মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথে আবাদকৃত বোরো ধান কাটার জন্য আহবান জানিয়েছেন ইউএনও ও উপজেলা কৃষি অফিস। আজ শনিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালুকদারের ফেসবুক আইডি ও উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে এ আহবান জানানো হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশংকায় থাকার কারণে এলাকার কৃষকদের পাঁকা বোরো ধান দ্রুত কাটার জন্য এ আহবান করা হয়।
এদিকে, ধান কাটার শ্রমিক সংকট থাকায় বোরো ধান কাটা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশংকায় এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন।
গত বছর আমরা ৩০০ টাকা রোজ দিয়ে বোরো ধান কাটিয়েছি। কিন্তু এবছর ৪০০-৫০০ টাকা রোজ দিয়েও ধান কাটার জন্য শ্রমিক খোঁজে পাচ্ছিনা। ফলে পাঁকা ধান জমিতেই পড়ে আছে। কথাগুলো গতকাল শনিবার দুপুরে সিলেটের বিশ্বনাথে বাসিয়া ব্রীজের ওপর শ্রমিককের জন্য অপেক্ষামান কৃষক রইছ আলী বললেন। এসময় তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলেয়ে অপর কৃষক শহিদ মিয়া, মঈন উদ্দিনসহ অনেকেই শ্রমিক সংকটের কথা জানান। এসময় তারা আরোও বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আমাদের এলাকায় ধানের ফলন কিছুটা ভালো হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারনে পাঁকা ধান জমিতে থাকা সত্ত্বেও ঘরে তোলা যাচ্ছেনা।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিক সংকটের কারণে নিজেদের ধান জমিতে নষ্ট হচ্ছে দেখে ধান কাটতে শুরু করেছেন স্কুলগামী ছাত্র বৃদ্ধা মানুষরা। অনেকেই মনের আনন্দে ধান কাটলেও অনেকেই আবার নিজেরদের গুরত্বপপূর্ণ কাজ ফেলে রেখেও ধান কাটচ্ছেন। তবুই যাতে পাঁকা ধান জমিতে পড়ে না থাকে। উপজেলার প্রতিটি এলাকায় বোরো ধান কাটা গত কয়েক দিন পূর্বে থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক সংকটনের জন্য অনেক জায়গায় ধান কাটতে পারেননি চাষিরা।
জানাগেছে, গত বছরে আগাম বন্যায় হাওরের ফসল রক্ষা বাধ ভেঙ্গে কাচা ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলার সবক’টি হাওর থেকে কৃষকরা এক মুঠো ধান গোলায় তুলতে না পারলেও চলতি বোরো মৌসুমে হাওরে বাম্পার ফসল হওয়ায় এবার কৃষক কৃষানীদের মধ্যে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ সহায়তায় ভিজিডি, ভিজিএফ চাল, নগদ অর্থ এবং কৃষি উপকরণ, সার বিজ, কৃষকদের প্রনোদনাসহ সকল প্রকার সহযোগিতা এখনো চলমান রয়েছে। বোরো মৌসুমের শুরুতেই এলাকাজুড়ে দেখা যাচ্ছে সবুজের সমারোহ। আগাম ফলনকৃত ধান পেঁকে যাওয়ায় কৃষকরা ধান কাটার যন্ত্র নিয়ে সকাল থেকেই জমির দিকে ছুটে যাচ্ছেন আর কৃষানীরা তাদের সোনালি ফসল গোলায় উঠাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এবছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার উপজেলার কৃষকদের মনে আনন্দেও বন্যা বইছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বোরো চাষাবাদ হয়েছে ১৩হাজার ৭৯৮ হেক্টর। এর মধ্যে উপশী জাতীয় ধান চাষ করা হয়েছে ১৩হাজার ৭৬৮হেক্টর জমিতে। হাইব্রিড চাষ করা হয়েছে ৮৮০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের টেপু, গর্চি, গাছমাল ১৫০ হেক্টর। উপজেলার হাওরগুলোতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে সকল ধানা গোলায় তুলতে আরো ১৫-২০দিন সময় লাগবে।
উপজেলা দৌলতপুর ইউনিয়নে হাওর ও বিলের সংখ্যা বেশী থাকায় এ ইউনিয়নে বেশী আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চাউলধনী, গোয়াহরি গ্রামের বড় বিল, দূর্যাকাপন হাওর, দরঙ্গবিল। এছাড়া বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের বেলার হাওর, ইকরাম বিল (পশ্চিম শ্বাসরাম) রামপাশা ইউনিয়নের নলিয়া বিল, রামচন্দ্রবিল, দোহাল বিল, উকলা বাধ, পাচলার খাল, ইলামেরগাঁও, লামাকাজী ইউনিয়নের হাজারাই বাধ, ভূরকির বিলে ব্যাপকহারে বরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
ফটোগ্রাফার জাহেদ খান বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ধান কাটতে হচ্ছে। তা না হলে জমির অনেক ধানই নষ্ঠ হয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আলীনূর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের এবিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই কৃষকরা তাদের বোরো ধানগুলো কেটে ঘরে তুলা যায়।
তিনি বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান কাটার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। ইতিমধ্যে হাওরের ৮০ ভাগ ও এলাকায় প্রায় ৭০ ভাগ ধানা কাটা হয়েছে। তিনি গতকাল শনিবার উপজেলার চাউলধনী হাওর পরিদর্শন করেছেন বলে জানান।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2HhGdXb
April 21, 2018 at 06:47PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন