‘জাতিসংঘের ৭ম দাপ্তরিক ভাষা হোক বাংলা’ এ দাবিতে এবং ‘জাতিসংঘে বাংলা চাই’ স্লােগানে কুমিল্লায় অনলাইন ভোটিং ক্যাম্পেইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। এ সময় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। সোমবার সকালে কুমিল্লা মহানগরীর শাকতলা এলাকায় কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
র্যালি ও অনলাইন ভোটিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. এ কে এম এমদাদুল হক।
দেশের শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ গ্রুপের সহযোগিতায় ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম-এর আয়োজনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ইত্তেফাকের কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি মো. লুৎফুর রহমান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. এ কে এম এমদাদুল হক বলেন, ‘জাতিসংঘে বাংলা চাই’ দাবিতে জাগো নিউজ যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনলাইনে ভোটিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকসহ সকল মহলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার দাবি অর্জিত হলেও এবং আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বাংলা ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্থান পায়নি। তাই ‘জাতিসংঘের ৭ম দাপ্তরিক ভাষা হবে বাংলা’ এ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ দাবি বাস্তবায়নে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ইত্তেফাকের কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি মো. লুৎফুর রহমান বলেন, বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন সংগ্রামের অন্যতম জাতীয় রাজনৈতিক নেতা কুমিল্লার কৃতিসন্তান অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯৪৮ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনিই প্রথম পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেছিলেন। তখন থেকেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম আর রক্তের বিনিময়ে ১৯৫২ সালে ভাষার দাবি বাস্তবায়িত হয়।
পরবর্তীতে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’কে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণার জন্য দাবি জানিয়ে সর্বপ্রথম ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে আবেদন করেন কানাডা প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা কুমিল্লার আরেক কৃতি সন্তান রফিকুল ইসলাম। পরে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর সাধারণ সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেক প্রস্তাবটি নিয়ে একটি প্রতিনিধি দলসহ ইউনেস্কোর সদর দফতর প্যারিসে যান এবং ইউনেস্কোর ৩০তম পূর্ণাঙ্গ সাধারণ সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হলে সর্বসম্মতভাবে দিবসটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে অনুমোদন লাভ করে।
কিন্তু বিশ্বের ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বললেও এ ভাষা এখনো জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে বাংলা ভাষাভাষি সবাইকে অনলাইনে ভোটিং কার্যক্রমে অংশ নেয়াসহ সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জাগো নিউজের কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক কুমিল্লা কণ্ঠ’র সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ৭১ টেলিভিশনের কুমিল্লা প্রতিনিধি কাজী এনামুল হক ফারুক, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের কুমিল্লার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শাহজাদা এমরান, যমুনা টেলিভিশনের কুমিল্লা ব্যুরো প্রধান খালেদ সাইফুল্লাহ্, এটিএন নিউজ টেলিভিশনের কুমিল্লা প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী খোকন, দৈনিক যায়যায় দিনের কুমিল্লা প্রতিনিধি মো. আবদুল জলিল ভূঁইয়া, দৈনিক সংবাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান, ডেইলী সান ও দৈনিক বণিক বার্তার কুমিল্লা প্রতিনিধি কাজী মীর আহমেদ মীরু, দৈনিক আমাদের কুমিল্লার স্টাফ রিপোর্টার মাসুদ আলম।
ভোটিং কার্যক্রমে সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক (আইসিটি) সোহেল কবীর, সহকারী অধ্যাপক (গণিত) কাজী মোহাম্মদ ফারুক, সহকারী অধ্যাপক (অর্থনীতি) নারগিস আফরোজ ও শরীরচর্চা শিক্ষক জিএম ফারুক।
এর আগে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ‘জাতিসংঘে বাংলা চাই’ দাবির পক্ষে স্লোগানে স্লোগানে ক্যাম্পাস মুখরিত করে তোলে ও বর্ণাঢ্য র্যালি বের করে। অনুষ্ঠানটি নগরীতে বেশ সাড়া জাগায়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ভাষার মাসে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের ৭ম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্থান দেয়ার দাবিতে এ ধরনের উদ্যোগের বিষয়টি আমাদের অনুপ্রাণীত করেছে। এ দাবি আদায়ে অনলাইনে ভোট প্রদানের জন্য যে যার অবস্থান থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়ে তারা দু’হাত তুলে অঙ্গীকার করে।
এছাড়া নগরের বাইরেও জেলার বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে জাতিসংঘে বাংলা চাই দাবিতে অনলাইনে ভোটিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
from Comillar Khabor – কুমিল্লার খবর http://ift.tt/2CJvilW
February 26, 2018 at 05:51PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.