বলিউডের মহাতারকা সালমান খান। তাঁর সিনেমা মানেই সুপার ডুপার হিট। লগ্নিকারীদের পকেটে কোটি কোটি রুপি। তাঁর সিনেমায় কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ বিনিয়োগ করে নিশ্চিন্তে থাকেন পরিচালক-প্রযোজকেরা। তিনি এতই জনপ্রিয় যে কোথাও গেলে ভক্তদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। এরপরও সালমানের জীবনযাপন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ব্যাপক। তবে সালমানের ব্যাড বয় ভাবমূর্তি তাঁর খ্যাতির কাছে তুচ্ছ। কয়েক বছর ধরে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য তাঁর কর্মকাণ্ড এই ব্যাড বয় ভাবমূর্তি প্রায় ঢেকেই দিয়েছিল। অবৈধভাবে হরিণ শিকারের দায়ে সাজা পাওয়ায় সালমান খানের পুরোনো অধ্যায় ফিরে এসেছে। ২০ বছর আগে রাজস্থানে হরিণ হত্যার দায়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পাঁচ বছরের দণ্ড পেয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন তিনি। তবে এমন অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে এই প্রথম নয়। এর আগেও বন্য প্রাণী হত্যা, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে এক ব্যক্তির মৃত্যু, প্রেমিকাকে নির্যাতন, খোলামেলা বক্তব্য, রূঢ় আচরণের কারণে খবরের শিরোনাম হয়েছেন সালমান। বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, এই তারকা বিপজ্জনক জীবন যাপন করেন। বেশ কয়েকবার তিনি আইন ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। সংরক্ষিত বন্য প্রাণী হত্যার পাশাপাশি ২০০২ সালে তিনি মুম্বাইয়ে পাঁচ গৃহহীন ব্যক্তির ওপরে গাড়ি তুলে দেন। এতে একজনের মৃত্যু হয়। সাবেক প্রেমিকাকে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর আগেও বন্য প্রাণী হত্যার দায়ে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেও পার পেয়ে যান। ২০০২ সালে মুম্বাইয়ে তাঁর গাড়ির নিচে পড়ে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। ২০১৫ সালের মে মাসে আদালত তাঁকে অভিযুক্ত করে পাঁচ বছরের সাজা দেন। তবে ওই বছরের ডিসেম্বরে হাইকোর্ট তাঁকে ওই সাজা থেকে রেহাই দেন। গত বছর ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়। এখনো তা বিচারাধীন। ১৯৯৮ সালে এই হরিণ হত্যা তাঁর প্রথম বড় ধরনের আইন লঙ্ঘনের ঘটনা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজস্থানের যোধপুর আদালতের বিচারপতি দেব কুমার খাতরি রায় দেওয়ার সময় সালমানকে হ্যাবিচুয়াল অফেন্ডার হিসেবে চিহ্নিত করেন। এটি ছিল সালমানের বিরুদ্ধে বন্য প্রাণী হত্যার তৃতীয় মামলা। আগের দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেও পরে রাজস্থানের হাইকোর্টে তিনি খালাস পেয়েছিলেন। ২০০৬ সালে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর এক সপ্তাহের কম সময় তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন। ৫২ বছর বয়সী এই অভিনেতা প্রায় ১০০টি হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। রোমান্টিক চরিত্রের পাশাপাশি অ্যাকশন হিরো হিসেবে তিনি সমান জনপ্রিয়। অভিনয়ের জন্য বেশ কয়েকটি বড় পুরস্কার জিতেছেন। ধনী পরিবারের ইংরেজিতে পটু দর্শক থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তএমনকি বস্তির দরিদ্র লোকজন যাদের কাছে ৩৫০ রুপি দিয়ে সিনেমার টিকিট কেনা কষ্টাসাধ্য, তারাও সালমানের ভক্ত। তাঁর সিনেমাগুলো বছরের বিশেষ সময় যেমন: ঈদ, পূজা, বড়দিনকে সামনে রেখে মুক্তি দেওয়া হয়। হাজার হাজার প্রেক্ষাগৃহে সেসব সিনেমা প্রদর্শিত হয়। সালমানের সিনেমা দেখতে ওই সময় প্রেক্ষাগৃহগুলো দর্শকপূর্ণ থাকে। পর্দায় তাঁর প্রতিটি দৃশ্য তাৎক্ষণিকভাবে দর্শকদের কাছে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়। যখন তিনি নায়িকার সঙ্গে প্রেম করেন, তখন দর্শক সাড়া দেয়। যখন তিনি নাচেন, তখন দর্শক শিস বাজিয়ে তাতে তাল মেলায়। বাস্তবে এই তারকার বিপজ্জনক জীবনযাপন আলোচনায় এলেও তা ছাপিয়ে তাঁর খ্যাতি এনে দিয়েছে দীর্ঘস্থায়ী এক ভাবমূর্তি। নানান সমালোচনা, বিতর্ক ও রূঢ় আচরণের অভিযোগ থাকার পরও সালমানের ভক্তরা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত। এটা দিনে দিনে বাড়ছে এবং তাঁর হিট সিনেমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। টাইগার জিন্দা হ্যায়, সুলতান, প্রেম রতন ধান পায়ো, বজরঙ্গি ভাইজান, দাবাং এবং দাবাং-২ এর মতো ব্লকবাস্টার সিনেমা তাঁর সেই জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিরই ইঙ্গিত দেয়। ডাচ রিয়েলিটি শো বিগ ব্রাদার এর হিন্দি সংস্করণ বিগবস এর ১১টি সিজনে সালমান খান উপস্থাপক ছিলেন। তাঁর কারণে ওই অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি জনপ্রিয়। তাঁর ফেসবুক পেজের অনুসারী ৩ কোটি ৬০ লাখ। আর টুইটারে অনুসারীর সংখ্যা ৩ কোটি ২৫ লাখ। সালমান খানের দুই ভাই আরবাজ খান ও সোহেল খানও অভিনয় করেছেন। তাঁদের বাবা জনপ্রিয় চিত্র নাট্যকার সেলিম খান। পার্টিতে সালমানের মারমুখী আচরণ বলিউডের গসিপ কলামগুলোর দীর্ঘদিনের রসদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বারবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাঁর এমন বাজে আচরণের একটি হচ্ছে, একবার ক্ষুব্ধ সালমান রেস্তোরাঁয় সাবেক প্রেমিকার মাথায় কোকাকোলার বোতলের পুরো পানীয় ঢেলে দিয়েছিলেন। বিশ্বসুন্দরী জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সময় তাঁকে সালমান মারধর করতেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে সালমান এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। নারীদের বিষয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের কারণেও তিনি সমালোচিত হন। সুলতান সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ব্যস্ততা ও পরিশ্রমের বিষয়টি তুলে ধরে একবার তিনি বলেছিলেন, তিনি এতই ক্লান্ত যে ধর্ষণের শিকার নারীর মতো বোধ করছেন। তাঁর এমন অশালীন মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নানান শ্রেণির মানুষ। ওই সময় দেশটির ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন সালমানকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেয় এবং হাজির হতে তলব করে। তাঁর হয়ে তাঁর বাবা সেলিম খান ক্ষমা চান। তাঁর ভাইয়েরা এমন মন্তব্যকে যথাযথ হয়নি বলে মন্তব্য করেন। তবে সালমান স্বয়ং ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানান। আইনজীবীর মাধ্যমে সালমান বলেন, ওই কমিশনের এমন নির্দেশ দেওয়া এখতিয়ারবহির্ভূত। দাম্ভিকতা দেখানোর মধ্যে দিয়ে কমিশনের নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। সূত্র: প্রথম আলো আর/১৭:১৪/০৬ এপ্রিল



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2q8Fql6
April 07, 2018 at 01:16AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top