সুরমা টাইমস ডেস্ক:: সরকারের ১৮টি পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দে অনিয়ম করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুকক) দায়ের করা ১৫টি মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রাজউক অফিসারের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে বিচারিক আদালতে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসসহ আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে রাজউকের তৎকালীন অফিসার কাজী রিয়াজুল মনিরের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জানান, ১/১১ -এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মামলাগুলো করা হয়েছিল। বিচারিক আদালতে মামলাগুলো সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টের রুলসহ স্থগিতাদেশ থাকায় বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আজকে হাইকোর্টের জারি করা ওই রুল খারিজ করে দেয়ায় এসব মামলা চলতে আর কোনো বাধা থাকল না।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সরকারি ১৮টি পরিত্যক্ত বাড়ি সাজানো দরপত্র ডেকে অস্বাভাবিক কম দামে বিক্রির অভিযোগে ২০০৭ সালের মার্চে সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাসসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করে দুদক।
মামলায় ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র দেয়া হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাজানো দরপত্রের মাধ্যমে এবং প্রকৃত দামের চেয়ে কম দাম দেখিয়ে ১৮টি সরকারি বাড়ি বিক্রি করে আসামিরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ১২৭ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা। অভিযোগপত্রে আরও ১৪ আসামির নাম যুক্ত হয়। তাদের বিরুদ্ধে সুবিধা আদায়ের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ জজ-৩ আদালতে বিচারাধীন ১৫টি মামলায় বিনা দরপত্রে ১৮টি সরকারি বাড়ি বিক্রি সংক্রান্ত ১২৭ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৯ টাকা দুর্নীতির অভিযোগে আসামি মির্জা আব্বাসসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন এ আদালতের তৎকালীন বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন।
অভিযোগ গঠনের আদেশে উল্লেখ করা হয়, ‘পরিত্যক্ত বাড়ি নম্বর এনডব্লিউ (আই)-৬, রোড নম্বর-৫৩, গুলশান, ঢাকার নিলাম দরপত্র আহ্বান করা হয়। বাড়ি নম্বর কে-৬, সড়ক নম্বর-৮৯, গুলশান, বাড়ি নম্বর সিএনজি-১৬,সড়ক-১১৩, গুলশান, বাড়ি নম্বর বি-৫, সড়ক নম্বর-১১৩, গুলশান, বাড়ি নম্বর-১২০, সড়ক-২, পুরাতন ধানমণ্ডি, বাড়ি নম্বর-১৩৯, সড়ক নম্বর-২, ধানমণ্ডি, বাড়ি নম্বর-৫৪০/এ (পুরাতন), সড়ক নম্বর-১২, ধানমণ্ডি, বাড়ি নম্বর-৫৪০/বি (পুরাতন), সড়ক নম্বর-১২ (পুরাতন), বাড়ি নম্বর-৭২৩/এ (পুরাতন), সড়ক নম্বর-১৪ (পুরাতন), বাড়ি নম্বর-৭২৩/বি, সড়ক নম্বর-১৪ ধানমণ্ডি, ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার ১৭ নম্বর ও ১৮ নম্বর কলেজ স্ট্রিট, বাড়ি নম্বর-৭/১, নওরতন কলোনি, শান্তিনগরসহ সর্বমোট ১৮টি পরিত্যক্ত বাড়ি রাজউক কর্তৃক সাজানো দরপত্রে কারচুপি ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ পছন্দের ব্যক্তিদের পাইয়ে দিয়ে প্রকারান্তরে নিজে লাভবান হয়ে সরকারের ১২৭ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৯ টাকার অর্থের ক্ষতি সাধন করেন।
সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ‘দ্য বাংলাদেশ অ্যাবানডন্ড প্রপার্টি (কন্ট্রোল, ম্যানেজমেন্ট ও ডিসপোজাল) অর্ডার, ১৯৭২ অনুযায়ী উল্লিখিত ১৮টি সরকারি বাড়ি বিক্রির ব্যবস্থা না করে লাভবান ও অন্যান্য প্রভাবশালীদের লাভবান করার জন্য গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলীদের দর বেশি হওয়া সত্ত্বেও তা আমলে না নিয়ে রাজউক কর্তৃক সাজানো কম মূল্যের দরপত্রের মাধমে মূল্যায়ন না করে বিক্রির অনুমোদন করেন।
আসামি মির্জা আব্বাসসহ অপর আসামিরা দণ্ডবিধির ৪০৯, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
উল্লিখিত মামলাটির বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মো. শফিউল আলম আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ মামলার কার্যক্রম বন্ধ করতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন মির্জা আব্বাস। আজ ওই রিট খারিজ করা হলো। এখন মামলা চলতে আর কোনো বাধা নেই।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস https://ift.tt/2Ivcryy
April 06, 2018 at 12:15AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন