কতো সহজে সাংবাদিককে নির্যাতন করে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে দিচ্ছে!

azad-3রাজনৈতিক ক্ষমতা আর অবৈধ অর্থ থাকলে এই দেশে যে সব সম্ভব তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ সম্প্রতি (১৩ এপ্রিল) ঘটে গেল সুনামগঞ্জের তাহেরপুর থানা এলাকায়। এদেশে যে কাউকে ইচ্ছে করলেই তুলে নিয়ে নির্যাতন করে পুলিশের কাছে অবৈধ সামগ্রিসহ হস্তান্তর করা যায়। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ সাংবাদিক হাবিব সরোয়ার আজাদ।

হাবিব সরোয়ার আজাদ কোন ছোট খাট পত্রিকায় কাজ করা সাংবাদিক নয়। বরং দেশের শীর্ষস্থানীয় বাংলা এবং ইংরেজী দৈনিকের সাংবাদিক। তিনি একাধারে শীর্ষ স্থানীয় বাংলা দৈনিক যুগান্তরের ষ্টাফ রিপোর্টার এবং ইংরেজী দৈনিক বাংলাদেশ টুডে পত্রিকার সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।

হাবিব সরোয়ার আজাদ একজন সাহসী সাংবাদিক হিসেবে সর্ব মহলে পরিচিত। তিনি সুনামগঞ্জের তাহেরপুর থানার ওসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দূর্ণিতির সংবাদ নিয়োমিত প্রকাশ করেছেন। একই সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্য, যুবলীগ নেতার বিভিন্ন অপকর্মের সংবাদ নিয়োমিত প্রকাশ্যে এনেছে।

২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে বাদাঘাট বাজারের হতদরিদ্র ক্ষুদে ব্যবসায়ী মানিক মিয়াকে শালিসে চোর সাব্যস্ত করে তার মুখে বিষ ঢেলে মাসুক মিয়ার নির্দেশে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ছিল। এ ঘটনায় মামলা হলেও পরে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। মাসুক মিয়া বাদাঘাট বাজারে বণিক সমিতির নামে চাঁদাবাজি, যাদুকাটা নদীতে চাদাবাজিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। মাসুক মিয়ার এই সব অপকর্মের বিষয়ই প্রকাশ্যে এনেছে সাংবাদিক হাবিব সরোয়ার আজাদ। এছাড়াও হাবিব সরোয়ার আজাদ দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক যুগান্তরসহ স্থানীয় একাধিক পত্রিকায় স্থানীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং তার আশির্বাদপুষ্টদেরসহ তাহিরপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে তাদের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ ও তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে সংবাদ পরিবেশন করে আসছিল।

যার ফলে তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ছবিযুক্ত পোষ্টার পোড়ানোর মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। এতেও হাবিব সরোয়ার আজাদ অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করায় ১৩ এপ্রিল সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে গিয়ে মারপিট করে ইয়াবাসহ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

পারিবারিক ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ১৩ এপ্রিল শুক্রবার রাতে বাদাঘাট বাজারের মেইন রোডে মানিকের ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের আর্শিবাদপুষ্ট তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন যুবলীগ আহবায়ক ও বাদাঘাট বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুক মিয়া ও তার সহযোগী পৈলনপুর গ্রামের ফারুক মিয়া, হযরত আলী, ইকবাল হোসেনসহ ১০/১২জন ধরে নিয়ে গিয়ে মাসুক মিয়ার বাড়িতে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।

এসময় স্থানীয় জনতা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে পুলিশ অদৃশ্য ইশারায় তালবাহানা করে সময় ক্ষেপন করে। পরে মাসুক মিয়া সুকৌশলে উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল চরগাও রহিছ মিয়ার বাড়ির বাঁশঝাড়ের পিছনের রাস্তার পার্শ্বে নিয়ে গিয়ে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।

এর আগে আজাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর ও বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সাইদুর রহমান, এএসআই পিযোষ দাসকে মাসুক মিয়াসহ তার লোকজন ধরে নিয়ে গেছে বলে জানানো হলেও তারা বিষয়টি আমলে না নিয়ে জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে আজাদকে বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পে আটক করে রাখে। পরে রাত ১২টায় তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নন্দন কান্তি ধর জানান, তাকে স্থানীয় লোকজন ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন জানান, ‘স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী মাসুক জনসম্মুখে সাংবাদিক আজাদকে বাজার থেকে ধরে নিয়ে তার বাড়িতে যান। মাসুক মিয়ার সাথে পূর্ব শক্রতা থাকায় সাংবাদিক আজাদকে পরে পুলিশে দেয়া হয়।’ আজাদ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত নন বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব। তিনি বলেন, ‘এ জাতীয় নেতিবাচক চর্চা এলাকার শান্তিশৃংখলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানান, এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা এর আগে উপজেলাবাসী দেখেনি। একজন সাংবদিক কে প্রকাশ্যে বাজার থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনায় এলাকার স্থানীয় সাধারণ মানুষ আতংকিত। তিনি বলেন, ঘটনার সময়ে স্থানীয় পুলিশ রহস্যজনক ভূমিকা পালন করেছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ট তদন্ত দাবি করেন।

তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নন্দন কান্তি ধর প্রথম বলেন, তার সঙ্গে যেহেতু ইয়াবা পাওয়া গেছে মামলা নেয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

পরবর্তীতে তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর বলেন, মাসুক ধরে দেয়নি। এলাকার মানুষ ধরে দিয়েছে। যেহেতু এর আগে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ইয়াবা বিক্রির অভিযোগ ছিলনা সেহেতু পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করছে। সাংবাদিক এখনো থানায় আমাদের হেফাজতে আছে।

এতে স্পষ্ট পুরো ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে তাহেরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর জড়িত। তিনি মামলা নেওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছিলেন। পরবর্তীতে যখন সাংবাদিকরা বিষয়টিকে সুনামগঞ্জের এসপিকে জানাল, তিনি তখন বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দিলেন সহকারি পুলিশ সুপার হাবিবুল্লাহ মজুমদারকে।

যখন সাংবাদিক হাবিব সারোয়ার আজাদের বাংলা নববর্ষ উৎযাপন করার কথা পরিবারকে নিয়ে। তখন তিনি থানা আজতে। তার পরিবারের সদস্যরা উৎকন্ঠা নিয়ে নতুন একটি বছর শুরু করল।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয়, স্থানীয় এমপির মদদ পুষ্ট সন্ত্রাসীরা হাবিব সারোয়ার আজাদকে শুধু নির্যাতন করে পুলিশে সোপর্দ করেই ক্ষান্ত হোননি। তারা বিভিন্ন সভা সমাবেশ করে তার ফাঁসি চাচ্ছেন!

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই পুরো ঘটনার পিছনে রয়েছে স্থানীয় এমপির মদদ পুষ্ট মাসুক মিয়া ও তাহেরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর।

যেদেশে একজন খ্যাতিবান সাংবাদিককে নির্যাতন করে পুলিশে দেওয়া যায়, সেদেশে সাধারণ মানুষ পুলিশ এবং এমন সন্ত্রাসীদের কাছে কতোটা অসহায় তা সহজেই অনুমেয়।

পুলিশে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের এখনই এদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। নয়তো দেশের মানুষের আস্থা পুলিশের উপর থেকে উঠে যাবে। সেই সাথে হাবিব সারোয়ার আজাদকে যারা নির্যাতন করেছে এবং যারা ইয়ারা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া এই ২৫০ পিস ইয়াবা কোথা থেকে এসেছে তাও অনুসন্ধান করে বের করতে হবে।

সর্বশেষ: হাবিব সারোয়ার আজাদকে পুলিশ অব্যাহত প্রতিবাদের মুখে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বর্তমানে তার উপর করা নির্মম নির্যাতনের চিকিৎসা নিচ্ছেন সিলেটের একটি হসপিটালে। সাংবাদিক হাবিব সারোয়ার আজাদের উপর নির্যাতন করা এবং ৩৫০ পিস ইয়াবা দাতা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

লেখক : ইউসুফ আহমেদ তুহিন
সম্পাদক ও প্রকাশক, সাপ্তাহিক নতুন বার্তা।



from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2HddaE6

April 19, 2018 at 02:00AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top