অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মৃত্যু মুখ থেকে ফিরে আসা খাদিজার চিকিৎসা

সুরমা টাইমস ডেস্ক::           সিলেটে খাজিদাকে সাবেক প্রেমিকের উন্মত্তের মতো কোপানোর দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর তোলপাড় হয়েছিল দেশে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে কথা বলেছিলেন এ বিষয়ে। অভিযুক্ত বদরুল আলমের সাজাও হয়েছে। কিন্তু খাদিজা কেমন আছে?

দুই দফা অস্ত্রোপচার এবং পক্ষাগাত পুনর্বাসন কেন্দ্রে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন এই তরুণী। জীবনের ঝুঁকি কেটে গেলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি তিনি। কারণ, চিকিৎসা এখনও অনেক বাকি রয়ে গেছে। কিন্তু টাকার অভাবে তা শেষ করতে পারছে না পরিবার।

শুরুতে সরকার পাশে দাঁড়ালেও, চিকিৎসার ব্যয় দিলেও এখন আর খাদিজার খোঁজ করছে না কেউ। আর তার পরিবারও কারও কাছে ধর্ণা দিচ্ছে না। ফলে খাদিজার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠা এখনও অনিশ্চিত রয়ে গেছে।

অথচ ঘটনা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে খাদিজাকে নিয়ে তৎপর হয় প্রশাসন, দ্রুত নিয়ে আসা হয় ঢাকায়, নামি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। প্রায় নিত্যদিন তাকে নিয়ে সংবাদ হয়েছে, তাকে দেখতে গেছেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তা, মানবাধিকার কর্মী, নারী নেত্রী, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। প্রায় ভিআইপি মর্যাদায় চিকিৎসা হয়েছে।

খাদিজার চিকিৎসার ব্যয় মেটানোর ঘোষণা আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। আর স্কয়ার হাসপাতালে দীর্ঘদিন ব্যয়বহুল চিকিৎসার এক টাকাও দিতে হয়নি খাদিজা পরিবারকে।

এক সময় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল ছেড়ে খাদিজার পুনর্বাসন শুরু হয় সাভারের পক্ষাগাত পুনর্বাসন কেন্দ্র-সিআরপিতে। আর তখন থেকেই খাদিজাকে ভুলে যাওয়া শুরু। আর এখন তিনি দৃষ্টির আড়ালে।

খাদিজা বেঁচে উঠেছেন ঠিকই, কিন্তু তার জীবন সংগ্রাম শেষ হয়নি। কারণ, তার চিকিৎসার এখনও অনেক বাকি। আর টাকার অভাবে সেটা করতে পারছে না পরিবার।

২০১৬ সালের ৩রা অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজ কেন্দ্রে স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে হামলার শিকার হন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সে সময়ের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খাদিজার মাথার খুলি ভেদে করে মস্তিষ্কও জখম হয়।

ঘটনার পর ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর অনেকটা সুস্থ হন খাদিজা। শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিক সাড়া না দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্কয়ার থেকে তাকে পাঠানো হয় সাভারের সিআরপিতে। সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরেন তিনি।

কিন্তু খাদিজাকে এখনও পুরোপুরি সুস্থ বলা যাবে না। নিজের কাজ কর্ম করতে তাকে অন্যের সহযোগিতা নিতে হয়। তার মস্তিস্কে এবং বাম হাতের কিছু চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।

খাদিজার বাবা মাশুক মিয়া ফিরে গেছেন তার কর্মস্থল সৌদি আরবে। তার চাচা আবদুল কুদ্দুস জানান, তার ভাতিজি সিলেটে তাদের বাড়িতেই আছেন। এখন স্বজন, বন্ধু বা পরিচিতজনদের চিনতেও পারে, কথাও বলতে পারে। তবে নিজের কাজকর্ম অন্যের সাহায্য নিয়ে করতে হয়।

খদিজার চাঅচা বলেন, ‘তার বাম হাতে এবং মস্তিস্কে কিছু সমস্যা রয়েছে। সে জন্য তার বাম হাতের একটি অপারেশন প্রয়োজন। এটি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে করতে হবে। সেই অপারেশনটি করতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার প্রয়োজন।

কুদ্দুস বলেন, ‘খাদিজার বাবা মাশুক মিয়া সৌদি আরবে প্রাইভেটকার চালান। সেখানে আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। ফলে তিনি খাদিজার চিকিৎসা করাতে পারছেন না।’

‘ভবিষ্যতে খাদিজার পড়াশোনা শেষ করে তাকে একটি ভাল ছেলের কাছে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আছে আমাদের। তবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সেই স্বপ্ন পূরণ করা যাচ্ছে না।

খাদিজার চিকিৎসা ব্যয় তো সরকার মেটাবে বলে ঘোষণা আছে। আপনারা সরকারের সাথে যোগাযোগ করছেন না কেন- এমন প্রশ্নে খাদিজার চাচা বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্ট করেছি। কিন্তু পারিনি। চাইলেই তাদের সাথে আমাদের মতো মানুষের পক্ষে যোগাযোগ করা কঠিন।’

খাদিজার চাচা জানান, মাস দুয়েক আগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের অধ্যাপক এম কে দত্তকে দেখিয়েছেন। এই চিকিৎসক তখন দুই মাসের মধ্যে হাতে অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছেন। আর জানিয়েছেন, এর ব্যয় হতে পাঁচ লাখ টাকা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘খাদিজার চিকিৎসার জন্য তারা আমাদের এখানে এসেছিল কি না সেটা আমার জানা নেই। তবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। তাদের টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।’

খাদিজাকে কোপানোর দায়ে বদরুল আলমের সাজা হয়েছে। ২০১৭ সালের ৮ই মার্চ বদরুলকে যাবজ্জীবন সাজার রায় দিয়েছে আদালত। এর আগে নিজ সংগঠন ছাত্রলীগও বহিষ্কার করে তাকে।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2ny0xvQ

February 03, 2018 at 05:27PM
03 Feb 2018

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top