সুরমা টাইমস ডেস্ক:: তিনি চলে গেছেন দেখতে দেখতে চার বছর পেরিয়ে গেল! তবু এ নাম বাঙালি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে কিংবদন্তি হয়ে আছে। তার রূপ-অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে আছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। বহুকাল ছিলেন না অভিনয়ে। তবু বিন্দুমাত্র ভাঁটা পড়েনি তার আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তায়। তার মৃত্যুর পর সেটা বেশ ভালোই বোঝা গিয়েছিলো। বলা হচ্ছে মহানায়িকা খ্যাত কলকাতার অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের কথা।
আজ তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৪ সালের ১৭ই জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী। তার অমর আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সুচিত্রা কিন্তু সুচিত্রা ছিলেন না। অবিভক্ত ভারতের বাংলাদেশের পাবনা জেলাতে ১৯২৯ সালের ৬ই এপ্রিল এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রমা দাশগুপ্ত নামের এক সুন্দর মুখশ্রীর মেয়ে। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯৪৭ সালে বর্ধিষ্ণু শিল্পপতি পরিবারের সন্তান দিবানাথ সেনকে বিয়ের সূত্রে কলকাতায় আসেন পাবনার রমা।
বিয়ের পরে ১৯৫২ সালে ‘শেষ কথায়’ রূপালি পর্দায় নায়িকার ভূমিকায় প্রথম আত্মপ্রকাশ তার। পাবনার রমার নাম বদলে হয় সুচিত্রা। আর তার পরেরটা শুধুই ইতিহাস। কেবলই কিংবদন্তির পথে এগিয়ে চলা। তার হাত ধরেই বদলে যায় বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকার সংজ্ঞা।
‘সাত নম্বর কয়েদী’ ছবিতে অভিনয় করার পর সুচিত্রা সেন পিনাকী মুখার্জি পরিচালিত ‘সংকেত’ ছবিতে অভিনয় করেন। তখনও তিনি ‘সুচিত্রা সেন’ নাম ধারন করেননি। সে নাম আসে এর পরের ছবি অর্থাৎ নীরেন লাহিড়ীর ‘কাজরী’ ছবির মাধ্যমে ১৯৫২ সালে।
সুচিত্রা সিনেমা করতে এসে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন উত্তমকুমারের জুটি হিসেবে। উত্তম-সুচিত্রা শব্দটি ছিলো তখনকার চলচ্চিত্রের আশির্বাদ। কখনো প্রেম যুগল, কখনো দাম্পত্যজীবনের গল্পে তারা হয়ে উঠেছিলেন অনবদ্য। আলাদা সংসার থাকলেও এই দুজনের প্রেম নিয়ে অনেক মুখরোচক কথাই ছড়ানো আছে টালিগঞ্জের ইতিহাসে।
সুচিত্রা সেন অভিনীত শেষ ছবি ‘প্রণয় পাশা’ মুক্তি পায় ১৯৭৮ সালে। ওই বছরই তিনি সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর চলচ্চিত্র অঙ্গন থেকে চিরতরে অবসরগ্রহণ করেন। এরপর তিনি লোকচক্ষু থেকে আত্মগোপন করেন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন।
এই বাঙ্গালি নায়িকার হঠাৎ নীরবতা সম্পর্কে বলা হয়, উত্তমকুমারের মৃত্যুর পরই প্রিয় মানুষটিকে হারানোর অভিমানে চলচ্চিত্র ত্যাগ করেন তিনি। জানা যায়, তার নায়ক উত্তম কুমার ১৯৮০ সালের ২৪শে জুলাই মারা গেলে সেই রাতে এসেছিলেন একখানি মালা হাতে নিয়ে। মহানায়কের দেহের ওপর মালা রেখে সুচিত্রা সেন ফিরে এলেন কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়িতে, তারপর তিনি মিডিয়ার সঙ্গে আর কথা বললেন না। একাকী নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে লাগলেন।
এমনকি ২০০৫ সালে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার নিতেও যাননি তিনি। ২০১২ সালে বঙ্গ বিভূষণ পুরস্কার পান। তার হয়ে কন্যা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের একটি আসনের সাংসদ ও টালিগঞ্জের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মুনমুন সেন এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।
সুচিত্রা ছিলেন এক কন্যার জননী। সেই কন্যা মুনমুনও একজন গুণী অভিনেত্রী। সুচিত্রার দুই নাতনী রিয়া ও রাইমা সেনও নানীর মতোই অভিনয়কেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2DjL0K3
January 17, 2018 at 04:28PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন