ঢাকা, ১৮ এপ্রিল- শাওন আমার বাবার ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টির (গল্প, উপন্যাস, তার সৃষ্ট যেকোনো কিছু ) একমাত্র উত্তরাধিকার না। তাই আমাদের চার ভাইবোনের অনুমতি ছাড়া। শুধুমাত্র শাওনের অনুমতি নিয়ে, হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি নিয়ে কাজ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এমনটাই জানালেন হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নুহাশ হুমায়ূন। হুমায়ূন পুত্র আরও বলেন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল আমাদের চাচা এবং আমাদের প্রিয়জন। কিন্তু তিনি আমাদের কোনো মুখপাত্র অথবা অভিবাবক না এবং হুমায়ূন আহমেদের ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টির রাইট নিয়ে আমাদের চার ভাইবোনের হয়ে তিনি কিছু বলার অধিকার রাখেন না। গতকাল নিজের ফেসবুকে লেখা এক স্ট্যাটাসে নুহাস হুমায়ূন এই বিষয়ে দীর্ঘ কথা বলেন। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস দেবী অবলম্বনে সম্প্রতি জয়া আহসানের প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে সিনেমা। এই ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে হুমায়ূন পরিবারের অনুমতি নেয়া হয়নি বলে কিছুদিন আগে অভিযোগ করেছিলেন হুমায়ূন কন্যা শীলা আহমেদ। এবার এই বিষয়ে মুখ খুললেন হুমায়ূন পুত্র নুহাশ। তিনি বলেন, এটা কিন্তু কোনো আর্জি না বা অনুরোধ না- ভালোভাবে ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইন পড়ে দেখলেই বিষয়টি বোঝা যাবে। নুহাশ হুমায়ূনের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য প্রকাশ করা হলো। আমি নিশ্চিত অনেকেই দেবী মুক্তির জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। মানুষের আগ্রহের কারণ, এই সিনেমাটি নির্মাণের জন্য ক্যামেরার সামনে আর পেছনে খুব মেধাবী কিছু মানুষ কাজ করেছেন। কিন্তু এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে দেবী নিয়ে মানুষের আগ্রহের বড় এবং অন্যতম আরেকটা কারণ, এর চরিত্রগুলো, গল্প আর এর সাথে জড়ানো কিংবদন্তি মানুষটির নাম। অনেকেই হয়তো জানেন দেবী নির্মাণ হয়েছে আমার বাবা হুমায়ূন আহমেদের লেখা উপন্যাস থেকে আর এখানে মিসির আলী চরিত্রটি আছে। মিসির আলী- হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি করা এমন একটা চরিত্র, যাকে আমরা সবাই ভালোবাসি। কিন্তু যা অনেকেই জানেন না তা হলো, এই সিনেমাটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে আমার এবং আমার তিন বোনের (নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ, বিপাশা আহমেদ) অনুমতি ছাড়াই। আরও পড়ুন : বিয়েটা ছিল বড় দুর্ঘটনা: মোনালিসা হুমায়ূন আহমেদের সমস্ত সৃষ্টি এখন তার উত্তরাধিকারদের স্বত্বাধিকারে। আমাদের চার ভাইবোনের অনুমতি ছাড়া যে এই সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার কাজ চলছিলো, সেটা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত ছিল। যখন এই সিনেমার প্রযোজক জয়া আহসান এই বিষয়ে জানলেন, তিনি সাথে সাথেই আমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলেন এবং আমাদের চারজনের অনুমতি নেয়ার জন্য আইনগত সব ব্যাবস্থা নিলেন। তিনি এই সিনেমার মার্কেটিংসহ বাকি কাজ বন্ধ রাখলেন আমাদের চার ভাইবোনের চুক্তিপত্রে সাইন হওয়া পর্যন্ত। নিয়ম অনুযায়ী আমাদের অনুমতি ছাড়া দেবী সিনেমার কোনো কাজই শুরু হতে পারে না। তারপরও হয়েছে। কিন্তু যখন জয়া আহসান আমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন এবং আমাদেরকে তার দিকের ব্যাখ্যা দিলেন, তখন আমাদের মনে হয়েছে -এটা তার দিক থেকে একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিল। আর তিনি যে এটা সংশোধন করতে চাচ্ছেন এটা একটা দায়িত্বশীল আচরণের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু বেশিরভাগ নির্মাতারা (যারা আমার বাবার সৃষ্টি নিয়ে কাজ করেছেন/করতে যাচ্ছেন) এতটা দায়িত্বশীল আচরণের পরিচয় দেননি অথবা দিচ্ছেন না, তাই আমি কিছু জিনিস স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করতে চাই- যেন এই জাতীয় ভুল বারবার না হয়। অনেক নির্মাতাই আমাদেরকে জানিয়েছেন, তারা আমার বাবার স্ত্রী-মেহের আফরোজ শাওনকে এককালীন কিছু টাকা দিয়ে অনুমতি নিয়েছেন এবং নাটক নির্মাণ করেছেন। শাওন আমার বাবার ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টির (গল্প, উপন্যাস, তার সৃষ্ট যেকোনো কিছু ) একমাত্র উত্তরাধিকার না। তাই আমাদের চার ভাইবোনের অনুমতি ছাড়া, শুধুমাত্র শাওনের অনুমতি নিয়ে, হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি নিয়ে কাজ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। কিছু নির্মাতার অজুহাত হলো, আপনাদের কে পাওয়া কঠিন আসলেই কি তাই? সিনেমা নির্মাণ করা একটা কঠিন কাজ হতে পারে। কিন্তু ঢাকা শহরে কোনো মানুষের সাথে যোগাযোগের উপায় বের করা বেশ সহজ। আমার ফেইসবুক পেইজটা পর্যন্ত ভ্যারিফাইড। তাহলে আর কত সহজ উপায়ে আমার বা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চান? আরেকটা সাধারণ ভুল ধারনা হলো- আমাদের চাচা মুহাম্মদ জাফর ইকবালের অনুমতি নেয়া আর আমাদের চার ভাইবোনের অনুমতি নেয়া একই কথা। আমার মনে হয় এটা খুব স্পষ্ট করা দরকার। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল আমাদের চাচা এবং আমাদের প্রিয়জন। কিন্তু তিনি আমাদের কোনো মুখপাত্র অথবা অভিবাবক না এবং হুমায়ূন আহমেদের ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টির রাইট নিয়ে আমাদের চার ভাইবোনের হয়ে তিনি কিছু বলার অধিকার রাখেন না। আশা করি, আমার এই লেখাটি কিছু সাধারণ ভুল ধারনা দূর করবে, আর যেই সব নির্মাতারা আমার বাবার সাহিত্য নিয়ে কাজ করতে চান, তারাও নির্মাণের আগে প্রয়োজনীয় আইনগত ধাপগুলো ভাল করে জেনে নিবেন। এটা হতে পারে মিসির আলী, হিমু অথবা আমার বাবার অন্য যেকোনো অনবদ্য সৃষ্টি সেটা যাই হোক, এইসবই এখন অমূল্য সম্পদ আর তার উত্তরাধিকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব খেয়াল রাখা এইসব যেন সঠিক আর মেধাবী নির্মাতার হাতে পরে। আমার মনে হয়, মাঝে মাঝে না বলতে পারাটাও এখন আমাদের জন্য খুব জরুরি। আমি নিশ্চিত হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা তার কাহিনি নিয়ে তৈরি হাতে গোনা কয়েকটা অসাধারণ কাজই পছন্দ করবে, একশোটা মাঝারি মানের কাজের চেয়ে। আর আসলেই কি প্রত্যেকটা সাহিত্যকর্মকে সিনেমা অথবা নাটক বানানোর প্রয়োজন আছে? আমার বাবাতো এমনই আমাদের বুকের মধ্যে বেঁচে থাকবেন তার সৃষ্টির জন্য- তার কাহিনি নিয়ে নাটক বা সিনেমা নির্মাণ তো তার অবস্থান পরিবর্তন করছে না আমাদের কাছে। জয়া আহসানের জন্য শুভকামনা থাকল। আর আশা করছি অন্য নির্মাতারাও এটাকে সঠিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখবেন, কীভাবে সবার জন্য সম্মানজনকভাবে আমার বাবার ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি নিয়ে কাজ করা যায় । এটা কিন্তু কোন আর্জি না বা অনুরোধ না- ভালভাবে ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইন পড়ে দেখলেই বিষয়টি বোঝা যাবে। সূত্র: আরটিভি অনলাইন আর/১৭:১৪/১৮ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2H9l7hR
April 19, 2018 at 12:13AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন