বিশ্বনাথে অপরাধ দমনে থানার ওসি হার্ডলাইনে!

IMG_20180412_154832_695মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ (সিলেট) থেকে :: অপরাধ-অপকর্ম দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে সিলেটের বিশ্বনাথ থানা পুলিশ। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, অপহরণ, অসামাজিক কার্যকলাপ, মদ-জুয়া ও ভারতীয় তীর খেলার বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন বিশ্বনাথ থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম।

জানাগেছে, বিশ্বনাথে চলিত বছরের জানুয়ারী মাসের শেষের দিকে ও মার্চ মাসের শুরু দিকে ৬ খুন, ৩ আত্বহত্যা ও রহস্যজনক একজনের মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতির দিকে যাচ্ছিল। হত্যাকান্ডের ঘটনায়, বাড়ছিল লাশের মিছিল। একের পর এক হত্যাকান্ডের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। তখন উপজেলায় উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে অপরাধের মাত্রা।

একের পর এক খুন ও শিশু নির্যাতন যেন নিত্যনৈমিত্তিক রুটিনে পরিণত হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এ ধরণের বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক কর্মকান্ডে প্রবাসী অধ্যুষিত জনপদ বিশ্বনাথে রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি হলেও থানা পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা জনমনে তৈরি করেছে নানা প্রশ্নের। খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের কাউকেই এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করতে না পারায় পুলিশের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি কেউ আবার পুলিশের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

বিগত কয়েক মাসের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে বিব্রতকর অবস্থা থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে মাঠে কোমর বেঁধে নেমেছেন বিশ্বনাথ থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম। তাঁর এমন উদ্যোগ অপরাধীদের মধ্যে ছড়িয়েছে আতংক ও আশার সঞ্চার করেছে উপজেলাবাসীর মনে।

গত বছরের ১২ জুলাই রাতে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন শামসুদ্দোহা পিপিএম। এর আগে তিনি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানায় কর্মরত ছিলেন। বিশ্বনাথে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে আসছেন তিনি। মতবিনিময় করেছেন এ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে। তাঁর যোগদানের পূর্বাপর চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোসহ উপজেলাবাসীর নানা অভিযোগ আমলে নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ওসি। থানার ভিতরগত কর্মকান্ড ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি ইতিমধ্যেই মাঠ পর্যায়েও বাড়ানো হয়েছে পুলিশি টহল। তিনি যোগদানের বেশকিছু জুয়ার আসরে হানা দিয়ে টাকা ও সরঞ্জামসহ জুয়াড়ীদেরকে আটক করেছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে হত্যা-ডাকাতিসহ বিভিন্ন মামলার আসামীদেরকেও। উপজেলাজুড়ে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারী। পুরো উপজেলা সদরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার জন্যেও কাজ শুরু করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে থানা কম্পাউন্ডে তাঁর আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওপেন হাউজ ডে ও কমিউনিটি পুলিশিং বিষয়ক মতবিনিময় সভাতে অপরাধ দমনের পাশাপাশি থানায় আসা মানুষজনকে আন্তরিক সেবাদানের অঙ্গিকার পূন:ব্যক্ত করেন তিনি।

সম্প্রতি ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, উপজেলা সদরের পতিতা আস্তায় অভিযান, গত বছরের মে মাসে উপজেলার কোনারাই গ্রামে ডাকাতির লুণ্ঠিত মোবাইল সেট উদ্ধার ও নারীসহ দুই ডাকাত গ্রেফতার। সর্বশেষে গত সোমবার স্কুল ছাত্র অপহরণের তিনঘন্টা পর অপহৃত শিশু উদ্ধার করে থানা পুলিশ। বর্তমানে থানার ওসি অপধার দমনে যেন হার্ড লাইনে।

এবিষয়ে কথা হলে থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, জনগণের মনের যে বাসনা বা আকাংখা আছে, আমি তার প্রতিফলন ঘটাতে চাই। পুলিশ-জনগণের রসায়নের মাধ্যমে পরিবেশের উন্নতি করতে চাই। তবে এটা একার পক্ষে সম্ভব নয়। সব ধরণের অপরাধ বন্ধে পুলিশকে সহযোগিতার পাশাপাশি জনগণের সচেতনতাও দরকার বলে তিনি মনে করেন। তাঁর থানাতে আর কোনো অপরাধ-অপকর্ম হতে দেয়া হবে না। অপরাধী যেই হোক। তাদেরকে দমনে কোনো ছাড় দেবেন না তিনি।

তিনি বলেন, থানার দরজা আপনাদের জন্যে ২৪ঘন্টা খোলা থাকবে। কোনো অভিযোগ নিয়ে এলে সরাসরি আমার কাছে চলে আসবেন। সবাই সমানভাবেই আইনি সেবা পাবেন।’ তাঁর কথা ও কাজে আশার আলো দেখছেন উপজেলাবাসী। একটি অপরাধমুক্ত, ন্যায়বিচার ভিত্তিক আলোকিত জনপদ হিসেবে বিশ্বনাথ উপজেলাকে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁর অঙ্গিকারের সফল বাস্তবায়ন দেখতে চান প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথের মানুষজন।



from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2IPq7Vp

April 12, 2018 at 03:55PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top