকার করেন। এতে ওই এলাকার আশেপাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা গত বৃহস্পতিবার গুলশান থানা পুলিশের কাছে খবর দেন। পরে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই তরুণকে উদ্ধার করতে পারেনি। পুলিশ বলছে, ওই ফ্ল্যাটের দরজা খোলেনি বলে তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন।
গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর প্রাইমভিয়েরে অ্যাপার্টমেন্টের ১/এ নম্বর ফ্ল্যাটে এ ঘটনা চলছে সারাদিন। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দুইটি ভবন পড়েই ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার ঘটনাস্থল হলি আর্টিজান বেকারি ভবন। প্রাইমভিয়েরে অ্যাপার্টমেন্টের সামনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে চিত্রনায়িকা ববিতা ও একজন সংসদ সদস্যের ফ্ল্যাট। কাছেই ইটালি ও কাতার দূতাবাস। ওই এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তা প্রহরী সায়েম বলেন, প্রতিদিনই প্রাইমভিয়েরে অ্যাপার্টমেন্টের ১/এ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে একজন তরুণের চিত্কার শোনা যায়। বিশেষ করে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চিৎকার ও আর্তনাদে আশেপাশের মানুষের মধ্যে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানসিক রোগে আক্রান্ত শাওন নামে এক তরুণ দিনরাতে এই চিৎকার করেন।
গুলশান থানার এসআই বজলুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার ওই অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার পর ওই ফ্ল্যাটে তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে ফারহানা আজম নামে এক নারী শওকত ওরফে শাওনের মা পরিচয় দিয়ে কথা বলেন। ফারহানা পুলিশকে জানান, বছর দুয়েক আগে থেকে তার ছেলের মানসিক ভারসাম্যহীনতা ধরা পড়ে। এরপর মানসিক বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল তাকে চিকিৎসা দেন। তার স্বামী গত ১২ ডিসেম্বর মারা যাওয়ার পর শাওন মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায় তাকে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। আমরা দুই একদিনের মধ্যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করব।
গতকাল ওই অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে কথা হয় শাওনের মায়ের সঙ্গে। তার নাম ফারহানা আজম। তিনি হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রধান হিসাবরক্ষক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। তার স্বামী ডা. আখতার আজম। তিনি শিশুবিশেষজ্ঞ ছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
ফারহানা আজম বলেন, আশেপাশের বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমি কি করব? ছেলে তো আমার। তাকে তো ফেলে দিতে পারি না। তিনি বলেন, শাওন একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। সে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১২ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করে। এরপর থেকে তার মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, রাত-দিন এভাবে চিৎকার করায় এলাকায় বসবাস করার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। ওই ছেলে মানসিকভাবে অসুস্থ হলে, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হোক। এভাবে বিনা চিকিৎসায় একজন রোগীকে আটকে রাখা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে তারা অভিযোগ করেন।
মানসিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘এ ধরনের রোগীকে বাসায় না রেখে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা উচিত।’
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2Dva51q
January 13, 2018 at 09:36PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন