নারায়ণগঞ্জ, ০৫ মে- স্বামী আমিনুল হককে অভিবাসন পুলিশ নিউজার্সির আটক কেন্দ্রে আটকে রেখে জোর করে দেশে ফেরত পাঠায়। এর সপ্তাহ দুয়েক পরেই তিন সন্তান নিয়ে দেশে ফিরে যান নিউজার্সির এলিজাবেথ এলাকার বাসিন্দা রোজিনা আক্তার। রোজিনার কাছের লোকজনের কাছ থেকে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে আবার জীবন শুরু করেছেন, নতুন করে স্বপ্ন বাঁধতে শুরু করেছেন রোজিনা, আমিনুল আর তাঁদের তিন সন্তান, যাদের একজন মার্কিন নাগরিক। একজন অভিবাসন কর্মীকে লেখা পত্রে এই দম্পতির বড় মেয়ে ২০ বছরের ইভানা হক একটি হৃদয়বিদারক কথা জানিয়েছেন, আমরা ওখানে আমাদের সবকিছুর একটি করে অংশ রেখে এসেছি। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব লএর অধীনে একটি গবেষণা সংস্থা মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক নর্থ জার্সি ডটকম নামের অনলাইন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এমন ৯ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বিতাড়নের তালিকায় আছেন। তাঁরা এরই মধ্যে আদালতে হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত। এসব মানুষ এখন স্বেচ্ছায় দেশে চলে যাচ্ছেন বলে গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এবং দেশে ফেরত যাওয়া মানুষের মধ্যে মেক্সিকানদের সংখ্যাই বেশি। আইসের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরে ১ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশ থেকে ৫৬ হাজার ৭১০ জনকে আইস দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এর ৬৬০ জন গেছেন নিউ জার্সির নিউইয়ার্ক থেকে। বাংলাদেশি আমিনুল ইসলাম ছিলেন তাঁদের একজন। এমন আমিনুলরা যখন আইসের বিতাড়নের শিকার, তখন তাঁদের পরিবার এই দেশে থেকে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে নেওয়ার সংকল্প থেকে ছিটকে পড়ছে। ফিরছেন আপন নীড়ে, যদিও তাঁদের অনেকেই জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক। অভিবাসন অধিকারকর্মী কাজী ফৌজিয়া বলেন, রোজিনা আক্তারের দেশে ফেরত যাওয়া ঠেকাতে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি দেশে ফেরত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিতান্তই আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তা থেকে। এমনকি যাওয়ার আগে তিনি আমাদের জানিয়েও যাননি। জানালে হয়তো আমরা বাধা দিতাম, সে কারণেই নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছেন। কেননা, তিনি ভয় পাচ্ছিলেন, তাঁকেও হয়তো জেলখানায় বন্দী রেখে বাধ্যতামূলক দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। ১৪টি বছর ধরে আমিনুল হক ও রোজিনা ইসলাম আমেরিকার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। এখানে তাঁদের একটি সন্তান জন্ম নিয়েছে। মেয়েরা আমেরিকার স্কুলে লেখাপড়া শিখেছে, বাংলা বলা প্রায় ভুলে গেছে। এখন তাদের আবার মিশতে হবে নতুন একটি সংস্কৃতিতে। নতুন একটি জায়গায় জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েছে তারা নারায়ণগঞ্জে। মুদিদোকানে কাজ করা আমিনুল আর রোজিনার কোনো সঞ্চয় আছে কি না জানা যায়নি। তবে আমিনুলকে দেশে ফেরত পাঠানোর পর ক্রন্দনরত রোজিনা নিজেকে গুটিয়ে নেন সবকিছু থেকে। চাকরি থেকে ইস্তফা দেন, বাড়ির সবকিছু গোছাতে থাকেন। কেননা, ফেব্রুয়ারিতে আইস দপ্তরে হাজির হয়ে শুনানির দিন বিচারক তাঁকে ১৫ এপ্রিল আবার পাসপোর্ট নিয়ে হাজির হতে বলেছিলেন। রোজিনা ভয় পেয়েছিলেন অনেক, আবার হয়তো তাঁকে আটক করে নিয়ে যাবে অভিবাসন পুলিশ। তাঁর মেয়েদের কে দেখবে? তাই তিনি ফেব্রুয়ারিতেই দেশে ফেরত গেছেন স্বামী আমিনুল হকের কাছে। পেছনে পড়ে আছে ১৪ বছরের আমেরিকান জীবনসংগ্রামের আর সন্তানদের নিয়ে স্বপ্নের কথা। রোজিনার আইনজীবী অস্কার বারবারা নিউ জার্সির একটি জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁদের ফিরে আনার ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তবে সেটা সময়সাপেক্ষ। এর মধ্যে দরিদ্র রোজিনা আর আমিনুলের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে কেউ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিলে তিনি সহায়তা করতে রাজি আছেন। এক সাক্ষাৎকারে বারবারা জানিয়েছেন, রোজিনা সন্তানদের সুশিক্ষিত করতে স্বামী ছাড়াই একলা সংগ্রামের চিন্তা করতে পারতেন, কিন্তু অভিবাসন পুলিশের ব্যবহার পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগে কাগজপত্রহীন কারও দেশে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ থাকলেও যদি অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ না থাকত, তাঁকে তাঁর সময়মতো দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হতো। এখন হাজিরার দিনেই বাছ-বিচার না করে বিমানে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে রোজিনারা ও তাঁদের আমেরিকায় জন্ম নেওয়া সন্তানেরা দেশটাতে নিরাপদ বোধ করছেন না। তথ্যসূত্র: প্রথম আলো আরএস/০৯:০০/ ৫ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2HY4Ath
May 06, 2018 at 12:15AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন