কলকাতা, ১০ এপ্রিল- পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে এখনো উত্তপ্ত গোটা রাজ্য। গতকাল সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন থাকলে রাতে পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য আরও এক দিনের সময় বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে বলা হয়, আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবে প্রার্থীরা। ফলে যেসব প্রার্থী তৃণমূলের হামলা ও বাধার মুখে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি, তাঁরা আজ সকালে প্রস্তুতি নেয় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু সকালেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন আরেকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার যে এক দিন সময় বাড়িয়ে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তা বাতিল করে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় রাজ্যের সব বিরোধী দল। বিধানসভায় বিরোধী সিপিএম দলের পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, গতকাল রাতে তৃণমূলের চার মন্ত্রী রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর নির্দেশ বাতিল করার জন্য চাপ দেন। আজ সকালে নির্বাচন কমিশনার সেই অনুযায়ী আরেকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার এক দিনের সময় বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে দেয়। যাঁরা সরকারি দলের বাধার মুখে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি, তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আজ কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা করেছে বিজেপি। অন্যদিকে বিজেপি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আরেকটি মামলা করে আবেদন করে, যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি সরকারি দলের বাধার মুখে, তাঁদের যেন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করার আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। আগামীকাল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা। ২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া। শেষ হওয়ার কথা ৯ এপ্রিল। আর নির্বাচন হওয়ার তারিখ ১, ৩ ও ৫ মে। আজ মঙ্গলবারও এই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে বীরভূমের বোলপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ও হাওড়ায়। আরও পড়ুন: মমতাকে অর্ধেক আকাশ-এ পূর্ণ পঞ্চায়েত উপহার দেবে তৃণমূল! অভিনব প্রয়াস জঙ্গলমহলে আজ নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে সিপিএমের মহিলা শাখা এবং বাম দল। তারা দাবি তুলেছে, যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি, তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি তাঁর জেলা বিরোধী শূন্য করবেন। সে জন্য বীরভূম জেলা পরিষদের ৪২টি আসনের মধ্যে ৪১টি আসনেই বিরোধী বিজেপি, বাম দল ও কংগ্রেস দল কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন জেলার এসডিও ও বিডিও অফিসে ঢোকার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন তৃণমূলের সমর্থকেরা। ফলে কোনো বিরোধী প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিয়ে হাজির হতে পারেননি বিডিও এবং এসডিও অফিসে। তবে একটি আসনে এক বিজেপি প্রার্থী কোনো রকমে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছেন। ফলে বীরভূম জেলা পরিষদের ৪২টি আসনের মধ্যে ৪১টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছে তৃণমূল প্রার্থীরা। অন্যদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা, নির্বাচনকালীন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ এবং মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিজেপির দায়ের করা একটি মামলার শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট গতকাল প্রকারান্তরে খারিজ করে দেয় বিজেপির মামলাটি। বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন সেহেতু আর সুপ্রিম কোর্ট এই নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবে কোনো প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি রাজ্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে পারেন। যদিও ২০১৩ সালের সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর আবেদন করায় সুপ্রিম কোর্ট তাতে অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু এবার রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার আবেদন করেননি। রাজ্য নির্বাচন কমিশন দপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে, এবার এই রাজ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৮ হাজার ৬৫০টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ২১৭টি আসন এবং জেলা পরিষদের ৮২৫টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে। সূত্র: প্রথম আলো আর/১৭:১৪/১০ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2qoqw9l
April 11, 2018 at 01:26AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন