নগরীতে অনাদায়ী বিদ্যুৎ বিল ৮৮ কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিবেদন:: সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ গ্রাহক মিলিয়ে সিলেট নগরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) গ্রাহকসংখ্যা ১ লাখ ৯২ হাজার। গত অক্টোবর নাগাদ গ্রাহকদের কাছে বিউবোর বিদ্যুৎ বিল বাবদ পাওনা রয়েছে ৮৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের অধীন ৭৭টি গ্রাহক সংযোগে বকেয়া রয়েছে ১০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। দুটি স্টেডিয়ামে বিল বকেয়া রয়েছে ৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এছাড়া জেলা প্রশাসনের অধীন ৮টি কার্যালয়ে পাওনা ২ কোটি ৮০ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

বিউবো সূত্র বলছে, সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় সবচেয়ে বেশি বকেয়া রয়েছে। বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ ও বকেয়া আদায়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে নিয়মিত অবহিতকরণ চিঠি পাঠানো হয়। এরপরও বিল আদায় হচ্ছে না।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, বিল নিয়মিত না দেওয়া হলেও পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয়। বকেয়া বিলগুলো চলতি অর্থবছরে দেওয়া হবে।

বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসনের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আটটি দপ্তরে রয়েছে। এর মধ্যে একটি দপ্তরে পাওনা ২ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সর্বশেষ ওই দপ্তর থেকে চলতি বছরের প্রথম মাসে পরিশোধ করা হয়েছিল ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

এ সম্পর্কে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ২ কোটি টাকার বিলের মধ্যে এক মাসের একটি বিলে ৬০ লাখ টাকা এসেছে। ওই বিলে ভুল ছিল। বিষয়টি বিউবোর প্রধান প্রকৌশলীকে অবহিত করে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বাকি বিলগুলো অনেক দিনের পুঞ্জীভূত বকেয়া। বিল সংশোধনের পর পরিশোধ করা হবে।

পুলিশ প্রশাসনের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সিলেটে এ মন্ত্রণালয়ের অধীন ৩৪টি কার্যালয়ে বিউবোর মোট পাওনা রয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সিলেটের পুলিশ সুপারের একটি কার্যালয়েই বকেয়া রয়েছে ৬২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সবশেষ গত ২০ জুলাই ২৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি বিল পরিশোধ প্রক্রিয়াধীন বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছে।

সরকারি ও আধা সরকারি দপ্তর ছাড়াও দুটি স্টেডিয়ামের বকেয়া বিল নিয়ে বিপাকে রয়েছে বিউবো। জেলা স্টেডিয়ামের কাছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ও বিভাগীয় স্টেডিয়ামের কাছে ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। বিভাগীয় স্টেডিয়ামে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া বিপিএল আয়োজনের বিল মিলিয়ে বকেয়া আনুমানিক ৪ কোটি টাকা ছাড়াবে বলে জানিয়েছেন বিউবোর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিপণন-সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের তদারক প্রতিষ্ঠান সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থা। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল প্রসঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব নিয়েছি ২০১৫ সালে। এরপর থেকে সিলেট নগরের মেন্দিবাগ এলাকার আবুল মাল ক্রীড়া কমপ্লেক্স ও জেলা স্টেডিয়ামের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলসহ প্রায় ২২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। এ বিলগুলো সব ভবনের অভ্যন্তরীণ বিল। ফ্লাড লাইটের বিলগুলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পরিশোধ করবে।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম তদারক করে সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা। ভেন্যু ব্যবস্থাপক জয়দীপ দাশ বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দেখবে। স্টেডিয়ামের সব বিষয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তদারক করে থাকে। এর দায় আমাদের নয়, তাই কিছু বলতেও পারব না।’

এ সম্পর্কে বিউবো সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল কাদির বলেন, ক্রীড়া পরিষদের কাছে চিঠি দেওয়া হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কর্তৃপক্ষের কাছে দিতে বলা হয়। আবার বিসিবিকে নোটিশ দেওয়া হলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃপক্ষকে দিতে বলা হয়। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বিসিবি, জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ ১১টি দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিল আদায় হচ্ছে না।’

সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মধ্য দিয়ে বকেয়া আদায় করা হয়। তা না হলে মামলা করে আদায়ের চেষ্টা চলে। প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো তৎপরতার প্রচলন বিদ্যুৎ বিভাগে নেই বলে বকেয়া আদায়ও দীর্ঘসূত্রতার মুখে পড়ে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘বকেয়া গ্রাহকদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের বকেয়া। এমন কোনো মন্ত্রণালয় নেই যার কাছে কোটি টাকা পাওনা নেই। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে প্রতি তিন মাস পর পর প্রতিবেদনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু বাস্তবে কেউ পরিশোধ করতে দায় বোধ করে না।’



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2qstxJl

January 05, 2018 at 08:19PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top