মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ থেকে :: সূর্যাস্তের মধ্য দিয়েই বিদায় নিলো আরো একটি বছর ১৪২৪। অতীতের সকল দুঃখ গ্লানী,হিংসা বিদ্বেষকে ভুলে পদার্পণ করতে যাচ্ছে নতুন একটি বছর ১৪২৫। নতুন বছরকে বরণ করতে তাই পিছপাও নয় উৎসব প্রেমী বাঙালী। পহেলা বৈশাখকে বরন করতে তাই সারাদেশবাসীর মত সিলেটের বিশ্বনাথবাসীও প্রস্তুত বৈশাখ বরণে। পহেলা বৈশাখকে বরন করে নিতে উপজেলার প্রতিটি গ্রামের ছেলে মেয়ের মনে বইছে খুশির আমেজ তাদের মনে এখন একটাই চিন্তা তারা কিভাবে কালকের দিনটিকে বরন করে নিবে,পার কররে। এদিকে, পহেলা বৈশাকের দিনে পবিত্র শবে মেহরাজ। তাই পহেলা বৈশাখে থাকছেনা কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উপজেলা সদরের বিপনীবিতান গুলোতেও পড়েছে উপচে পড়া ভির। জমে উঠেছে ফুটপাতের দোকানগুলো। বিক্রি হচ্ছে লাল সাদা রঙ্গের কাপর এবং ছেলেদের পাঞ্জাবী, শুধু তাই নয় পহেলা বৈশাখকে বরন করতে ব্যাপক প্রস্তুত গ্রহন করেছে উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
এসো হে বৈশাখ এসো এসো..। কাল পহেলা বৈশাখ ১৪২৫ বাংলা। প্রতিবছর এই দিনে বাংলা সাজে নানান রঙে। বাঙালী সাজে নানা ঢঙ-এ। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে বিশ্বনাথে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। রকমারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
পুরাতন ও জীর্ণতাকে অতিক্রম করে নতুন ও পরিবর্তনকে আহ্বান জানানোর শ্রেষ্ঠ সময় এই বৈশাখ। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আগামীকাল ১ বৈশাখ শনিবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সামাজিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বর্ষবরণ উৎসবের।
বৈশাখী উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ মাঠে উপজেলা প্রশাসন ও বিশ্বনাথ নববর্ষ উদযাপন পরিষদ এবং বিশ্বনাথ থিয়েটারের পরিচালনায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সকাল ৯টায় জাতীয় সংগীত, সকাল ১০টায় মঙ্গলশোভাযাত্রা, সকাল ১১টায় আলোচনা সভা, দুপুর ১২টায় কাবাডী খেলা, সাড়ে ১২টায মোরগের লড়াই, বেলা ২টায় হাড়িভাঙা, বেলা ৩টায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও পুরস্কার বিতরণ। মঙ্গলশোভা যাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেট-২ আসনের সাবেক সংস সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী। আবহমান বাংলার এই চিরায়ত উৎসবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করার সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিশ্বনাথ নববর্ষ উদযাপন পরিষদের আহবায়ক অধ্যক্ষ নেহারুন নেছা, সদস্য সচিব নবীন সোহেল।
নতুন বছরে নতুন পোষাক গায়ে জড়িয়ে আনন্দের চূড়ায় উঠার বাসনা থেকে অনেকেই উপজেলার মার্কেটগুলোতে আসছেন। নিজের পছন্দের পোষাক কিনে তবেই বাড়ি ফিরছেন। বৈশাখী কেনাকাটায় ছোট-বড় বিপনী বিতানগুলোর পাশাপাশি ফুটপাতের ব্যবাসায়ীদেরও সময় ভালো যাচ্ছে। সারাদিন ক্রেতার ভিড় সামালে নিচ্ছেন হাসি মুখে। অনেক ব্যবসায়ী ঈদ-পূজার পরে বৈশাখের বেচা-কেনাকে বছরের অন্যতম ব্যবসার সময় হিসেবে ধরে নিয়েছেন।
একজন ব্যবসায়ী জানালেন, প্রতিবারের মতো এবারও বৈশাখী বেচা-কেনায় নারী ও শিশুদের পোষাক বেশী বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ছেলেদের পাঞ্জাবিটা একটু বেশী চলছে। বৈশাখ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের রকমারি পোশাক শোভা পাচ্ছে প্রতিটি দোকানে।
পহেলা বৈশাখে ইলিশ-পান্তা খাওয়ার একটি রেওয়াজ ধীর্ঘদিনের। গত বছরের ন্যায় এবছর এই রেওয়াজে কিছুটা ভাটা পড়বে। কেননা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বৈশাখে ইলিশ খাবেন না এমন খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মূলত ইলিশ রক্ষা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বৈশাখে খাবারের তালিকায় ইলিশ না রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে গণমাধ্যমে।
তাই বিকল্প হিসেবে পান্তার সাথে হরেক রকম ভর্তা, শুটকী ভোনাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সবকিছুর পরও ইলিশ ছাড়া বাঙালি বৈশাখের স্বাদ যেন পানসে হয়ে যায়। বাঙালির আবহমান সংস্কৃতির এই উৎসবকে নির্বিঘন করতে নিরাপত্তামূলক প্রস্তুুত গ্রহণ করছে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানাযায়, পহেলা বৈশাখকে ঘিরে থানা পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। উপজেলা জুড়ে মানুষের ঢল নামবে, মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা হবে-এসব বিষয়কে মাথায় রেখে বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। নিরাপত্তার ব্যাপারে সামান্যতম ছাড় দিতেও নারাজ পুলিশ।
উপজেলার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে পুলিশ। গোয়েন্দা সদস্যরাও পুলিশের সাথে কাজ করবে। পোশাকধারী পুলিশের সাথে সাথে সাদা পোশাকের পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা উপজেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কাজ করবেন।
এদিকে রঙ নিয়ে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি সয্য করা হবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের কাজে কাউকে দেখা গেলে সাথে সাথে আটক করা হবে। বৈশাখের আনন্দের মধ্যে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খল কর্মকান্ড চলতে দেয়া হবে না বলেও হুশিয়ারি করেছে পুলিশ প্রশাসন। তাছাড়া পহেলা বৈশাখে ভুভুজেলা বাজানো, মোটরসাইকেলে দলবদ্ধভাবে হর্ণ বাজিয়ে জনবিরক্তি সৃষ্টি, খোলা ট্রাকে উপজেলাজুড়ে বাদ্য বাজিয়ে প্রদক্ষিণ এসব কাজকে নিষিদ্ধ করেছে থানা পুলিশ।
অপরদিকে, এই প্রথম পুলিশ প্রশাসনের আয়োজনে পহেলা বৈশাখে এলাকার জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের ফুল দিয়ে বরণ ও আপ্যায়নের আয়োজন করা হয়েছে।
বিশ্বনাথ থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, পহেলা বৈশাখকে ঘিরে পুলিশ বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যেই সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কোনো ধরনের বিশৃংখলা করার চেষ্টা হলে তাৎক্ষনিক আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখে পুলিশ প্রশাসনের আয়োজনে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ইলিশ মাছে পরিবর্তনে শুকটি-বর্তা থাকবে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2H19bPa
April 14, 2018 at 12:49PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন