অাসাম, ৩০ মে- ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী হালনাগাদ করা নিয়ে অনেক মানুষের মধ্যে আশঙ্কা চলছিল। তার মধ্যেই সেদেশে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার জন্য যে বিল আনা হয়েছে, তাতে আশঙ্কা, সংশয় আরো বেড়েছে। এই বিল পাশ হলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু ধর্মীয় কারণে দেশ ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হবেন, তারাও ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী হবেন। কিন্তু আসামের জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো এই বিধানের বিরোধিতায় বিক্ষোভ শুরু করেছে। তাদের কথা- এমনিতেই অনুপ্রবেশের জেরে বহু অ-অসমীয়া সেরাজ্যে বাস করছেন। এখন নতুন নাগরিকত্ব আইনে যদি বাংলাদেশের হিন্দুরাও সেখানে চলে আসেন, তাহলে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন রাজ্যের মানুষই। সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে রোজই আসামের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ চলছে যার নেতৃত্ব দিচ্ছে আসামে আন্দোলন চালিয়েছিল যে ছাত্র সংগঠন অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা আসু, তারা এবং কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি। সমিতির প্রধান অখিল গগৈ বলছিলেন, এই বিল সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের বিরোধী। ভারতে নাগরিকত্ব দেওয়ার যে পদ্ধতি রয়েছে, তা থেকে সম্পূর্ণ সরে যাওয়ার প্রচেষ্টা হচ্ছে এই বিলের মাধ্যমে। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব কেন দেওয়া হবে! অসমীয়া জাতীয়তাবাদীরা বলছেন এই বিল পাশ হলে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাসহ গোটা উত্তরপূর্বাঞ্চলে জনবিন্যাস পাল্টে যাবে। আগেই আসাম আর উত্তরপূর্বাঞ্চলে অনুপ্রবেশ ঘটেছে ব্যাপক হারে, এরপর যদি বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা আসতে শুরু করে নাগরিকত্ব পেতে, তাহলে অসমীয়া মানুষরাই তো সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন, বলছিলেন অখিল গগৈ। সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলটি পার্লামেন্টে পেশ হওয়ার পরে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় সেটিকে পাঠানো হয়েছে যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে। কমিটির সদস্যরা আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে নানা সংগঠনের সঙ্গে। যদিও বিভিন্ন অসমীয়া সংগঠন বিলটির জন্য আসামে আর কেন্দ্রে বিজেপি-র সরকারকেই দোষ দিচ্ছে, তবে বিজেপি বলছে নতুন করে কাউকে দেশে আসতে দেওয়া হবে না। যেসব হিন্দু ইতিমধ্যেই ভারতে চলে এসেছেন অবিচার অনাচারের শিকার হয়ে, শুধু তাদেরই নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য বিবেচনা করা হবে। আসাম বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র মেহদী আলম বরা বলেন, এই বিল যদি পাশ হয়, তাহলে নতুন করে কাউকে ডেকে নিয়ে এসে তো নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না! যারা ইতিমধ্যেই সামাজিক বা ধর্মীয় কারণে ভারতে চলে এসেছেন বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে কিন্তু এখনও নাগরিকত্ব পাননি, এইরকম মানুষদেরই নাগরিকত্বের অধিকারের কথা বলা হয়েছে বিলে। তিনি মনে করিয়ে দেন এটা বিজেপির একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। আরও পড়ুন: আসামে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন ৫০ লাখ মুসলিম দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্ব ইস্যুতে কাজ করছে, এমন একটি সংগঠন নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির প্রধান উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ চৌধুরী বলছিলেন এটা বাংলাভাষী হিন্দুদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। বিলটার মধ্যে এমন কিছুই নেই যা দিয়ে বলা যায় হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। শুধুমাত্র বলা রয়েছে অন্য দেশ থেকে ধর্মীয় কারণে কেউ ভারতে এলে তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। কেউ আবেদন করলেও তাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে কিনা তা সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের ওপরে নির্ভর করবে, বলছিলেন মি. চৌধুরী। তিনি মনে করেন আসামে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে একটা বিভেদ সৃষ্টির জন্য এই বিল আনা হয়েছে। তথ্যসূত্র: বিবিসি আরএস/০৯:০০/ ৩০ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2LEmhQV
May 30, 2018 at 05:21PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন