জীবনের প্রতি দারুণ বিষাদ নিয়েই চলে গেলেন অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ। তিনি গেলেন দুর্দান্ত শোক নামিয়ে। গতকাল মঙ্গলবার হার্ট অ্যাটাক করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তাজিন। মঙ্গলবার সকালে তার হার্ট অ্যাটাক করলে দ্রুত তাকে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয় তাকে। অবশেষে সব বাঁধন ছিন্ন করে বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তাজিন আহমেদ। তার মৃত্যুতে শোবিজে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সহকর্মীরা ব্যাথাতুর হৃদয়ে তার স্মৃতিচারণ করছেন। তাজিনকে নিয়ে বলছেন নানা রঙের কথা। জানা গেল জীবনের শেষ দিনগুলো খুব কষ্ট করে গেলেন তাজিন। অর্থকষ্ট, মানসিক প্রশান্তির অভাব- ভেতরে ভেতরে মেরে ফেলেছিলো তাজিনের উচ্ছ্বাস। সবকিছু ছাড়িয়ে আজ তিনি ওপারে। তাকে আর কোনো কিছুতেই কাঁদাবে না। সহকর্মীরা বলছেন, তাজিন আহমেদ ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষ। সহজেই মানুষকে কাছে টানতে পারতেন। মানুষের কাছ থেকে আদায় করে নিতে পারতেন ভালোবাসা ও সম্মান। তাজিন আহমেদের জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই নোয়াখালী জেলায়। তার বাবার নাম মরহুম কামাল উদ্দিন আহমেদ (দুলু) আর মা দিলারা জলি। চার বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। বেড়ে উঠেছেন পাবনা জেলায়, নানা বাড়িতে। ১৯৯২ সালে ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। শোবিজ ও লেখালেখির প্রতি আগ্রহ ছিলো তার দারুণ। সেই সুবাদে নামি লিখিয়েছিলেন অভিনয়, উপস্থাপনা ও সাংবাদিকতায়। ১৯৯১ সালে বিটিভিতে চেতনা নামের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপস্থাপনা শুরু করেন তাজিন আহমেদ। এনটিভিতে প্রচারিত টিফিনের ফাঁকে অনুষ্ঠানে টানা ১০ বছর উপস্থাপনা করেন তিনি। একাত্তর টিভিতে একাত্তরের সকাল অনুষ্ঠানেও হাজির হয়েছেন। তবে শোবিজ যাত্রায় তাজিন আহমেদের অভিনয়ের শুরুটা হয় টিভি নাটক দিয়ে। দিলারা ডলি রচিত ও শেখ নিয়ামত আলী পরিচালিত শেষ দেখা শেষ নয় নাটকে প্রথম অভিনয় কনে তিনি। নাটকটি ১৯৯৬ সালে বিটিভিতে প্রচার হয়েছিল। বিটিভিতে তার অভিনীত নাটক আঁধারে ধবল দৃপ্তি বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত নাটক নীলচুড়িতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন তাজিন আহমেদ। অভিনয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে ১৯৯৭ সালে মঞ্চ নাটকে যোগ দেন তাজিন। থিয়েটার আরামবাগ দিয়ে মঞ্চ যাত্রা হয় তার। এরপর নাট্যজন থিয়েটারের হয়ে কিছু নাটকে অভিনয় করেন। পরে আরণ্যক নাট্যদলের ময়ূর সিংহাসন নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। এটি তার অভিনীত শেষ মঞ্চনাটক ছিলো। আর টিভিতে তার অভিনীত শেষ ধারাবাহিক নাটক ছিলো বিদেশি পাড়া। লেখালেখিতেও দক্ষ ছিলেন তাজিন আহমেদ। পরিচালনাতেও নাম লিখিয়েছিলেন। তার লেখা ও পরিচালনায় তৈরি হয় যাতক ও যোগফল নামে দুটি নাটক। তার লেখা উল্লেখযোগ্য নাটক হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম, অনুর একদিন, এক আকাশের তারা, হুম, সম্পর্ক ইত্যাদি। ২০০২ সালে তিনি জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডে যোগ দেন। গেল বছরে ববি হাজ্জাজের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) দলে যোগ দিয়েছিলেন তাজিন। পেয়েছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সম্পাদক (সাংস্কৃতিক) পদ। ভালোবাসার মানুষ ছিলেন, ভালোবাসতে জানতেন তিনি। সেই ভালোবাসার আহ্বানে সংসার পেতেছিলেন দুইবার। তবে কোনো সন্তানাদি ছিলো না তাজিন আহমেদের। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অস্তমিত হয়ে গেল একটি সাদামাটা জীবনের। কিন্তু রয়ে গেল অভিনেত্রী তাজিন নামের রঙিন কিছু স্মৃতি ও গল্প। তারা চিরকাল আলো দিয়ে যাবে। সূত্র: জাগোনিউজ২৪ আর/১৭:১৪/২৩ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2LoadDw
May 24, 2018 at 12:27AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন