ডিভিশন ছাড়াই সাধারণ বন্দি হিসাবে কারাগারে খালেদা

ডেস্ক রিপোর্টঃ কারাগারে সাধারণ বন্দি হিসাবেই ঠাঁই হয়েছে খালেদা জিয়ার। রায় ঘোষণার পর আইনজীবীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পুরনো কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের কক্ষ হিসাবে ব্যবহৃত তিনশো বর্গফুটের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে তাকে। কক্ষটি কারাগারে ঢুকতেই বামদিকে যে দ্বিতল ভবন রয়েছে তার নিচ তলাতে অবস্থিত। প্রথমদিন কারাগারে ডিভিশন না দেয়ার কথা স্বীকার করে কারা কর্তৃপক্ষ বলছেন, আদালত থেকে ডিভিশন দেয়ার আদেশ না দেয়ার কারণে খালেদা জিয়াকে এখনও ডিভিশনে প্রাপ্ত সুবিধাদি দেয়া যায়নি। তবে ডিভিশনের কাগজ পাওয়ার পর এখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হবে। এ ব্যাপারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সাধারণ কয়েদি হিসেবেই খালেদা জিয়াকে আমরা রেখেছি।

আদালতের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে ডিভিশন দেয়া হবে না। অন্য সব সাধারণ কয়েদিদের মতোই সব সুবিধা পাবেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারাকক্ষে যাওয়ার পর নিরবে সময় কাটাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খাবার দিতে চাইলেও খাননি তিনি। কারা কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, খেতে ইচ্ছে করছে না। কক্ষের ভেতরে হাঁটাহাঁটি করেছেন। ঘুরেফিরে দেখেছেন। প্রয়োজন ছাড়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তেমন কোনো কথা হয়নি তার। সেখানে ছয় জন মহিলা কারারক্ষী রয়েছেন তার পাহারায়। কারাসূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। কারাগারে যাওয়ার আগেও ধীর, স্থীর, শান্ত ছিলেন তিনি। কারাগারে যাওয়ার আগ মুহূর্তে বলেছেন, আপনারা মন খারাপ করবেন না। আমি কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করব না। আইনি লড়াই চালিয়ে যান। নেতাকর্মীদের বলবেন, তারা যেনো ঐক্যবদ্ধ থাকে। আমাদের সঙ্গে আছে সবচেয়ে বড় শক্তি- জনগণ।

দৃঢ় কণ্ঠে এসব কথা বলতে বলতেই গতকাল আইনজীবীদের কাছ থেকে বিদায় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বিকাল ৩টা ৮ মিনিটে খালেদা জিয়াকে র‌্যাব-পুলিশের কড়া পাহারায় পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। সেখানেই আইনজীবীদের সঙ্গে কথা হয়। তারপর কারাকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন গৃহকর্মী ফাতেমা। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতের আদেশ কারাগারে না পৌঁছায় ফাতেমাকে কারাগারে রাখা হয়নি বলে কারাসূত্র জানায়। খালেদা জিয়ার পাহারায় ছয় মহিলা কারারক্ষীকে নিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও একজন নারী বন্দি তার দেখাশোনা করছেন।

কারাকক্ষে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেয়া হয়েছে। বাসা থেকে আদালতে আসার সময় কয়েক ব্যাগে করে তা নিয়ে আসা হয়েছিল কারাকক্ষে নিজের জায়নামাযে বসে নামাজ আদায় করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
কারগারে ঢুকতেই বাম দিকে যে দ্বিতল ভবনের নিচতলাতে রাখা হয়েছে খালেদা জিয়াকে। তিন শ’ স্কয়ার ফিটের এই কক্ষটি আগে ব্যবহার করতেন সিনিয়র জেল সুপার। কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর হওয়ার পর এটি ছিল পরিত্যক্ত। কয়েক দিন আগে কক্ষগুলো পরিস্কার করা হয়। কারা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, একজন প্রথম শ্রেণির বন্দির যেসব সুবিধা পাওয়ার কথা, সব সুবিধাই তাকে সেখানে দেয়া হবে। তবে তার সঙ্গে গৃহকর্মী থাকার কোন নির্দেশনা এখনো কারা কর্তৃপক্ষের হাতে এসে পৌঁছেনি। এমন নির্দেশনা এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কারা সূত্র জানায়, তার কক্ষে একটি খাট, আলমারি,  মশারি, লেপ, তোষক, টেলিভিশন ও ফ্যানসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র রয়েছে। খাবারের তালিকায় সরু  চালের ভাত, মাছ, মাংস, ডিম ও সবজি থাকবে। তিনি  চাইলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনে বাইরের খাবারও তাকে সরবরাহ করা যেতে পারে। গতকাল কারাগারে যাওয়ার পর তাকে খাবার দিতে চাইলেও তিনি খাবার খেতে চাননি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তবে তিনি পেঁপে দিয়ে তৈরি তরকারি কিংবা পেঁপের জুস খেতে বেশি পছন্দ করেন। এছাড়া সকালে রুটি, সবজি ও ডিম খেতে পছন্দ করেন।
খালেদা জিয়ার মামলার অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, কারা বিধির ৬১৭ অনুযায়ী একজন ডিভিশন-১-প্রাপ্ত বন্দি যা যা সুবিধা পাওয়ার কথা, তার সবই পাবেন খালেদা জিয়া। তবে এসব বিষয় নিশ্চিত করার জন্য আজ কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2Bky5oD

February 09, 2018 at 09:22AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top