তাসপিয়া হত্যায় নতুন মোড়, কে এই ফিরোজ…….?

সুরমা টাইমস ডেস্ক::       লাশ উদ্ধারের পর থেকে সানশাইন গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শেণির ছাত্রী তাসপিয়া ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। সোশ্যাল মিডিয়াসহ প্রায় সব মিডিয়াতেই এখন আলোচিত খবর তাসপিয়া-আদনানের কিশোর বয়সের প্রেম কাহিনীর করুণ পরিণতি। দিন যতই যাচ্ছে ততই আলোচনা বাড়ছে। তাসপিয়া হত্যায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ এখন ফিরোজ নামের এক স্বঘোষিত যুবলীগ নেতাকে খুঁজছেন।

পুলিশের তথ্য মতে, গত মঙ্গলবার (১লা মে) বিকেলে তাসপিয়া নিখোঁজের পর তার মায়ের ফোন পেয়ে আদনান তাদের বাসায় যায়। এ সময় তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন প্রথমে আদনানকে নিয়ে চায়না রেস্টুরেন্টে যান। সেখান থেকে আবারও বাসায় আসেন। সেখানে আদনানকে আটকে রাখেন তিনি।

খবর পেয়ে স্বঘোষিত যুবলীগ নেতা ফিরোজ ও যুবলীগ কর্মী ইকরাম তাসপিয়াদের বাসায় আসেন। এ সময় আদনানকে ছেড়ে দিতে সময় বেঁধে দেন তারা।

পরে দুই ঘণ্টার মধ্যে তাসপিয়াকে বাসায় ফেরত দেয়ার কথা বলে আদনানকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান তারা। এরপর রাতেই লাপাত্তা হয়ে যান তারা।

ওই রাত শেষে গত বুধবার সকালে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে নেভাল একাডেমির অদূরে ১৮ নম্বর ঘাট এলাকায় থেকে তাসপিয়ার নিথরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করলেও দুপুর ২টার সময় পরিচয় মিলে।

তাসপিয়ার লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদনে উঠে আসে এই কিশোরীর ওপর চালানো ভয়াবহ চিত্র। নিহত তাসপিয়ার পিঠ, বুক ও স্পর্শকাতর অঙ্গসহ সব স্থানেই দেখা গেছে ভয়াবহ নির্যাতনের ছাপ। গোলাকার মুখমণ্ডল থেঁতলানো। চোখ দুটোও যেন নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আর বুকের ওপর একাধিক আঁচড়ের দাগও দেখা গেছে। নিহতের হাতের নখগুলো ছিল নীলবর্ণ।

তাসপিয়ার মৃত্যুর পর আড়ালে হাঁটছেন ফিরোজ। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পাড়ে কঠিন পাথরের উপর পড়ে থাকা তাসপিয়ার নিথর দেহ উদ্ধারের পর থেকে তাকে আর খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। ইতোমধ্যে তাকে গ্রেফতারে বেশ কিছু স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৩রা মে) দুপুরে তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন কন্যা হত্যার অভিযোগে সুনির্দিষ্ট ছয়জনকে আসামি করে পতেঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

ওই মামলার ষষ্ঠ নম্বর আসামি ফিরোজ। প্রধান আসামি আদনান মির্জার বড় ভাই তিনি। ফিরোজের পরিচালিত ‘রিচকিডস’ নামের গ্যাং স্টারের (এডমিন) প্রধান আদনান। আর বাকি চার আসামি সেই গ্যাং স্টারের ক্যাডার।

পুলিশ জানায়, স্বঘোষিত যুবলীগ ক্যাডার ফিরোজ অস্ত্রসহ এক সময় র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছিলেন। ভারতে বন্দি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সহযোগী ছিলেন তিনি। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ২০১৩ সালের জুলাই মাসে অস্ত্রসহ দুবার আটক হন পুলিশের হাতে।

জেল থেকে বেরিয়ে ২০১৫ সাল থেকে ফিরোজ যুবলীগের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হন। সে সময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের ছবি ব্যবহার করে বিলবোর্ড টাঙিয়ে সমালোচনায় এসেছিলেন ফিরোজ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের চাঁদাবাজি ও খুনের অপারেশনে সক্রিয় ছিলেন ফিরোজ। এক সময় যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে সীমান্ত পাড়ি দিলেও সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো সাজ্জাদ বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ফিরোজের মাধ্যমে।

২০১৫ সালে চট্টগ্রামে নতুন রূপে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণে ফিরোজ গড়ে তুলেন ‘রিচ কিডস’ গ্যাংস্টার নামে ফেইসবুক ভিত্তিক এক কিশোর বাহিনী। আর ওই বাহিনীর এডমিনের দায়িত্বে ছিলেন তাসপিয়ার বয়ফ্রেন্ড আদনান।

গতকাল বৃহস্পতিবার তাসপিয়ার বাবার দায়েরকৃত মামলায় এই রিচ কিডস গ্যাংস্টারের চার সদস্যকেও আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র শওকত মিরাজ ও আসিফ মিজান, আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির ছাত্র ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম এবং স্বঘোষিত যুবলীগ নেতা ফিরোজের সহযোগী যুবলীগ কর্মী সোহায়েল প্রকাশ সোহেল।

ইংলিশ মিডিয়ামের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদর্শন তরুণীদের তথ্য-উপাত্ত বড় ভাইদের সরবরাহ করা, মোটরসাইকেলে করে ঘোরাঘুরি, তুচ্ছ ঘটনায় মারামারি, এলাকায় হিরোইজম প্রদর্শন করাই হলো এই গ্রুপের কাজ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি-কর্ণফুলী জোন) জাহেদুল ইসলাম বলেন, আমরা বেশ কিছু ইস্যুকে সামনে নিয়ে এগুচ্ছি। তার মধ্যে অটো চালক, আদনানের ‘রিচ কিডস’ গ্যাং ও কথিত ‘বড় ভাই’ নিয়ে কাজ চলছে। এছাড়াও আরো কিছু ইস্যু আছে যেগুলো এই মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। –পূর্বপশ্চিম



from Sylhet News | সুরমা টাইমস https://ift.tt/2HR43JO

May 04, 2018 at 11:45PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top