কলকাতা, ২১ মে- কাজ শেষ, এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় দিন গুনছে বাংলাদেশ ভবন। আগামী ২৫ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে চলেছে বাংলাদেশ ভবনএর। স্বাভাবিকভাবেই শান্তিনিকেতন জুড়ে এখন সাজ সাজ রব। সেইসঙ্গে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সফর ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। বিশ্বভারতীয় বিদ্যালয়ের আম্রকুঞ্জ, গৌরপ্রাঙ্গণ, উপাসনা গৃহসহ শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন চত্বরে পর্যটকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সূত্রে খবর, মঙ্গলবার থেকেই কার্যত বিশ্বভারতীর দখল চলে যাবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলির হাতে। নিরাপত্তার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশের একাধিক রাস্তায় যান চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। ইতিমধ্যেই মোদির নিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) এবং হাসিনার নিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থার তরফে দফায় দফায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন ও বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক করছেন কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের লক্ষ্যেই শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া জমি এবং বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ২৫ কোটি টাকা অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে এই ভবনটি। দ্বিতীয় তল বিশিষ্ট বাংলাদেশ ভবনটিতে ৪৫৩ আসনের বিশাল অডিটোরিয়াম, এছাড়াও মিউজিয়াম, ক্লাসরুম, গ্রন্থাগার, অনুষদ কক্ষ, সেমিনার হল, ক্যাফেটেরিয়াসহ থাকছে বিশাল আয়োজন। বাংলাদেশের শিলাইদহে থাকাকালীন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত কবিতা, গান ও বিভিন্ন মুহূর্তের ছবিসহ বাংলাদেশের ইতিহাস স্থান পাবে এখানে। ঠাঁই পাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের ইতিহাস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এটি। সুযোগ থাকবে গবেষণাধর্মী নানা কাজ করার ক্ষেত্রেও। ২৫ মে সকাল ৯টা নাগাদ কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছাবে হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশের বিশেষ বিমান বোয়িং ৭৩৭-৮০০। বিমানবন্দর থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে শান্তিনিকেতনে পৌঁছবেন হাসিনা। শান্তিনিকেতনে পৌঁছে প্রথমে রবীন্দ্রভবনে কবি গুরুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। এরপর চলে যাবেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ বিশিষ্টরা। সেখানে বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। ওই অনুষ্ঠানের পরই চলে আসবেন পাশেই বাংলাদেশ ভবনএর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। মোদিকে সাথে নিয়েই ওই ভবনের উদ্বোধন করবেন হাসিনা। অনুষ্ঠান শেষে মোদির সাথে মধ্যাহ্নভোজে উপস্থিত থাকবেন হাসিনা। এরপর বিকালেই হাসিনা ও মোদি দুইজনেই শান্তিনিকেতন ত্যাগ করবেন। মোদি যাবেন দিল্লি অন্যদিকে বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ কলকাতায় পৌঁছবেন হাসিনা। কলকাতায় একটি ইফতার পার্টিতে অংশ নেবেন হাসিনা। রাতে কলকাতায় রাত্রিবাস করবেন তিনি। পরদিন ২৬ মে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সফরে যাবেন শেখ হাসিনা। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তাকে সাম্মানিক ডিলিট উপাধি দেওয়া হবে। ওইদিন সকাল ৯.৩০ মিনিটে দুর্গাপুরের কাছে অন্ডালের কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে নামবে হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশের ওই বিশেষ বিমান। এরপর সেখান থেকে সড়ক পথে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন হাসিনা। বিকালে তিনি কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু মিউজিয়াম পরিদর্শনে যাবেন হাসিনা। এরপর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শনে যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। রাত ৮.৩০ মিনিট নাগাদ কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবেন শেখ হাসিনা। এদিকে হাসিনাকে স্বাগত জানাতে তৈরি দুর্গাপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কারণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্যেই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে নামতে চলেছে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমান। তাই বিমানবন্দরের মধ্যেই হাসিনার ছবিসহ আকাধিক বড় মাপের ব্যানার লাগানো হয়েছে। বর্তমানে এই বিমানবন্দর থেকে দিনে একটি বিমান চলাচল করে-এয়ার ইন্ডিয়ার সেই বিমানটি দুর্গাপুর থেকে সরাসরি দিল্লিতে যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিমানের স্বাদ পায়নি এই বিমানবন্দর। স্বাভাবিকভাবেই হাসিনার আগমনের অপেক্ষায় দিন গুনছে অন্ডালের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যাবেন কি না তা নিয়ে এখনও অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সহিংসতাকে কেন্দ্র করে মোদি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেজন্য মোদির মুখোমুখি হতে চান না মমতা। যদি তাই হয়, সেক্ষেত্রে ২৫ মে সন্ধ্যায় কলকাতায় যেখানে শেখ হাসিনা রাত্রিবাস করবেন সেখানে কিংবা পরদিন ২৬ বিকালে কলকাতার নেতাজী ভবন বা জোড়াসাঁকোতে হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন আর/১০:১৪/২১ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2s03eIK
May 22, 2018 at 04:48AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top