কলকাতা, ২১ মে- দাম্পত্যে সমস্যার জন্য এতটা নৃশংসতা! স্ত্রী-কেই খুন করে ফেলতে হল স্বামীকে! কলকাতার কৈখালিতে খুনের রহস্য কিনারায় এখন এমন প্রশ্নই সামনে আসছে। দাম্পত্যে সমস্যা থাকতেই পারে কিন্তু নৃশংসতার এমন কাহিনি সে ভাবে কিন্তু প্রকাশ্যে আসেনি। কোলে বাচ্চা আর তার সামনেই গৃহবধূকে খুন হয়ে যেতে হয়। সোমবার কৈখালি হত্যাকাণ্ডের মিমাংসা হয়ে গিয়েছে বলে সাংবাদিক বৈঠক করে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। আর সেখানেই পুরো ঘটনা তারা সামনে নিয়ে আসে। বিধানগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি হেডকোয়ার্টার অমিত পি জাভালগি জানান, সুপারি কিলার দিয়ে কৈখালির বাসিন্দা সিভিক ভলিন্টিয়ার শম্পা দাসকে খুন করা হয়েছে। আর এই খুনের ষড়যন্ত্র করেছিল শম্পার স্বামী সুপ্রতীম দাস, শাশুড়ি মীরা দাস এবং রশিদ মোল্লা নামে একজন। পুলিশ জানিয়েছে, শম্পাকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ৬ মাস আগে। সঠিক সময় ও সুযোগের খোঁজে ছিল আঁততায়ীরা। খুনের জন্য রশিদ মোল্লা তার দেশের বাড়ি মিনাখাঁর একটি গ্রাম থেকে ২ দাগী অপরাধীকে নিয়ে এসেছিল। রশিদ মোল্লা পুরসভার কলের প্লাম্বিং-এর কাজ করত। এই সুবাদেই ইঞ্জিনিয়ার সুপ্রতীমের সঙ্গে তার পরিচয়। সুপ্রতীম শীরদাঁড়ার গুরুতর ব্যাথায় আক্রান্ত ছিল। রশিদ মাঝে মাঝে ম্য়াসাজ দিতে কৈখালিতে সুপ্রতীমের ঘরে আসত। এখানেই রশিদের কাছে শম্পাকে খুনের পরিকল্পনা ফাঁস করে সুপ্রতীম। ঠিক হয় খুনের বিনিময়ে রশিদ ও তার দল ৬০,০০০ টাকা পাবে। পুলিশের দাবি, পরিকল্পনা মতো রশিদ মিনাখাঁ থেকে দুই দাগী অপরাধীকে ভাড়া করে। সুপ্রতীম নাকি জানিয়েছে, সময়ে সময়েই শম্পা অত্য়াচার করত। সম্পত্তি নিয়ে শাশুড়ি ও স্বামীর সঙ্গে গণ্ডগোল লেগে যেত। ৫ বছর আগে ইঞ্জিনিয়ার সুপ্রতীমের সঙ্গে কেষ্টপুরের শম্পার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু, শীরদাঁড়ার গুরুতর ব্যাথায় আক্রান্ত শম্পার হাতে চলে এসেছিল সংসারের নিয়ন্ত্রণ। তারমধ্যে সিভিক ভলিন্টিয়ারের কাজ করে শম্পা স্বামী ও শাশুড়িকে নিজের মুঠোয় রাখতে চাইতেন বলে অভিযোগ। যদিও, শম্পার খুনের দিনই তাঁর দাদা অভিযোগ করেছিলেন যে স্বামী সুপ্রতীম ও তাঁর শাশুড়ি মীরা দাস সমানে মানসিক অত্যাচার চালাত। এমনকী মারধরও করা হত। শাশুড়ি মীরা দাস সম্পত্তি বেচে দিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ারও হুমকি দিতেন বলে অভিযোগ করেছিলেন শম্পার দাদা। ১৮ মে রাতে শম্পা যখন বাড়ি ফেরে তখন শাশুড়ি মীরা দাস, স্বামী সুপ্রতীম পরিচারিকা মায়া সর্দার সকলেই ছিলেন। আর সেই সঙ্গে বাড়িতে আত্মগোপন করেছিল রশিদ মোল্লা এবং শম্পাকে খুনের জন্য ভাড়া করা দুই আঁততায়ী। পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িতে ঢুকতেই ছেলে খাবারের জন্য বায়না করেছিল। তিন বছরের ছেলে অনুরণনকে কোলে করে খাবার খাওয়াতে ঘরে ঢুকেছিলেন শম্পা। আর সেই সময়ই তাঁর উপরে হামলা করে আঁততায়ীরা। প্রথমে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। আর এই সময়ই নাতি অনুরণনকে নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যান মীরা দাস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পরিচারিকা মায়া সর্দার। শম্পার মাথা ও মুখ থেঁতলে দেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুখের উপর সোফার ভারী গদি ফেলে শ্বাসরোধ করা হয়েছিল। পরিকল্পনা মতো শম্পার স্বামীকে রশিদ ও তার দুই সুপারি কিলার চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে শরীরে ধারাল অস্ত্রের দিয়ে চিড়ে দেয়। সুপ্রতীম-ই আলমারি থেকে জিনিস-পত্র বের করে নিয়ে ছোটখাটো সোনার গয়না ও নগদ টাকা নিয়ে নিতে রশিদদের নির্দেশ দিয়েছিল। খুনের জন্য ৫৯,০০০ টাকা দিয়েছিল সুপ্রতীম। বাকি হাজার টাকা আলমারিতে থাকা ছোট-খাটো সোনার গয়না থেকে নিয়ে নিতে বলেছিল সে। পুলিশের দাবি, প্রথম থেকেই সুপ্রতীমের বয়ানের অসঙ্গতি ও শরীরের ক্ষত দেখে সন্দেহ হয়েছিল। আর এই পথেই তদন্তে একের পর এক সূত্র তাঁদের হাতে আসে। আর সিভিক ভলিন্টিয়ার শম্পা দাসের খুনের রহস্য ভেদ হয়। এই ঘটনায় পরিচারিকার মায়া সর্দারের কী ভূমিকা ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্র: ওয়ানইন্ডিয়া আর/১০:১৪/২১ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2GET4ll
May 22, 2018 at 04:17AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top