ঢাকা, ১৭ মার্চ- ক্রিকেট বিশ্বে কয়েক বছর আগেও মিনসে হয়েই ছিলো বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ বলে-কয়েই হারাতো টাইগারদের। সেই দিন আর নেই। এখন জবাব দিতে শিখেছে বাংলাদেশ। উল্টো বলে-কয়েই অনেক প্রতিপক্ষকে হারায় সাকিব-তামিমরা। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো দলও এর বাইরে নয়। তবে মাঠে অন্যায়ের প্রতিবাদ করাটা শুক্রবার প্রথমবারের মতো করেছে বাংলাদেশ। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে মাঠ ছাড়ার পথেও ছিল টাইগাররা। পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত থাকলেও এ ঘটনার পক্ষেই হেঁটেছেন টাইগারদের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। এমনকি এটার দরকার ছিলো বলেও মনে করেন তিনি। বাংলাদেশকে যে দমিয়ে রাখার দিন শেষ এটা ক্রিকেট বিশ্বে বার্তা হিসেবে কাজ করবে বলেও মনে করেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ এ সেঞ্চুরিয়ান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শুক্রবার দারুণ এক ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এ ম্যাচ জয়ে দারুণ খুশি আশরাফুল। তার দেখা সেরা ম্যাচও বলেছেন। তবে বেশি খুশি হয়েছেন টাইগারদের আগ্রাসনে। বিশেষ করে শেষ দিকে নো-বলকে নিয়ে টাইগারদের অবস্থান মনে ধরেছে তার। ক্রিকেট বিশ্বে যে তাদের দমিয়ে রাখার দিন শেষ এটা তারই এক বার্তা বললেন সাবেক এ অধিনায়ক, এমন ঘটনা আমি আগে দেখিনি। তবে এই ঘটনা আমার মনে হয় এক দিক থেকে আমাদের দরকার ছিল। ওই মোমেন্টামটা দরকার ছিল। সাকিব যা করেছে ওইটাও ঠিক আছে, আবার সুজন ভাই যে ডিফেন্ড করেছে ওইটাও সঠিক ছিল। আমরা যে এখন বিশ্ব ক্রিকেটে বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছি এটা একটা বড় উদাহরণ। এটা একটা বার্তাও। বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ ওভারের ঘটনা। ইশুরু উদানার কাঁধের উপরে রাখা প্রথম বাউন্সারটা ব্যাটে বলে করতে পারেননি মোস্তাফিজুর রহমান। এটা ভেবেই হয়তো পরের বলও বাউন্সার দিলেন উদানা। কিন্তু টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে যে কাঁধের উপর দুটি বাউন্সার দেওয়ার এখতিয়ার নেই। তাই আবেদন জানান মাহমুদউল্লাহ। তাতে সাড়াও দেন লেগ-আম্পায়ার। কিন্তু মূল আম্পায়ার লঙ্কানদের আবেদনে নো-বল বাতিল করলেন। তাতে ক্ষোভে ফেটে পরেন মাহমুদউল্লাহ। ডাগআউটে বসা সতীর্থরাও। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান চতুর্থ আম্পায়ারকে জানান। না মানায় খেলোয়াড়দের মাঠ থেকেই বের হয়ে চলে আসতে বললেন। তীব্র প্রতিবাদ। দ্বাদশ খেলোয়াড় নুরুল হাসান যখন প্রতিবাদ করেন, তখন ধাক্কা মেরে তাকে বের করে দিতে চান কুশল মেন্ডিস। তাতে উত্তেজনা আরও বাড়ে। এক পর্যায়ে সোহানের মতো ঠাণ্ডা মেজাজের ক্রিকেটারও আঙুল তুলে শাসিয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক থিসারা পেরেরাকেও। টাইগারদের প্রতিবাদকে তাই সাধুবাদ জানিয়েছেন আশরাফুল। আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তে যে অনেকবারই বাংলাদেশের স্বপ্ন মাটিতে মিশে গেছে। দুঃস্বপ্নের মতো এখনও আশরাফুলের চোখে ভাসে সেই মুলতান টেস্টের কথা। বেশ কয়েকবারই পরিষ্কার এলবিডাব্লিউর সিদ্ধান্ত যায়নি বাংলাদেশের পক্ষে। আশরাফুলের মতে সেদিন লঙ্কান আম্পায়ার অশোকা ডি সিলভা যেন পণ করেই নেমেছিলেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন আবেদনেই সাড়া দেবেন না তিনি। স্মৃতি হাতড়ে প্রতিবেদককে আশরাফুল বললেন, সেদিন অনেকগুলো এলবিডাব্লিউর আবেদন ছিল, দেয় নাই। ইনজামামের নিশ্চিত এলবিডাব্লিউ ছিল, দেয় নাই। আমরা আবেদন করলে বলছে বেশি আবেদন করছো। আমাদের উল্টো ঝাড়ি মারতো আম্পায়াররা। ওই সময় আমরা নতুন, মাত্র আড়াই তিন বছর হয়েছে টেস্ট খেলি। আম্পায়াররা আমাদের বলতো বেশি আবেদন করলে কিন্তু খেলা বন্ধ করে দিবো। শুধু মুলতান টেস্টই নয়, বাংলাদেশের প্রায় বেশির ভাগ ম্যাচেই ভুল সিদ্ধান্তগুলো বাংলাদেশের বিপক্ষেই যায় বলে মনে করেন আশরাফুল। ২০০৭ সালেও ভারতের বিপক্ষে এমন এক ম্যাচ কাঁটা হয়ে আছে আশরাফুলের ক্যারিয়ারে। প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ২৫১ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ভারতকে। তাতে দারুণ লড়াই করেছিল টাইগাররা। কিন্তু টাইগারদের হাত থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেয় একটি ভুল সিদ্ধান্ত। শুরুতেই ধোনির একটি পরিষ্কার এলবিডাব্লিউর আবেদন নাকচ করে দেন অশোকা ডি সিলভা। শেষে তার ব্যাটেই হারে বাংলাদেশ। ৯১ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন তিনি। আশরাফুলের ভাষায়, সব ম্যাচেই একটা দুইটা আমাদের বিপক্ষে গেছে। মনে আছে ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে একটা ম্যাচে আমরা ভালো খেলছিলাম। রাজ ভাইয়ের বলে নিশ্চিত একটা এলবিডাব্লিউ ছিল ধোনির। আশোকা দেয় নাই। ওই আউটটা দিলে আমরা জিতে যেতাম। শেষে ধোনি ৯২ (আসলে ৯১) করে ম্যাচটা নিয়ে গেছিলো। এতো গেল আশরাফুলের স্মৃতির কথা। এমন অনেক ম্যাচেই আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে তিন তিনটি সিদ্ধান্ত গিয়েছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেমি-ফাইনাল খেলার স্বপ্নভঙ্গ হয় টাইগারদের। রুবেল হোসেনের বলে আউট হয়েছিলেন রোহিত শর্মা। তখন তিনি ৯০ রানে। কিন্তু নো-বল ডেকেছিলেন আম্পায়ার আলিম দার। বার বার তৃতীয় আম্পায়ারের জন্য আবেদন করলেও বিন্দুমাত্র টলেননি আলিম। আরও পড়ুন: নাগিন নাচের জন্ম যাঁর হাত ধরে এরপর আরও ৪৭ রান করেছিলেন রোহিত। মাহমুদউল্লাহর বল বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে ক্যাচ নিয়েছিলেন শিখর ধাওয়ান। তৃতীয় আম্পায়ার জুম না করে একটি অ্যাঙ্গেলে দেখেই আউট ঘোষণা করেন। ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে পরিষ্কার বোঝা গিয়েছিল সেটা ছিল ছক্কা। তাই কিছু প্রতিবাদে হয়তো ক্রিকেটবিশ্ব বুঝবে বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখার দিন শেষ। আশরাফুল বার বার এটাই মনে করিয়ে দিলেন। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় শুরু থেকে জাতীয় দলে আশরাফুল। দলে না থাকলেও এখনও খেলা দেখেন নিয়মিত। সব অভিজ্ঞতা থেকেই বললেন, এমন অনেক উদাহরণই আছে আমাদের বিপক্ষে গিয়েছে। তাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘটনাকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন আশরাফুল। সাকিব-সোহানদের প্রতিবাদে খুশি হয়েই বললেন,তখন ধমক খেতাম। ১৮ বছর পর উল্টা আমরাই ধমক দেই যে আমরাই খেলবো না। এই ১৮ বছরে আমাদের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অনেক অভিজ্ঞ হয়েছি। বুঝতে শিখেছি। এখন বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের দলে। আমরা যে বড় দল এটা তারই প্রমাণ। সূত্র: পরিবর্তন ডটকম আর/১০:১৪/১৭ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2FQwd6D
March 18, 2018 at 06:08AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন